গর্ভাবস্থায় যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া এবং ব্রণের চিকিৎসা কীভাবে করা যেতে পারে

গর্ভাবস্থায় যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া এবং ব্রণের চিকিৎসা কীভাবে করা যেতে পারে

গর্ভাবস্থার সহিত অতিরিক্ত ফল হিসেবে বহু যন্ত্রণাদায়ক এবং অস্বস্তিকর চিকিৎসাগত শর্তগুলির সম্মূখীন হতে হয়।গর্ভাবস্থার এ ধরনের একটি শর্ত হল ব্রণ।হরমোনের অসামঞ্জস্যতার কারণে গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে এই ব্রণগুলি হয়ে থাকে।গর্ভাবস্থায় ব্রণ হওয়ার কারণ,লক্ষণ এবং চিকিৎসার বিকল্পগুলি সম্পর্কে আপনার যা কিছুই জানা প্রয়োজন তার সবকিছুই এখানে দেওয়া হলঃ

ব্রণগুলি আসলে কি?

ব্রণগুলি হল ত্বকের মধ্যে ফুলে ওঠা লালচে এবং যন্ত্রণাদায়ক ফোঁড়া বিশেষ।এগুলি মূলত হয়ে থাকে পরজীবী ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ত্বকের মধ্যে সংক্রমণ হয়ে ওঠার কারণে।লোমের ফলিক্যলগুলির দ্বারা বা ঘর্ম গ্রন্থিগুলির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে এবং পূঁজ পূর্ণ গহ্বর গড়ে তোলে।এর ফলে ভীষণ অস্বস্তি হয়।তবে সুখবর হল এই যে ব্রণগুলি কেবলমাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্যই থাকে এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে সেটিকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

ব্রণের প্রকারভেদগুলি কি?

সাধারণত গর্ভাবস্থায় যে ধরনের ব্রণগুলি হয়ে থাকে সেগুলি হলঃ

1.পাইলনিডাল সিস্ট

পাইলনিডাল সিস্ট হল এমন এক ধরনের ব্রণ বিশেষ যা নিতম্বের ছিদ্রের মধ্যে হয়ে থাকে।এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা জনিত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।

2.বিষ ফোঁড়া বা ফার্নাঙ্কল/কার্বাঙ্কল

একটি বিষ ফোঁড়া প্রাথমিক পর্যায়ে একটি লালচে পিণ্ড বিশেষ হয়ে থাকে,এরপর ব্রণটি পূঁয পূর্ণ হয়ে ওঠার পর বিস্ফোরিত হয়।যদিও ফার্নাঙ্কলগুলো স্ট্যাফিলোকক্কাল সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে,কার্বাঙ্কলগুলো হল এক গুচ্ছ বিষ ফোঁড়ার সমন্বয় যা ক্ষতচিহ্নের সৃষ্টি করতে পারে।বিষ ফোঁড়া এবং কার্বাঙ্কল এই উভয় প্রকার ব্রণই মুখমণ্ডল,গলা,বগল,থাই এবং নিতম্বে হতে পারে।

3. হাইড্রাডেনাইটিস সাপুরাটিভা

হাইড্রাডেনাইটিস সাপুরাটিভা(HS)সাধারণত খুব বিরল ক্ষেত্রেই দেখা যায়।এটি বগল,স্তনের নিচে এবং কটিসন্ধিকে প্রভাবিত করে বলে মনে করা হয়।

4.সিস্টিক ব্রণ

যখন ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আপনার ত্বকে গভীরভাবে প্রবেশ করে তখন তার ফলে সিস্টিক ব্রণ হয়ে থাকে।এই অবস্থাটি চিহ্নিত করা যায় পূঁযপূর্ণ,নরম লালচে ফুসকুড়ির দ্বারা।যদি একটি ফোঁড়া ফেটে গিয়ে পূঁয ঝরতে থাকে,সেই পূঁয থেকে আরও অনেক ব্রণ গড়ে উঠতে পারে।এই ধরনের ব্রণগুলি সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় মুখমণ্ডলে, বুকে,পিঠে,বাহুর উপরের অংশে এবং কাঁধে।

গর্ভাবস্থায় কি কারণে ব্রণ হয়ে থাকে?

