বাচ্চাদের জ্বরের জন্য শীর্ষ 10টি ঘরোয়া প্রতিকার

বাচ্চাদের জ্বরের জন্য শীর্ষ 10টি ঘরোয়া প্রতিকার

আপনার বাচ্চা কি জ্বরের সাথে সংগ্রাম করছে এবং কী করতে হবে তা আপনি জানেন না? সৌভাগ্যক্রমে, কিছু কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার দিয়ে তাপমাত্রা কমিয়ে আনা যায়। আরও জানতে পড়া চালিয়ে যান।

শিশুদের জ্বরের সহজ ঘরোয়া প্রতিকার

শিশুদের জ্বরের সহজ ঘরোয়া প্রতিকার

আপনার শিশুর অস্বস্তি দূর করতে এই সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ব্যবহার করুন।

1. ঠান্ডাকম্প্রেস

আপনার বাচ্চার ঘুমন্ত অবস্থায় তার কপালে একটি ভিজে ওয়াশক্লথ রাখুন। বাচ্চাদের উচ্চ জ্বরের জন্য এটি একটি অন্যতম সেরা ঘরোয়া প্রতিকার। এটি করার ফলে আপনার সন্তানের দেহের তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং অস্বস্তি কমে।

2. ঈষদুষ্ণ স্নান

আপনার শিশুকে একটি বাথ-টাবে অথবা গামলায় মৃদু, ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করান অথবা উষ্ণ জল দিয়ে তাকে স্পঞ্জ করে দিন। এই পদ্ধতিটিতে তার শরীর থেকে জল বাষ্পীভবনের ফলে তাপমাত্রা হ্রাস করবে। ঘরের-তাপমাত্রার জলে তাকে স্নান করাবেন না। এটি তাপমাত্রার দ্রুত এবং আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারে এবং জ্বরকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

3. তরল পান করা

যখন আপনার বাচ্চা জ্বরে ভুগছে তখন তাকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে দিন। জল, ফলের রস এবং দই তার শরীরের জন্য ভাল।

4. উপযুক্ত পোশাক চয়ন করুন

যদি আপনার শিশু পোশাকের উপর পোশাক পরে থাকে তবে কয়েকটি খুলে ফেলুন এবং তার ত্বকে বাতাস লাগতে দিন। সুতীর মতো বায়ু চলাচলে সহায়ক এমন সুতির নরম কাপড়ের পোশাক তাকে পরান এবং প্রয়োজনে ফ্যানটি চালু করুন। তবে, আপনি যদি বাইরে থাকেন, তবে সূর্যের আলো তার গায়ে লাগাবেন না।

5. পেঁয়াজ দিয়ে চিকিৎসা

বাচ্চাদের জ্বরের জন্য ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকারগুলিতে পেঁয়াজ একটি সাধারণ এবং বহুমুখী উপাদান। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে এবং জ্বরজনিত কারণে হয়ে থাকা শরীরের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।

  • কেবল একটি পেঁয়াজকে টুকরো টুকরো করে কাটুন এবং 2 – 3টি টুকরো নিয়ে প্রতিটি টুকরো 2 মিনিট ধরে আপনার সন্তানের পায়ের তলায় ঘষুন।
  • দিনে সর্বাধিক 2 বার এটি করুন।

মাখানো ছাড়াও পেঁয়াজ আবার খাওয়ানোও যেতে পারে।

  • পেঁয়াজ কেটে ও থেঁতো করে রস তৈরি করুন।
  • দিনে কয়েকবার আপনার বাচ্চাকে এই রস খাওয়ান।

6. আদা স্নান

হালকা গরম জলে প্রায় দুই টেবিল চামচ আদা গুঁড়ো মিশিয়ে নিন এবং এই জল দিয়ে আপনার শিশুর স্নানের টাব বা গামলাকে পূর্ণ করুন। এই জলে আপনার শিশুকে 10 মিনিটের একটি সাধারণ স্নান দিন। আদা ঘাম সৃষ্টি করতে সহায়তা করে যা দূষিত পদার্থকে দূর করে। এটি শিশুদের ভাইরাল জ্বরের এক অন্যতম কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার।

7. সরিষার তেল এবং রসুনের মালিশ

সরিষার তেল এবং রসুন যখন মিশ্রিত হয় তখন আদার মতই ঘাম সৃষ্টি করতে এবং বিষাক্ত পদার্থকে দূর করতে সহায়তা করার কার্যকর উপাদান হয়ে ওঠে।

  • মালিশের এই উপাদানটি প্রস্তুত করতে 2 টেবিল চামচ সরিষার তেল নিন এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ত্রিশ সেকেন্ড ধরে গরম করুন।
  • এর সাথে এক চা -চামচ রসুনের পেস্ট যোগ করুন এবং ভালভাবে মেশান। উত্তাপ মূলত তেলের সাথে পেস্টটিকে মিশ্রিত করতে সহায়তা করে।
  • এবার,মিশ্রণটি প্রায় 2 মিনিট রেখে দিন যতক্ষণ না সেটি ঘরের তাপমাত্রায় ফিরে আসে।

এখন, এই মিশ্রণটি দিয়ে আপনার শিশুকে মালিশ করুন, বিশেষ করে তার বুক, পিঠ, ঘাড়, হাতের তালু এবং পায়ের চেটোয়।

মালিশটিতে যেহেতু একটি শিথিলকারক প্রভাব রয়েছে, তাই এই চিকিৎসাটি আপনার শিশুর ঘুমের ঠিক আগে করার পক্ষে আদর্শ।

8. ডিমের সাদা অংশ

ডিমের সাদা অংশগুলি হল ডিমের প্রোটিন যা কুসুমকে পুষ্ট করতে সহায়তা করে। এর স্বতন্ত্র আঠালো বৈশিষ্ট্য এটিকে তাপের একটি কার্যকর শোষণকারী করে তোলে, কারণ এটি শুকিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তার চারপাশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপীয় শক্তি শোষণ করে।

  • একটি ডিমের সাদা অংশ থেকে কুসুমটিকে আলাদা করুন এবং ডিমের সাদা অংশটিকে পুরোপুরি ভালভাবে ফেটান, যতক্ষণ না এটি মসৃণ হয়ে যায়।
  • ফেটানো ডিমের সাদা অংশে দুটি ছোট ওয়াশক্ল্যাথ ডুবিয়ে রেখে প্রায় এক মিনিট ভিজতে দিন।
  • এবার আপনার সন্তানের পায়ের পাতার চারপাশে ভিজিয়ে রাখা ঐ ওয়াশক্লথগুলি আলতো করে জড়িয়ে রাখুন এবং সেগুলিকে যথাস্থানে ধরে রাখতে আলগা মোজা পরিয়ে সেই জায়গাটি ঢেকে দিন।
  • এটি প্রায় এক ঘন্টা রেখে দিন।

9. লেবু এবং মধু

লেবু এবং মধু উভয়ই শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী উপাদান।

  • লেবুর রসের সাথে কিছুটা মধু (লেবু চিপে বের করা খাঁটি রস কিন্তু জল মিশ্রিত তরল নয়)এবং অর্ধেক চা-চামচ আদা গুঁড়ো মিশ্রিত করুন।
  • আপনার শিশুকে এক চা চামচ এই মিশ্রণটি দিনে দুবার করে খাওয়ান।

কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ

বাচ্চাদের জ্বর সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। আপনার সন্তানের জ্বর সামলানোর সময় আপনার মনে রাখা দরকার এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে দেওয়া হল।

  • শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়ার মতো বহিরাগত জীবাণুগুলির সাথে লড়াই করে তখন জ্বর আসে। শরীরের এই যুদ্ধ করার ফলে, প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা আমরা “জ্বর” হিসাবে দেখি।
  • মনে রাখবেন যে জ্বরে আক্রান্ত হওয়া মানব দেহের বিকাশের একটি প্রাকৃতিক অঙ্গ কারণ এটি যতবার হয়; শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা তত শক্তিশালী হয়। জ্বর কোনও গুরুতর স্বাস্থ্যগত সমস্যার তাৎক্ষণিক লক্ষণ নয়, তবে যখন তাপমাত্রা খুব বেশি বেড়ে যায় বা অন্য লক্ষণগুলির সাথে আসে, তখন তা হতে পারে।
  • 12 সপ্তাহের কম বয়সের শিশুর জ্বর সর্বদা গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত, তবে 3 মাসের চেয়ে বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে 38 ডিগ্রী সেলসিয়াস (100.4 ডিগ্রী ফাঃ) এর চেয়ে কম জ্বর হলে, তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না যদি না সাথে অন্যান্য লক্ষণ থাকে।
  • আপনার বাচ্চা যদি উচ্চ তাপমাত্রার সাথে সাথে যেকোনও ব্যাপারে ঢিলামি, অলসতা প্রকাশ করে এবং বমি, ডায়রিয়া, অনুপযুক্ত খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলি প্রদর্শন করে থাকে তবে আপনাকে আপনার ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে।
  • শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে শিশুটিকে নিজের নির্ধারিত ওষুধ খাওয়াবেন না। 6 মাসের কম বয়সের বাচ্চাদের জন্য আইবুপ্রোফেন অনিরাপদ কারণ এটির ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত আইবুপ্রোফেন সেবন হজম শক্তি এবং কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
  • ওটিসি ওষুধের ডোজ সম্পর্কে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। বিশেষত বাচ্চাদের জন্যই তৈরি কিছু হালকা ওষুধ আজকাল পাওয়া যায়। অ্যাসিটামিনোফেন হল শিশুদের জন্য তৈরী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহ-বিরোধী ওষুধগুলির মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ।
  • আমাদের মধ্যে চালিত ভয়কে দূরে সরিয়ে দেওয়া আমাদের পক্ষে সহজ হয়ে উঠতে পারে। কখনও কখনও, সাধারণভাবে মনে হওয়া জ্বর আসলে জ্বরই নয় বরং অতিরিক্ত পোশাক পরার কারণে বা গরম ঘরের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দেহের তাপমাত্রাও বেড়ে থাকতে পারে। 36 থেকে 38 ডিগ্রী সেলসিয়াস (97 – 104 ডিগ্রী ফাঃ) এর মধ্যে যে কোনও তাপমাত্রাই উচ্চ হলেও সেটি মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার সীমার মধ্যেই পড়ে।
  • পারদ ভরা থার্মোমিটারগুলি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলি আপনার এবং আপনার বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক।
  • আপনার শিশুর দেহে কোনও থার্মোমিটার ব্যবহার করার আগে এটি একটি জীবাণুনাশক বা অ্যালকোহল দিয়ে পরিষ্কার করুন এবং শীতল জলে ধুয়ে ফেলুন।
  • রেক্টাল বা মলদ্বারের থার্মোমিটার ব্যবহার করার সময়, আপনার বাচ্চাকে আপনার হাঁটুর উপর মুখ নিচের দিক করে শোওয়ান। এটিকে তৈলাক্তকরণের জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি ঘষুন। এটি আপনার শিশুর পায়ুপথের মুখে ½ থেকে 1 ইঞ্চি পর্যন্ত প্রবেশ করান এবং এটিকে আপনার দুটি আঙ্গুলের মাঝে আলতো করে ধরে রাখার সময় শিশুর পশ্চাদদেশ আপনার হাত দিয়ে ধরে রাখুন যতক্ষণ না বীপ শব্দ হয় যেটি তাপমাত্রা স্থির হওয়াকে নির্দেশ করে।
  • আপনি যদি ওরাল বা মুখে থার্মোমিটার ব্যবহার করেন (যেটি বগলের নীচে রাখা হয়), তাহলে সতর্কতার সাথে কাজ করে রিডিং-এর সাথে এক ডিগ্রী যোগ করুন।
  • অন্যান্য ধরনের থার্মোমিটারগুলি যেমন কপাল, রগ এবং কানের থার্মোমিটারগুলি সুবিধাজনক হলেও ভরসাযোগ্য নয় বলে জানা যায়, এগুলি এমন রিডিং দেয় যা কখনও কখনও কয়েক ডিগ্রী কমবেশি থাকে। সুতরাং এগুলি সুপারিশ করা হয় না।
  • জ্বর 3 মাসের কম বয়সের বাচ্চাদের জন্য মারাত্মক হলেও এগুলি বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হওয়ার চেয়ে ভীতিকর বেশি। জ্বর হল প্রাকৃতিক জিনিস এবং আপনার বাড়ন্ত শিশুর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে, তাই এটিকে অবশ্যই জীবনপথের অংশ হিসাবে নিতে শিখুন।

পিতা বা মাতা হিসাবে, আপনার বাচ্চাকে জ্বরের সাথে লড়াই করতে দেখা উদ্বেগজনক হতে পারে। যদি আপনার শিশুর জ্বর কমতে না চায় তবে তাড়াতাড়ি তাকে আপনার বিশ্বস্ত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান।