গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু সেবন করা-এটি কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু সেবন করা-এটি কি নিরাপদ?

তাজা ফল এবং শাক-সবজিগুলি হল একজন গর্ভবতী মহিলার ডায়েটের অবিচ্ছেদ্য অংশ।যখন কোনও মহিলা গর্ভবতী হন তখন তার খাদ্যাভ্যাসের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত কারণ একটি ভুল খাবারও গুরুতর সমস্যাগুলির দিকে পরিচালিত করতে পারে।আপনি যদি প্রথম বার গর্ভধারণ করে থাকেন, স্বাভাবিকভাবেই আপনি যেকোনও কিছু খাওয়ার পূর্বে সেটি দ্বিতীয়বার ভাববেন।আপনি গর্ভবতী থাকাকালীন এ ব্যাপারে হয়ত ভাবতেই পারেন যে কমলা লেবুর মত সাইট্রাস ফলগুলি আপনি খেতে পারেন কিনা।কমলা লেবু ভিটামিন C এর সমৃদ্ধ উৎস এবং সেগুলিকে সেবন করলে তা আপনাকে তৎক্ষণাৎ উৎফুল্ল করে তুলতে পারে।কমলার টক-মিষ্টি সম্মিলিত এক অদ্ভুত সুন্দর স্বাদটি আবার এমনকি মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতা থেকে আপনাকে বিরাম এনে দিতে পারে।কিন্তু গর্ভাবস্থায় কি আপনি কমলা লেবু খেতে পারেন?খোঁজ নিয়ে দেখুন!

গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু খাওয়া কি নিরাপদ?

গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু খাওয়া কি নিরাপদ?

আপনার গর্ভাবস্থার ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য কমলা লেবু অবশ্যই একটি সেরা ফল।এর সর্বোত্তম উপকারিতা পেতে আপনার এই সম্পূর্ণ ফলটিকে খাওয়া উচিত। আপনি যদি কাঁচা কমলাটি খেতে পছন্দ না করেন সেক্ষেত্রে তাজা নিঃসৃত কমলার রসও পান করতে পারেন।তবে টেট্রা প্যাকে উপলব্ধ কমলার রসগুলি পান করা থেকে বিরত থাকুন কারণ এগুলির মধ্যে থাকে নানা প্রজারভেটিভ যা আপনার পাচন তন্ত্রের সাথে সহমত নাও হতে পারে।এছাড়াও আবার রাস্তায় বিক্রি হওয়া কমলার রস আপনার পান করা এড়িয়ে চলা উচিত।এর সর্বোত্তোম উপকারিতা পাওয়ার সর্বোত্তম পন্থা হল একটি গোটা কমলা লেবু অথবা বাড়িতে প্রস্তুত রস সেবন করা।

গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু সেবনের স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি

কমলা লেবুগুলি ভিটামিন C, আয়রণ, জিঙ্ক এবং ফোলিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ।গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু সেবন করলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ কার্যক্ষমতাকে উন্নত করতে পারে, গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশকে শক্তিশালী করে তোলে এবং এছাড়াও আপনার ত্বকের টান বা স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষেত্রেও উপকারিতা নিয়ে আসে।গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে কমলা খাওয়ার উচ্চ সুপারিশ করা হয় কারণ এটি ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করে।গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু সেবনের বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতার খোঁজ পেতে পড়ুন।

1.এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে

কমলা লেবুগুলি ভিটামিন C তে সমৃদ্ধ যা মা এবং শিশু উভয়েরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।এছাড়াও আবার কমলাগুলি দেহে আয়রণ এবং জিঙ্ক মুক্ত করে যা অনাক্রম্যতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।গর্ভাবস্থায় কমলা খেলে তা অ্যালার্জির ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।তাছাড়াও এটি আবার শিশুর তরুণাস্থি, কলা, রক্তবাহ এবং হাড়ের বিকাশে সাহায্য করে।

2.এটি শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করতে পারে

কমলাগুলি ভিটামিন B-6 এবং ফোলিক অ্যাসিডের একটি ভাল উৎস।গর্ভাবস্থায় কমলা সেবন করলে তা আপনার গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়তা করতে পারে এবং নিউরাল টিউবের ত্রুটিগুলি রোধ করতে পারে, যা শিশুর মধ্যে মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের অস্বাভাবিকতাগুলির কারণ হিসেবে পরিচিত।কমলা মধ্যস্থ এর ফোলেট উপাদানটি রক্ত কোষ গঠনে, নতুন কলার বৃদ্ধিতে এবং একটি স্বাস্থ্যকর প্ল্যাসেন্টা বা অমরার বিকাশে সহায়তা করতে পারে।তবে অত্যধিক মাত্রায় ফোলেট গ্রহণের ফলে তা উচ্চ ওজন যুক্ত শিশুর জন্মের কারণ হতে পারে।

3.এটি কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে

কমলাগুলি দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় ফাইবার বা আঁশ বহুল তন্তু এবং সেলুলোজে সমৃদ্ধ যা নিয়মিত অন্ত্রের গতিবিধি এবং গর্ভাবস্থার একটি সাধারণ সমস্যা কোষ্ঠকাঠিণ্য নিরাময়ে সহায়তা করে।এর মধ্যস্থ ফাইবার বা তন্তু উপাদানটি আবার পেটের সমস্যা এবং পেট ফাঁপা থেকে স্বস্তি আনতেও সহায়তা করতে পারে।

4.এটি রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতেও সহায়তা করতে পারে

কমলা মধ্যস্থ এর উচ্চ পটাশিয়াম উপাদানটি গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে তাদের রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা থেকে স্বস্তি আনতে পারে।

5.কমলা আপনাকে হাইড্রেট রাখতে পারে

এছাড়াও প্রতিদিনের তরল গ্রহণের ক্ষেত্রে অবদানের পাশাপাশি কমলা শরীরের তরল স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সোডিয়াম এবং পটাসিয়াম সরবরাহ করে।88% জলীয় উপাদানের সাথে কমলা দেহে জলের ভারসাম্য বজায় এবং হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।

6.এটি আপনার ত্বকের উপকার করতে পারে

কমলাগুলি হল শক্তিশালী অ্যান্টঅক্সিডেন্ট, আর সেগুলি সেবন করলে তা আপনার ত্বকের উপর একটি প্রশমনকারী প্রভাব ফেলতে পারে, ত্বককে টান এবং দৃঢ় রাখে এবং ব্রণ প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত আদ্রতা সরবরাহ করে।

গর্ভবতী থাকাকালীন আপনি কতগুলি কমলা খেতে পারেন?

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভিটামিন C এর দৈনিক প্রস্তাবিত পরিমাণটি হল 85 মিলিগ্রাম মত।এই পরিমাণের প্রয়োজনীয়তাটি পূরণ হতে পারে প্রতিদিন তিনটি করে কমলা বা ভিটামিন C সমৃদ্ধ অন্য কোনও ফল সেবনের দ্বারা।তবে আপনি যদি অন্য খাবারগুলির সাথে কমলা সেবন করেন, তবে সেক্ষেত্রে আপনার সেই দিনে খাওয়া অন্য খাবারগুলিতে উপস্থিত ভিটামিন C এর পরিমাণটিও বিবেচনায় রাখা নিশ্চিত করা উচিত।সব সময় মাথায় রাখবেন যে আপনার প্রাত্যহিক গ্রহণের পরিমাণটি কখনই আপনার প্রস্তাবিত পরিমাণকে অতিক্রম করা উচিত নয় কারণ কমলা থেকে আবার অ্যাসিডিটি বা অম্লতা হতে পারে।আপনি যদি ভিটামিন C সমৃদ্ধ আরও অন্যান্য খাদ্যগুলি খেয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে কমলা সেবনের ক্ষেত্রে সংযমের সাথে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা নিশ্চিত করুন।আপনার ডায়েটে কতগুলি কমলা যোগ করতে পারেন সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।

কমলা সেবনের সেরা সময় কখন?

দিনের যেকোনও সময়েই কমলা খাওয়া যেতে পারে, এমনকি খালি পেটেও।কখন এবং কীভাবে আপনি সেগুলিকে আপনার ডায়েটে যোগ করবেন সে ব্যাপারে কোনও কঠোর বিধিনিষেধ নেই।

গর্ভাবস্থায় কমলার রস সেবন করা

গর্ভাবস্থায় কমলার রস সেবন করা

কোনও অতিরিক্ত সংযোজিত বস্তু বা অ্যাডিটিটিভ এবং প্রজারভেটভগুলি ছাড়া পাস্তুরাইজড কমলার রস আপনার গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সংযোজন করার একটি দুর্দান্ত বিকল্প।আপনি প্রতিদিন দুই গ্লাস পর্যন্ত কমলার রস পান করতে পারেন।ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস হওয়ার কারণে, পাস্তুরাইজড কমলার রস সেবন করলে তা আপনার হাড়কে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।আপনি যদি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হয়ে থাকেন, তবে আপনি বল বৃদ্ধিকারী (ফরটিফাইড) কমলার রস পান করতে পারেন কারণ এটি দুধের একটি ভাল বিকল্প এবং মর্নিং সিকনেস বা প্রাতঃকালীন অসুস্থতা নিরাময়ে সহায়তা করতে পারে।এছাড়াও আবার আপনি তাজা কমলা নিংড়ে রস বের করে নিয়েও তার আস্বাদ গ্রহণ করতে পারেন।তবে চেষ্টা করুন খুব বেশি চিনি যোগ না করতে কারণ এটি আপনার গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কমলা লেবু খাওয়ার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

