In this Article
গর্ভধারণের চতুর্থ মাসটি হল এমন একটা সময় যখন থেকে মাথা ধরা,মর্নিং সিকনেস এবং খিটখিটে মেজাজের মত অপ্রীতিকর পার্শ্ব–প্রতিক্রিয়া–গুলি অদৃশ্য হয়ে যায়।প্রথম ত্রৈমাসিকের পর আপনি হ্য়ত খাবারের প্রতি প্রবল অনীহা অনুভব নাও করতে পারেন এবং হয়ত আপনার খিদের ইচ্ছেটা থাকতেও পারে।তিনটি ত্রৈমাসিকের মধ্যে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক–কেই সবচেয়ে আরামদায়ক হিসেবে গণ্য করা হয়।এটা আবার এমন একটা সময়কাল যখন আপনার সন্তানের বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশী হয়ে থাকে এবং আপনার রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যাতে আপনার রক্ত থেকে পুষ্টি শোষণের দ্বারা আপনার সন্তান সঠিক পরিচর্যা পায়।সুতরাং,গর্ভধারণের চতুর্থ মাসে আপনার এমন ধরণের খাবার খাওয়া উচিত যা আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকর বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম পুষ্টি সমন্বিত থাকে।
আপনার গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসে খাদ্য–তালিকায় কোন কোন খাবার অন্তর্ভুক্ত করবেন?
1. লিউকোরাইস বা যষ্ঠিমধু
গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণে কালো যষ্ঠিমধু খাওয়া বাচ্চার আই কিউ কমে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত।এছাড়াও লিউকোরাইসে এমন কিছু রাসায়নিক থাকে যা জরায়ুর সংকোচনে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে,যা পূর্ব প্রসবের কারণ। সুতরাং লিউকোরাই সসমৃদ্ধ খাবার–গুলি এড়িয়ে চলাই সব থেকে ভাল।
2. রিফাইন্ড ফ্লাওয়ার বা ময়দা
রিফাইন্ড ফ্লাওয়ার ভারতে ময়দা নামে পরিচিত,যা হজম করা কঠিন এবং কোষ্ঠকঠিন্যের কারণ হতে পারে এবং প্রসবের পর অর্শ হওয়ারও কারণ হতে পারে।এরা আবার রক্তে শর্করার মাত্রা বড়ায় যেহেতু এর মধ্যে থাকে উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক।এটি আবার গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসও ঘটাতে পারে,যা মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক। সম্পূর্ণ আটার তৈরী খাবার খান এবং ময়দা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
3. সামুদ্রিক মাছ
গর্ভধারণের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের সময় কি কি খাওয়া উচিত তা পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ।আপনার গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসের খাদ্য–তালিকায় নিম্নলিখিত খাবার–গুলি অন্তভূর্ক্ত করা উচিত।
1. আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার
যেহেতু চতুর্থ মাসে আপনার রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাই এই সময়ে উচ্চ মাত্রায় আয়রণের প্রয়োজনীয়তার কারণে আপনার খাদ্য–তালিকায় আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।আয়রণ সমৃদ্ধ খাবারের উদাহরণ–গুলি হল মাছ,মাংস,টফু,মেটে,সয়াবিন,সম্পূর্ণ শস্য যেমন ব্রাউন রাইস,বাদাম এবং দানাশস্য,ঘন সবুজ শাক–সবজি যেমন পাতা কপি এবং পালং শাক,ড্রাই ফ্রুট বা শুকনো ফল এবং ডিম।
2. ফাইবার বা তন্তু সমৃদ্ধ খাবার
গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসে প্রোজেস্টেরন হরমোন হজম শক্তি হ্রাস করে।আপনার জরায়ুটি আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে আপনার গর্ভস্থ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিশুর সহিত সামঞ্জস্য রেখে।এটি কোষ্ঠকাঠিণ্য হওয়ার একটা কারণ।এই কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রতিরোধ করতে এবং নিয়মিত অন্ত্র আন্দোলনকে উদ্দীপিত করতে, আপনার তন্তু সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।উদাহরণ হিসাবে বলা যায় আপনার খাবারের সাথে সংযুক্ত করুন সম্পূর্ণ শস্য যেমন ওটমিল বা জইচূর্ণ,তুষ এবং বার্লি;দানা বা বীজ যেমন ফ্ল্যাক্স সীড বা শণের দানা এবং চিয়া বীজ;বাদাম যেমন আমণ্ড,পিক্যান বাদাম এবং পেস্তা;সবজি যেমন ব্রুসেল স্প্রাউট (এক ধরণের ছোট বাঁধাকপি) ,ব্রকলি,সুইট কর্ন বা মিষ্টি ভুট্টা দানা, আর্টিচোক(সবুঝ ডাঁটা বিশেষ যা খাওয়া হয়) এবং সবুজ কড়াইশুঁটি;এবং ফলের মধ্যে রাস্পবেরি,স্ট্রবেরি, ডুমুর,আপেল,কলা এবং ন্যাসপাতি।
3. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার
আপনার শিশুর শক্ত হাড়ের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়াম ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার–গুলি হল পাতা কপি, দুধ, দই, চীজ, সার্ডিন,জলজ শালুক,ব্রকলি,ওকরা এবং আমণ্ড বাদাম।
4. জিঙ্ক এবং ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবার
প্রোটিন গঠনের এবং একটি স্বাস্থ্যকর স্নায়ুতন্ত্র ও রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থার বিকাশের জন্য একটি মৌলিক উপাদান হল জিঙ্ক।জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার–গুলি হল ঝিনুক,ভেড়ার মাংস,গরুর মাংস,পালং শাক,গম,মাশরুম,কুমড়ো,এবং স্কোয়াশ বীজ,বাদাম,চিকেন এবং বিনস।শরীরে আয়রণ শোষণের জন্য ভিটামিন C অপরিহার্য।ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবারগুলি হল লাল এবং সবুজ মরিচ,টমেটো, মষ্টি আলু,ব্রকলি,অঙ্কুরিত ব্রাসিল,ফুলকপি,বাঁধা কপি এবং সবুজ শাক পাতা।
5. ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার
ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ভ্রূণের মস্তিষ্ক এবং চোখের বিকাশের জন্য অপরিহার্য।হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য,প্রজনন পদ্ধতির সঠিক কার্যকারিতা এবং ত্বক,চুল ও হাড়ের গঠনের বৃদ্ধির জন্য ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড অপরিহার্য।ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার–গুলি হল ভেজিটেবিল অয়েল,স্যালমন,সার্ডিন,সয়াবিন,বাদাম যেমন আখরোট এবং আমণ্ড এবং বীজ যেমন চিয়া এবং শণ।
6. ফল এবং শাক–সবজি
প্রতিদিন কমপক্ষে 5 ভাগ ফল ও সবজি আপনার খাবারের সাথে যোগ করা গুরুত্বপূর্ণ।হিমায়িত করে রাখা সবজির তুলনায় তাজা উৎপাদন–গুলিতে থাকে উচ্চ মাত্রায় পুষ্টি।আবার আপনার খাদ্য তালিকায় কিছু কাঁচা সবজিকেও স্যালাডের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।ফলের জুসের তুলনায় তাজা ফল বেশী স্বাস্থ্যকর।
7. প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট
প্রোটিন হল পেশী,কলা এবং DNA গঠনকারী উপাদান।আর কার্বোহাইড্রেট হল আমাদের দেহের শক্তির উৎস।পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং স্টার্চি কার্বোহাইড্রেট আপনার খাবারে অন্তর্ভূক্ত করুন।প্রোটিনের উদাহরণ–গুলি হল কলাই,মসুরি ডাল,বাদাম,বীজ,বাদাম মাখন বা নাট বাটার,মাংস,চিকেন,এবং সয়াবিন।স্টার্চি কার্বোহাইড্রেটের উদাহরণ–গুলি হল আলু,ভাত,পাস্তা এবং রুটি।অতএব গর্ভধারণের চতুর্থ মাসে ভারতীয় খাদ্য–তালিকায় অবশ্যই সংযোজন করা উচিত ডাল,সম্পূর্ণ আটার রুটি,রাগি এবং ওট থেকে তৈরী পরিজ বা মণ্ড বা পুডিং বিশেষ অথবা ডালিয়া,ধোসা,ছোলা এবং রাজমা।
গর্ভধারণের চতুর্থ মাস–কোন খাবার–গুলি খাওয়া চলবে না?
এখানে কিছু খাবারের উল্লেখ করা হল যেগুলি শিশুর ক্ষতি করতে পারে যদি সেগুলি গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে খাওয়া হয়।নিচে গর্ভধারণের চতুর্থ মাসে এড়িয়ে চলার মত কিছু খাদ্য তালিকাভুক্ত করা হল।
1. লিউকোরাইস বা যষ্ঠিমধু
গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে অতিরিক্ত পরিমাণে কালো যষ্ঠিমধু খাওয়া বাচ্চার আই কিউ কমে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত।এছাড়াও লিউকোরাইসে এমন কিছু রাসায়নিক থাকে যা জরায়ুর সংকোচনে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে,যা পূর্ব প্রসবের কারণ। সুতরাং লিউকোরাই সসমৃদ্ধ খাবার–গুলি এড়িয়ে চলাই সব থেকে ভাল।
2. রিফাইন্ড ফ্লাওয়ার বা ময়দা
রিফাইন্ড ফ্লাওয়ার ভারতে ময়দা নামে পরিচিত,যা হজম করা কঠিন এবং কোষ্ঠকঠিন্যের কারণ হতে পারে এবং প্রসবের পর অর্শ হওয়ারও কারণ হতে পারে।এরা আবার রক্তে শর্করার মাত্রা বড়ায় যেহেতু এর মধ্যে থাকে উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচক।এটি আবার গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসও ঘটাতে পারে,যা মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই ক্ষতিকারক। সম্পূর্ণ আটার তৈরী খাবার খান এবং ময়দা খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
3. সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছ যেমন হোয়াইট টুনা,কিং ম্যাকরেল এবং সোর্ড ফিস বা তলোয়ার মাছে থাকে উচ্চ মাত্রায় মার্কারি। মার্কারি ভ্রূণের মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং শিশুর মানসিক প্রতিবন্ধকতার সাথেও সম্পর্কযুক্ত হতে পারে।সুতরাং সামুদ্রিক মাছ–গুলি এড়িয়ে চলুন এবং স্যালমন অথবা ট্রাউটের মত স্বাদু জলের বা মিষ্টি জলের মাছ–গুলির সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকুন।
4. ব্লু বা নীলাভ চীজ
ব্লু চীজ যেমন কামেমবার্ট এবং সফট চীজ যেমন ব্রেই–এগুলির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া অথবা লিসটেরিয়ার মত মাইক্রো অর্গানিজম থাকতে পারে যা মায়ের খাদ্য–বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে।এটি শিশুর বৃদ্ধি এবং বিকাশের উপর প্রভাব ফেলবে।সুতরাং ব্লু চীজ এবং সফট চীজ এড়িয়ে চলুন এবং পার্মেসান অথবা চেডারের মত কেবল হার্ড বা শক্ত চীজই খান।
5. কাঁচা ডিম এবং রান্না কম করা মাংস
কাঁচা ডিমে থাকে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া যা সালমোনেলোসিসের (এক ধরণের খাদ্য বিষ ক্রিয়া) কারণ হতে পারে।এটি বাচ্চার জন্য ক্ষতিকারক। সুতরাং শুধুমাত্র রান্না করা ডিমই খান।রান্না কম করা মাংসও খাদ্য বিষ-ক্রিয়ার কারণ হতে পারে,সেই কারণে মাংসকে ভালোভাবে রান্না করাকে সুনিশ্চিত করুন।
6. প্যাট বা বড়া বিশেষ
প্যাট হল ছড়িয়ে যাওয়া পেস্টের আকারে রান্না করা মাংস এবং চর্বির একটা মিশ্রণ।যেকোন ধরণের প্যাটেই লিস্টেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।সুতরাং,গর্ভাবস্থাকালীন সময়ে এটিকে এড়িয়ে চলাই সব থেকে ভাল।
7. ক্যাফিন
অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফিন খেলে তা আপনার হৃদ স্পন্দনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং তার সাথে আবার স্নায়বিক দৌর্বল্য এবং নিদ্রাহীনতারও কারণ হয়ে ওঠে।এটি শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে এবং গর্ভপাতের মত সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্তও হতে পারে।সুতরাং, ক্যাফিন গ্রহণ প্রতিদিন 200 মিলিগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই ভাল।
গর্ভবস্থার চতুর্থ মাসের জন্য খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ
এখানে খাবার খাওয়ার কিছু পরামর্শ দেওয়া হল গর্ভধারণের চতুর্থ মাসে অনুসরণের জন্য।
- পর্যাপ্ত জল পান করুন।গর্ভবতী মহিলাদের প্রতি দিন গড়ে 2.3 লিটার করে জল পান করা প্রয়োজন।
- অতিরিক্ত মাত্রায় ভাজা খাবার,স্পাইসি মুখরোচক খাবার অথবা অতিরিক্ত নুন অথবা মিষ্টি যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- আপনার স্যালাডের ওপর অথবা ওট মিলে ও দইয়ের মধ্যে কিছুটা মাঠের শণ বীজ ছড়িয়ে দিতে পারেন।এগুলি খাদ্য তালিকাগত ফাইবার বা তন্তু এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের মহান উৎস।
- খুব বেশী মিষ্টি খাবেন না যেহেতু এটি জেস্টেশনাল ডায়বেটিস ঘটাতে পারে এবং অপ্রয়োজনীয় ওজন বৃদ্ধি করাতে পারে।
- খাবার খাওয়ার সাথে চা অথবা কফি এবং আয়রণ সম্পূরক–গুলি গ্রহণ করা এড়িয়ে চলুন যেহেতু এগুলির মধ্যে উপস্থিত ট্যানিন গুলি শরীর দ্বারা আয়রণ শোষণকে প্রতিরোধ করে।
- ফল এবং সবজি–গুলিকে জীবাণু মুক্ত করতে এবং অবশিষ্ট তলানি রূপে লেগে থাকা মাটি এবং রাসায়নিক–গুলিকে নির্মূল করতে সেগুলিকে ভালো ভাবে ধোওয়া সুনিশ্চিত করুন।
একজন মা হওয়ার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসটি বেশ আরামদায়ক।এই সময়ে নিয়মিত ব্যায়াম,স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং চাপ মুক্ত হয়ে শান্ত থাকা নিশ্চিত করবেন যাতে আপনার সন্তানটিও সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর হতে পারে।আপনার খাদ্যাভ্যাসে কোনরকম পরিবর্তন আনার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করাটা সুনিশ্চিত করুন।