In this Article
আপনার শিশুর পক্ষে চোখের যে কোনও অস্বস্তিকে বোঝানো চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, যার ফলে আপনিও মুশকিলে পড়েন। সুতরাং, ফোলা চোখের পাতা, লালভাব, স্রাব বা জল পড়ার লক্ষণগুলির উপর নিবিড় নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করলে আপনার বাচ্চাটিকে আরও অস্বস্তি বা কোনও লুকানো জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করবে।
শিশুর চোখের ফোলাভাবের কারণ কী?
কখনও কখনও যখন আপনি আপনার বাচ্চার চোখ দুটোকে ফোলা দেখেন, তখন এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই কারণ এটি ঠিক হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে, ব্যবস্থা না নিলে বিষয়টি আরও খারাপ হতে পারে। চোখের ফোলাভাব ঘটায় এমন কারণগুলির একটি তালিকা আমরা তৈরি করেছি।
-
এলার্জি: যদি আপনার বাচ্চা সিগারেটের ধোঁয়া, পরাগ রেণু, পোষা প্রাণীর লোম এবং ধুলায় থাকা কীটের মতো উত্তেজকের সংস্পর্শে আসে, তবে এগুলি থেকে তাদের অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি সাধারণত তাদের চোখের পাতার ফোলাভাব এবং লালভাবের মতো লক্ষণীয় লক্ষণগুলি সৃষ্টি করে। কখনও কখনও একটি শিশু সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে; অতএব সে সম্প্রতি কিসের স্পর্শে এসেছিল তা জানা গুরুত্বপূর্ণ।
-
দাঁত বেরোনো: যেহেতু চোখ এবং দাঁতের স্নায়ুগুলি একে অপরের সাথে সংযুক্ত, তাই দাঁত বেরোলে চোখ ফুলে যায়। দাঁত বেরোনোর পরে চোখের নিচে কোনও ফোলাভাব আছে কিনা তা নিশ্চিত হয়ে নিন।
-
মশার কামড়: মশার কামড় চোখ ফুলিয়ে তুলতে পারে। এই ধরণের ফোলা বেদনাদায়ক নয়, কেবল চুলকানি হয় এবং একটি শিশুর ক্ষেত্রে 10 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ফোলাটি সাধারণত গোলাপী বা লালচে বর্ণ ধারণ করে।
-
আঘাত: চোখের কাছাকাছি মাথার অংশে কোনও শারীরিক আঘাত লাগলে, ফোলা চোখ, প্রদাহ, লালচে ভাব বা আরও অনেক কিছু ঘটাতে পারে। সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চারা সারাক্ষণ চলাফেরা করার কারণে আহত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকে। মাঝে মাঝে তারা চোখ ফোলা অবস্থাতেও কোনও ব্যথা অনুভব করে না।
-
স্টাই না আঞ্জনি এবং চ্যালাজিয়ন: একটি স্টাই হ‘ল একটি কোমল লাল ডেলা যা চোখের পাতার প্রান্তের কাছাকাছি বা নিচে ঘটতে পারে যার ফলে ফোলাভাব ঘটে। গবেষণা অনুসারে, যদি চোখের লোমের গ্রন্থিটি ফুলে যায় তাহলে স্টাই হয়। বেশিরভাগ স্টাইগুলি বেদনাদায়ক, তবে এগুলি কিছু দিনের মধ্যে নিজে নিজেই চলে যায়। অন্যদিকে, চ্যালাজিয়ন চোখের পাতার কাছে ঘটে যদি কোনও তেল উৎপাদনকারী গ্রন্থি ফুলে যায় এবং গ্রন্থির মুখটি তেল জমে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। চ্যালাজিয়নের ফোলা সাধারণত কোনও স্টাইয়ের চেয়ে বড় হয়।
-
ব্লিফেরাইটিস: আমাদের চোখের পাতাতে একটি তেলগ্রন্থি থাকে যা কখনও কখনও অবরুদ্ধ হয়ে যায় বা ফুলে যায়। এটি ব্লিফেরাইটিসের কারণ হতে পারে যা সকালে (রাতের ঘুমের পরে) সর্বাধিক স্পষ্ট হতে পারে। এর লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চোখের লোমের উপর কঠিন স্তর সৃষ্টি হওয়া, ফোলা চোখের পাতা, চোখের পাতার কোমলতা এবং চোখের এমন একটি অনুভূতি যার ফলে আপনার শিশু ক্রমাগত এটিকে ঘষতে চায়।
-
নবজাতকের কনজাঙ্কটিভাইটিস: কখনও কখনও, একটি শিশুর জন্মের সময় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে যা থেকে নবজাতক কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে। এ জাতীয় অবস্থার সর্বাধিক সাধারণ কারণ অল গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া এবং হার্পিস। এই সমস্যাটির লক্ষণগুলি হ‘ল লাল ফোলা চোখ এবং অতিরিক্ত স্রাব।
শিশুদের ফোলা চোখের সহজ প্রতিকার
অনেকগুলি কারণ ফোলা চোখ নিয়ে আসতে পারে যার মধ্যে রয়েছে ধূলোর কীট, পরাগ এবং দুধ। কীভাবে ফোলা চোখের নিরাময় করতে হবে তা বোঝার জন্য আপনাকে এখানে কয়েকটি প্রতিকার দেওয়া হয়েছে।
-
শীতল কম্প্রেস: ফোলা চোখের একটি সহজ প্রতিকার হ‘ল ঠান্ডা কম্প্রেস দেওয়া। লালভাব এবং ফোলাভাব কমাতে কয়েক মিনিটের জন্য এটি আপনার সন্তানের চোখে লাগান।
-
বুকের দুধের একটি ড্রপ: চোখের নীচে ফোলাভাব মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে কমে যেতে পারে কারণ এটিতে অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেকোনো জ্বালা, ফোলাভাব বা চুলকানি নিরাময়ের জন্য আপনি আপনার শিশুর চোখের উপর কয়েক ফোঁটা ঢালতে পারেন।
-
চোখ পরিষ্কার রাখুন: আপনার শিশুর ফোলা চোখ এবং কোনও স্রাব থেকে রক্ষা পেতে আপনাকে অবশ্যই চোখের অঞ্চলটি একটি পরিষ্কার ভেজা কাপড় এবং উষ্ণ জল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যদি আপনার শিশুর চোখ সংক্রামিত হয়, তবে এটি একটি পরিষ্কার, শীতল কাপড় দিয়ে মুছে দিলে সহায়তা করবে। আপনার বাচ্চার চুল প্রতিদিন ধুয়ে ফেলার কথা মাথায় রাখুন, কারণ এতে পরাগ বা পোষা প্রাণীর লোম থাকতে পারে যা চোখের জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।
-
বিছানা সপ্তাহে একবার ধুয়ে ফেলুন: আপনার বাচ্চাকে অ্যালার্জেনজনিত ফোলা চোখ থেকে রক্ষা করতে আপনার বাচ্চার বিছানা গরম জল দিয়ে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ধুয়ে ফেলা আবশ্যক। হাইপোঅ্যালার্জেনিক এবং হালকা ডিটারজেন্টগুলি ব্যবহার করা উচিত। সর্বদা নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশুর নার্সারি কার্পেটটিও বদল করা হচ্ছে।
আপনার ডাক্তারকে কখন ডাকবেন
একটি পরিচিত কারণে হালকা ফোলাভাব বিপজ্জনক নয় এবং এটি বাড়িতে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপনার শিশুর সমস্যাটির যথাযথভাবে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। অবিলম্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন যদি:
1. গুরুতর ফোলাভাব
যদি আপনার বাচ্চা এক বা উভয় চোখে তীব্র ফোলাভাব অনুভব করে, যা কমে না, তবে কোনও ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন, বিশেষত যদি আক্রান্ত চোখ সম্পূর্ণ বা প্রায় সময় বন্ধ থাকে।
2. জ্বর
জ্বর সহ চোখের ফোলাভাব একটি সংক্রমণের ইঙ্গিত দেয় যা অবিলম্বে চিকিৎসা করা উচিত।
3. অজানা কারণ
যদি আপনার শিশু কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী চোখের ফোলা অনুভব করে, তবে কারণ নির্ধারণ করতে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারেন এমন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা ভাল।
4. অত্যধিক লালচেভাব
চোখের পলক যদি লাল এবং ফোলা হয়, অবিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা পরেও না কমে, তবে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।
5. ব্যথা এবং কোমলতা
যদি আক্রান্ত স্থানটি আপনার সন্তানের জন্য বেদনাদায়ক এবং কোমল হয় তবে অবশ্যই এমন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না, যিনি উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে অবিলম্বে ত্রাণ সরবরাহ করতে সহায়তা করতে পারেন।
এটি জরুরি যে আপনি সজাগ থাকুন এবং লক্ষণগুলির প্রতি লক্ষ্য রাখুন কারণ সমস্যাটি গুরুতর হতে পারে। এটির জন্য অবিলম্বে চিকিৎসার সহায়তা প্রয়োজন কারণ ফোলা চোখের সংক্রমণের ফলে শাঁ শাঁ করে শব্দ, বমি, গিলতে সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এগুলি দীর্ঘস্থায়ী অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াগুলির লক্ষণ এবং এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই অবিলম্বে চিকিৎসার সাহায্যের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
একবার আপনি নির্দিষ্ট পদার্থগুলি সম্পর্কে সচেতন হলে যেগুলি ফোলা চোখের কারণ হয়, সমস্যাটি পরিচালনা করা কম চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।