কমলা স্বাদে অতুলনীয় এবং গর্ভাবস্থায় তা প্রচুর উপকারিতা সরবরাহ করে, তবে সেটি যখন অত্যধিক মাত্রায় খাওয়া হয়ে যায়, তখন সেগুলি কিছু অবাঞ্ছিত জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে।

  • কমলা লেবু মধ্যস্থ উচ্চ মাত্রার সাইট্রিক অ্যাসিড উপাদানটির কারণে গলা ব্যথা হতে পারে এবং তাছাড়াও আবার তা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে।
  • যদি অত্যধিক মাত্রায় সেবন করা হয় তবে এর মধ্যস্থ ফাইবার বা আঁশ বহুল তন্তুগুলি পেটে খিঁচুনি, ব্যথার উদ্ভব ঘটাতে পারে এবং পাতলা মল ত্যাগের মত পেট খারাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
  • কমলাগুলি আম্লিক প্রকৃতি হওয়ার কারণে, সেগুলি অত্যধিক পরিমাণে খেলে তা গ্যাস্ট্রোফেজিয়েল রিফ্লাক্স ব্যাধিতে(GERD) ভুগে থাকা গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে হৃদয় জ্বলন বা গলা বুক জ্বালা অম্বলের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
  • শরীরে ভিটামিন C এর আধিক্য অকাল প্রসবের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

আপনার ডায়েটে কমলা অন্তর্ভূক্ত করার টিপসগুলি

আপনি যদি কমলা খেতে ভালবাসেন, জেনে নিন গর্ভাবস্থায় সেগুলি সঠিক উপায়ে কীভাবে খাবেন।আপনার খাদ্য তালিকায় কমলা অন্তর্ভূক্ত করতে সহায়তা করতে পারে এমন কয়েকটি টিপস এখানে দেওয়া হলঃ

  • আপনার প্রতিদিনের স্যালাডের বাটিতে কয়েক কোঁয়া কমলা রাখুন।
  • অন্যান্য ফলের সাথে এটি মিশিয়ে একটি দুর্দান্ত ফ্রুট স্যালাড তৈরী করতে পারেন।
  • কমলার খোসা ছাড়িয়ে সেটিকে একটি জ্যুসারের মধ্যে নিয়ে পিষে নিন এবং এইবার গ্লাসে ঢেলে শাঁসাল ঘন কমলার রস উপভোগ করুন।
  • কমলার কোঁয়াগুলির উপর কিছুটা ব্রাউন সুগার ছড়িয়ে দিয়ে সেটিকে মাইক্রোওভেনে বেক করুন।এভাবে প্রস্তুত সুস্বাদু ডেজার্ট জাতীয় ডিশটিকে উপভোগ করুন।

গর্ভাবস্থায় আপনি কি কমলার বীজ খেতে পারেন?

গর্ভাবস্থায় কমলার বীজে সেবনের কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব জ্ঞাত নয়।কিন্তু আপনি যদি ভুলবশত অনেক বেশি বীজ খেয়ে ফেলেন, আপনি তাতে বিষম খেতে পারেন। এক্ষেত্রে খুব ছোট ছোট বীজ যুক্ত এবং সহজেই খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে এ ধরণের সাতসুমাস বা ট্যাঞ্জারাইনের মত ছোট কমলাগুলিকে বেছে নেওয়ারই চেষ্টা করুন।

কমলাগুলি একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য বহুবিধ উপকারিতা নিয়ে আসতে পারে।তবে আপনি যদি সেগুলিকে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রস্তাব দেওয়া হয় প্রথমে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেওয়ার।আপনার ডাক্তারবাবু যদি কমলা খাওয়ায় সম্মতি দেন তবে সেগুলি পরিমিত পরিমাণে সংযমের সাথে খান।আপনি এগুলি প্রসবের পরবর্তীতেও খেতে পারেন কারণ প্রসব পরবর্তী ডায়েটে সংযুক্ত করার জন্যও কমলাগুলি হল একটি দুর্দান্ত ফল।কমলা মধ্যস্থ এর কম ফ্যাট জাতীয় উপাদান এবং গ্লাইসেমিক সূচক প্রসব পরবর্তীতে আপনার আকার ফিরে পেতে সহায়তা করে।এছাড়াও এর মধ্যে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ত্বকের যত্ন নিতে এবং অকাল বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে।সুতরাং সমগ্র গর্ভাবস্থাকাল জুড়ে এই সুস্বাদু ফলটির আস্বাদ বজায় রাখুন এবং সুস্থ থাকুন!