আপনার 10 সপ্তাহ বয়সী শিশু—বিকাশ,মাইলস্টোনগুলি এবং যত্ন

আপনার 10 সপ্তাহ বয়সী শিশু—বিকাশ,মাইলস্টোনগুলি এবং যত্ন

যখন আপনার সন্তান জন্মলাভ করেছিল তখনকার সঙ্গে এখনকার 10 সপ্তাহ বয়সের আপনার বাচ্চার তুলনা করতে গেলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন।অধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন ক্ষমতার অধিকারী,জোরে আওয়াজ করতে পারা আর বাঁধনহীন কৌতুহলী আপনার 10 সপ্তাহের অফুরন্ত শক্তির উৎসটি ব্যস্ত থাকে নানা ধরণের পরীক্ষা নিরীক্ষাতে এই সবকিছুর সমন্বয়ে সে গড়ে ওঠে এক ফুটফুটে,আদুরে ও সবচেয়ে আরাধ্য শিশু রূপে।

10 সপ্তাহ বয়সী শিশুর বিকাশ

10 সপ্তাহ বয়সী আপনার সন্তানের ওজন সন্তোষজনক ভাবেই বেড়েছে আপনি তার জন্য নতুন জামা কাপড় কিনতে পারেন আগের গুলোর থেকে বড় মাপের।

আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে বর্ধিত জাগ্রতদশার অবসান ঘটিয়ে আপনার ভালবাসার মানিকটি তুলনামূলক ভাবে দীর্ঘ সময় ধরে দিবানিদ্রা বা গভীর ঘুমে আছন্ন থাকে।আপনাকে খানিক্ষণ অব্যহতি দিয়ে সে একটানা প্রায় 4-5 ঘন্টা ঘুমায়যেহেতু তারা বেশ কিছুটা সময় বিশ্রাম পেয়ে যায় তাই তাদের উপুড় হয়ে শোবার সময়টা বাড়িয়ে দিন আপনার তত্ত্বাবধানে,এটার ফলে তাদের বিকাশ এবং শরীরের উর্দ্ধাংশ শক্তিশালী হয়। যদি সে বিষণ্ণ বোধ করে তাহলে আপনি নিচে শুয়ে পড়ুন আর ওর মাথার সমান উচ্চতায় আপনার মাথাটি নিয়ে যান। এটা তাকে আপনার আরো কাছাকাছি আনবার জন্য একটা চিত্তাকর্ষক পদ্ধতি হবে।এই সময় যখন তারা নিজের দেহকে ওপরে তোলার জন্য খুব চেষ্টা করবে তখন তারা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বে এবং বিছানাতে মুখ নামিয়ে এনে চেষ্টার ইতি টানবে। আপনি তাকে ঘুরে গিয়ে চিত হয়ে শুতে সাহায্য করবেন।

দশ সপ্তাহ বয়সী শিশুর মাইল স্টোনগুলি

যখন সে পেটের উপর ভড় দিয়ে উপুর হতে চেষ্টা করবে তখন আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে তার বাহু এবং বুকের মাংস পেশীর বৃদ্ধির ব্যাপারে।যখন আপনি দেখবেন যে আপনার বাচ্চাটি তার মাথাটাকে শক্ত করে ধরে রাখতে পারছে তখন আপনি তার পা দুটোকে আলতো করে ঠেলে দেবেন যাতে সে হামাগুড়ি দিতে চেষ্টা করে।তারা হয়ত এই মূহূর্তে হামাগুড়ি দিতে পারবে না কিন্তু আলতো ধাক্কাটা অবচেতনে তাদের মনে করিয়ে দেবে কীভাবে হামা দিতে হয়।কয়েক মিনিট ধরে এই ব্যায়ামটা মাঝে মাঝে করে সারাদিনে মোট আধ ঘণ্টার মত অভ্যাস করলে ভাল হবে।

শরীরের উর্দ্ধাংশের সাথে সাথে তাদের পা শক্তিশালী হচ্ছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।তারা যেহেতু বেশীরভাগ সময়টা তাদের পিঠের ওপর বা উপুড় হয়ে পেটের ওপর ভড় দিয়ে শুয়ে থাকে তাই তাদের পা এর ওপর শরীরের ওজন পরে না। 10 সপ্তাহ বয়সের কাছাকাছি সময়ে তাদের পাগুলো মোটামুটি শক্তীশালী হয়ে যায়। আপনি আপনার সোনাটিকে আস্তে আস্তে ধরে তুলে দেখুন সে তার পা এর ওপর কিছুটা ভড় দিতে পারছে কিনা।এটা তাকে উত্তেজিত করে,এইসময়ে সে তার পা দিয়ে বিছানাতে আঘাত করতে থাকে।যখন সে ফুরফুরে মেজাজে থাকবে তখন আপনি এই জিনিসটি করাবেন কারণ এটা ছোট্টটার কাছে খুবই পরিশ্রমসাধ্য।

খাওয়ানো

আপনার বাচ্চার বাড়ন্ত ওজনের এবং ক্ষিদে বৃদ্ধির ফলে আপনি দোলাচলে পরে যাবেন তাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন না কি বোতলে দুধ খাওয়াবেন যখন আপনার বুকের দুধের পরিমাণ যথেষ্ট নয়। অনেকটা সময় চলে যায় এটা বুঝতে যে বাচ্চাটি পেট ভরে এবং সন্তোষজনক ভাবে খেয়েছে কিনা।আপনি এবার আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে পারেন,যদি আপনি যেকোনো স্থানে যেকোনো জায়গায় আপনার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো অভ্যাস করে ফেলেন।অনেক মায়েদের পক্ষে এটা ভয়ের ব্যাপার হলেও আপনাকে এর থেকে বেড়িয়ে আসার মানসিকতা রাখতে হবে যদি আপনি আবার আগের মত জীবন যাত্রায় ফিরতে চান।সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল যে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে ভাল ভাবে খাওয়ানোর ব্যপারে এবং সঠিক অবস্থান নির্বাচন সম্বন্ধে এবং দ্রুত খাওয়ানোর বিষয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না।যদি একবারে না হয় তবুও চেষ্টা করুন তাতে আপনার এবং আপনার বাচ্চার দুজনেরই উপকার হবে।

ঘুমানো

10 সপ্তাহ বয়সের আপনার বাচ্চার ঘুমের প্যাটার্নটির মোটামুটী ভবিষ্যৎবাণীর আওতায় এসে পড়েছে।আপনার বাচ্চা তার ঘুমের নির্দিষ্ট সময় সূচী অনুযায়ী ঘুমতে শুরু করে দেবে নিশ্চিতভাবেই।যদি আপনার সন্তান সকালে বা রাত্রে খুব তাড়াতাড়ি উঠে পরে তাহলে তাকে প্রথম খাবারটি খাওয়ানোর পর দেখবেন সে আবার ঘুমিয়ে পরেছে।আন্য সময়ে প্রথমত খাওয়ানো এবং স্নান করানোর পর তার প্রণশক্তি বেড়ে যায় এবং সে খুব আনন্দিত এবং উত্তেজিত থাকে সকালে।বেশীরভাগ মায়েরা যে সমস্যার মুখোমুখি হন সব থেকে বেশী তা হল তদের বাচ্চাগুলোকে দুপুরে ঘুম পাড়ানোর ক্ষেত্রে।একটু দিবানিদ্রার জন্য মায়েরা তাদের কোনোরকম প্রচেষ্টা বাকি রাখেন না।এই সময়ে বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়তে পারে যদি আপনি তাদেরকে আলিঙ্গন করেন বা তদেরকে কোলে নিয়ে সামান্য ঘোরাঘুরি করেন অথবা তাদের সাথে খানিকক্ষণ খেলা করেন তাহলে তারা বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে।

আচার আচরণ

যখন সে জেগে থাকবে তখন তার শক্তি এবং উত্তেজনা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাবে।অনেক কিছু সে করবে যেমন মুখ দিয়ে নানা শব্দ করবে,যখন সে তার পেটের ওপর ভড় করে চিত হয়ে থাকবে তখন সে তার মাথাটা উঁচু করে ধরে রাখবে,তাকে বুঝতে দিতে হবে যে সে বড় হয়েছে।তাকে দু পায়ে ভড় দিয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করতে হবে দেখবেন সে এটাতে শুধু খুশি হবে না সে এটাকে নতুন মজাদার খেলা হিসাবে ভাববে।যখন দেখবেন তাদের পাগুলো বেশ শক্ত সমর্থ হয়েছে তখন আপনি আলতো করে তার হাত দুটো ধরে দাঁড় করিয়ে দিন এক বা দুই মুহূর্তের জন্য যতক্ষণ না সে তার নরম বিছানাতে পরে যায়।

আপনার সাথে কু কু শব্দ করার সাথে সাথে সে তার লালাকেও নানা মজাদার উপায়ে ব্যবহারের চেষ্টা করবে.রাসবেরি ফোলানো আপনার শিশুর একটা স্বাভাবিক ক্রিয়া হয়ে উঠবে এবং সে অনেকটা সময় এটা নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে।তার নাল এবং লালা ক্ষরণের পরিমাণ বেড়ে যাবে আপনি আনন্দিত হতে পারেন যে এবার তার দাঁত ওঠার সময় এসে গেল।যাইহোক, এটা কোনো ব্যাপার নয় আপনার বাচ্চাটি সবচেয়ে বেশী মজা করবে এই সময়।

কান্না

হ্যাঁ, কান্নাটা এই বয়স থেকে হাতের বাইরে চলে যায় যেহেতু সে নানা ধরণের কান্না কাঁদতে পারে। তাকে ঘুম পারাবার সময় আপনি হয়ত খুব মৃদু কান্নার আওয়াজ শুনতে পাবেন সেটা হল তার গভীর ভাবে ঘুমিয়ে পড়ার লক্ষণ।মাঝরাত্র যখন খিদে পাবার জন্য তার ঘুম ভেঙে যায় তখন তার আর্তনাদে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়।যখন আপনি তার সাথে খেলতে খেলতে মাঝ পথে একটু সময়ের জন্য তাকে একলা ফেলে রেখে চলে যাবেন তখন তার কান্নার সুর অন্যরকম হবে আপনার মনযোগ আকর্ষণ করে তার সাথে আবার খেলা করার জন্য।এই প্রতিটি কান্নাই আলাদা ধরণের এবং এগুলো সময়ের সাথে সাথে বোঝা যায়।যেকোনো ধরনের কান্নার সাথে সাথে সাড়া 

দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ,কেননা এটা যদি না করা হয় তাহলে কান্নার পর্বটি আরও দীর্ঘায়িত হবে।সবথেকে বড় কথা হল কান্নার মাধ্যমে আপনার বাচ্চাটি তার চাহিদা গুলো আপনাকে জানাতে পারে।

10 সপ্তাহ বয়সী শিশুর যত্নের পরামর্শ

  • যথাযথ সময়ে সঠিক পরিমাণে খাওয়ানো দরকার।
  • বিভিন্ন ধরনের কান্নার আওয়াজ এর পার্থক্য গুলো বুঝে যত দ্রুত সম্ভব তার প্রত্যুত্তর দেওয়া প্রয়োজন।
  • আপনার বাচ্চার সময় তালিকার একটা ট্র্যাক রাখুন যে সময়ে তার যেটা দরকার তার আগেই সেটা বুঝে নিয়ে তৈরী থাকুন।
  • আপনার শিশুর সাথে খেলুন বা কথা বলুন পার্কে কিম্বা বাগানে ঘোরাতে নিয়ে যান।

পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং টিকাকরণ

যদি,8 সপ্তাহ বয়সে জরূরী সমস্ত ভ্যাক্সিন যেমন পি.সি.ভি, রোটাভাইরাস, এবং অন্যান্য গুলো দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে এই পর্যায়ে আর কোনো ভ্যাক্সিনের দরকার নেই।

খেলাধূলা এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপ

10 সপ্তাহ বয়সে আপনার বাচ্চাটির কিছু শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং সে স্থানের ত্রিমাত্রিকতা সম্বন্ধে তার ধারণা জন্মাবার পাশাপাশি তার চারপাশে চলমান বস্তুগুলো সে বুঝতে পারবে।আপনি এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়ে তাকে শূণ্যে ওঠাবার জন্য নানা রকম ভাবে প্রচেষ্টা করুন।তাকে মেঝেতে শুইয়ে দিন এবং তার হাত দুটো শক্ত করে ধরুন।আপনার থাই এর ওপর তাকে শুইয়ে দিন তারপর আপনার হাত দিয়ে তাকে শক্ত করে ধরুন, এবার ধীরে ধীরে আপনার পা দুটোকে উপরের দিকে তুলতে থাকুন এবং আপনার সোনাটিকে শূণ্যে ভাসতে সাহায্য করুন।এই সময়ে নানা ধরণের উত্তেজক শব্দ করুন আর তার দিকে চেয়ে দেখুন।আপনার সোনাটি এটা উপভোগ করবে আর তার হাসতে থাকার সম্ভবনা খুব বেশী হবে।তবে অনেক শিশুই খুব ভয় পেয়ে যায় আর জোরে কাঁদতে থাকে,এটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক, কারণ এই খেলাটা খুবই মজার পাশাপাশি এটা আপনার জন্য একটা ভাল ব্যায়াম।

তাদের দৃষ্টিশক্তি অনেক ভাল হয়ে যাবার জন্য আপনি একটা টর্চ লাইট বা একটা চকচকে ধাতুর টুকরো সূর্যের আলোর সামনে ধরে তার প্রতিফলন দেওয়ালে ফেলে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।আপনার শিশুটি যখন শুয়ে থাকবে তখন আপনি প্রতিফলনটা ছাদে করতে পারেন তার সাথে নানা ধরণের আওয়াজ করতে পারেন।মাঝে মাঝে এটাকে ফেলুন আর বন্ধ করুন দেখবেন আপনার বাচ্চার মুখ আনন্দে ভরে উঠেছে।

প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে আলোচনা

অনেক মানুষজনের সাথে তার যোগাযোগ বেড়ে যাবার ফলে তার বিভিন্ন রোগ সংক্রমণের সম্ভবনা বেড়ে যায়।সবথেকে বেশী সংক্রমণের সম্ভবনা হল সর্দিকাশির।যদি সেটা হয় তাহলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তার নাক পরিষ্কার করে দিন প্রয়োজনে ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ করে নিন ওষুধের দরকার আছে কিনা।

সংক্রমণের পরিমাণ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে সে তার কান চুলকাতে থাকবে, কোষ্ঠকাঠিণ্যে ভুগবে,এবং জ্বর হলে এটা ভয়ের ব্যাপার তাই তাড়াতাড়ি ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।

আপনার এই 10 সপ্তাহের আনন্দের উৎসটিকে দেখামাত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।বিরামহীন বিনোদনটি দেখতে দেখতে সদ্যজাত ছোট্টটি থেকে 2 মাস বেশী বয়সের ভরসা যোগ্য শিশু হয়ে উঠেছে।খুব ভাল যত্ন নিন এবং আপনার সঙ্গীর সাথে কাজ গুলো ভাগ করে নিন যাতে আপনি আপনার স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরতে পারেন।