গর্ভাবস্থায় ব্রণ হওয়ার সাধারণ কারণগুলি হলঃ

  • অবরুদ্ধ তৈল নালিকা বা ঘর্মগ্রন্থি
  • ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
  • অন্তর্বর্ধিত লোম
  • বাইরের কোনও জিনিস(ধূলিকণা) বা স্প্লিন্টার ত্বকে জমে ওঠা

গর্ভাবস্থায় ব্রণগুলি গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বৃদ্ধির কারণগুলিঃ

  • স্থূলতা বৃদ্ধি পাওয়া
  • দুর্বল অনাক্রম্যতা থাকা
  • অযথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও অনুন্নত মানের ডায়েট
  • ডায়বেটিস
  • একজিমা
  • ত্বকের উপর কঠোর রাসায়নিকের ব্যবহার
  • হরমোনের অসামঞ্জস্যতা

সত্যটি হল এই যে প্রাথমিক গর্ভাবস্থা কিম্বা গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ের কারণে এই ব্রণগুলি হতে পারে না।ব্রণগুলি হওয়ার মূলত চারটি প্রধান কারণ আছে-দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি,অস্বাস্থ্যকর খাবার,হরমোনের অসামঞ্জস্যতা এবং একটি অবদমিত অনাক্রম্যতা।

গর্ভাবস্থায় কি কারণে ব্রণ হয়ে থাকে

ব্রণগুলিকে কীভাবে নির্ণয় করা যায়?

নিম্নলিখিত উপায়গুলিতে ব্রণগুলিকে চিহ্নিত করা যায়ঃ

  • শারীরিক নিরীক্ষণ
  • ব্যাকটেরিয়ার পরীক্ষা
  • আপনার চিকিৎসাজনিত ইতিহাস এবং এর লক্ষণগুলির মূল্যায়ন

গর্ভাবস্থায় ব্রণগুলির জন্য চিকিৎসা পদ্ধতি

ব্রণ চিকিৎসা করার কয়েকটি উপায় এখানে উল্লেখ করা হলঃ

  • অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার
  • অস্ত্রোপচার
  • যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে আহারে সংযম
  • উষ্ণ কমপ্রেস এবং নিম পাতা ব্যবহারের মত ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার

ব্রণগুলি কি শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কোনও ঝুঁকি নিয়ে আসে?

ব্রণের কারণে ভ্রূণের বিকলাঙ্গতা বা গর্ভপাত হয় না।তবে আপনি যদি এর জন্য কোনও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকেন তবে সেগুলি যে আপনার ভ্রূণের জন্য নিরাপদ সেই বিষয়ে আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।

প্রতিরোধ

নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ সর্বদা ভাল হওয়ার কারণে,ব্রণগুলির সাথে মোকাবিলা করার তুলনায় সেগুলি আপনার দেহে হয়ে ওঠার আগেই ব্রণগুলিকে প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা করুন।আর সেটি ফলপ্রসূ করতে যে পরামর্শগুলি মনে রাখবেন সেগুলি হলঃ

  • আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন।
  • স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন।
  • সামাণ্য কেটে যাওয়া এবং আঘাতগুলিরও অবিলম্বে চিকিৎসা করান।
  • যদি আপনি ডায়বেটিস অথবা একজিমায় ভুগে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারি সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন।

কখন আপনার একজন ডাক্তারের সাথে আলচনা করা উচিত?

আপনার স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে আলোচনা করুন যদি –

  • ব্রণ বা ফোঁড়াগুলি ক্রমশ বড় হতে থাকে।
  • সেগুলি যন্ত্রনাদায়ক হয়ে ওঠে।
  • এটির সাথে আবার আপনার জ্বর হয়ে থাকে।
  • কয়েক মাসেও যদি ব্রণ বা ফোঁড়াগুলি না শুকায়।
  • আপনার মুখমন্ডলে বা গুপ্ত অঞ্চলে যদি ব্রণগুলি হয়ে থাকে।
  • আপনি ডায়বেটিসে ভুগে থাকলে।
  • আপনার মেরুদণ্ড অথবা মলদ্বারে যদি ব্রণগুলি হয়ে থাকে।

ব্রণগুলি সাধারণত গর্ভাবস্থায় কোনও বড় ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে না।কিন্তু ব্রণগুলি যদি 2-3 সপ্তাহের মধ্যেও না শুকিয়ে ওঠে তবে সেক্ষেত্রে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সহায়তা নেওয়ার জন্যই আমরা আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি।