হাঁটতে শেখা শিশু (1-3 বছর)

শিশুদের দাঁত বেরনো – লক্ষণ ও প্রতিকার

একটি শিশুর ছোট্ট থেকে একটি বড় বাচ্চা হওয়ার যাত্রায় অনেক ছোট ছোট মাইলফলক থাকে, কিছু তার আচরণে সম্পর্কিত, কিছু তার বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। গড়াগড়ি দেওয়া শেখা, নিজেকে সোজাভাবে ধরে রাখা এবং প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া এমন কয়েকটি প্রধান বিষয় যা শিশুকেও বেশ আনন্দিত করে। তবে এর মধ্যে আরও একটি মাইলফলক, যা সন্তানের জীবনে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়কে চিহ্নিত করে, তবে এটি ছোট্টটির জন্য বেশ সুখের সময় হয় না। শিশুর প্রথম দাঁত বেরনো বাবামায়ের জন্য আনন্দের কারণ হতে পারে, কিন্তু শিশুদের পক্ষে এটি দুঃস্বপ্নের চেয়ে কম কিছু নয়!

দাঁত গজানো কী এবং হাঁটতে শেখা শিশুদের মধ্যে এটি কি সাধারণ?

একটি হাঁটতে শেখা শিশুর জন্য, সাধারণত, এটি হল পেষক দাঁত যা এখনও বেরোচ্ছে। অন্যান্য দাঁতগুলি সাধারণত একটি শিশু হাঁটতে শেখার সময়ের মধ্যেই ইতিমধ্যে বেরিয়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে, শিশুর যখন প্রসবের পর ২৪ সপ্তাহ সম্পন্ন হয়, সেই সময়ের কাছাকাছি তার দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়া শুরু হয়, যদিও কিছু শিশুদের দেরীতে দাঁত বেরনোর কারণে এই সময়কালটি পরিবর্তিত হতে পারে। দাঁত মাড়ির নরম কোমল ত্বক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের ধাক্কা দেয়, সেই কারণে পুরো প্রক্রিয়াটি শিশুদের জন্য বেশ বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। অনেক শিশু এই প্রক্রিয়া জুড়ে বেশ বিরক্ত এবং উদ্বেগজনক হয়, কিছু বাবামায়েদের মনে হয় যে তাদের শিশু অন্য কোন সমস্যায় ভুগছে। তবে এগুলি দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়ার সাধারণ লক্ষণ এবং অস্বস্তি কিছু সময়ের মধ্যে ম্লান হয়ে যায়।

শিশুদের দাঁত বেরনোর সাধারণ লক্ষণ প্রতিকার

যখন আপনার শিশুর দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়াটি শুরু হয়, তখন এটি বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠবে, যেহেতু এটি সাধারণত অসংখ্য লক্ষণ এবং বেশ কিছু ব্যথা সহ হয়ে থাকে। কিছু শিশুদের দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়ার অস্বস্তির পরিচালনা করতে কয়েকটি প্রতিকারের বিকল্প বেছে নেওয়া যায়, এইভাবে পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরও সহজ করে তুলতে এবং যে কোনও জটিলতা সৃষ্টি আটকাতে সহায়তা করে।

. অত্যধিক ঘ্যানঘ্যান করা

মাড়ি এবং মুখের ব্যথার সংবেদনগুলি বেশ বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে, যার ফলে শিশুরা প্রতিটি জিনিস সম্পর্কে ঘ্যাঘ্যানে ও খুঁতখুঁতে হতে পারে। বর্ধিত সময়কালের জন্য এই রকম শিশুর যত্ন নেওয়া আপনার পক্ষেও যথেষ্ট বিরক্তিকর হতে পারে, আপনার শিশুটি শান্ত হতে অস্বীকার করলে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন।

প্রতিকার

ঘ্যানঘ্যানেভাব প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল আপনার সন্তানকে প্রচুর ভালবাসা, তার যত্ন নেওয়া এবং তার সাথে প্রচুর সময় ব্যয় করা। এটি তার নিজস্ব সময় নিতে পারে এবং খেলা বা গল্প অথবা অন্যান্য কিছু বিভ্রান্তির বিকল্প বেছে নিয়ে ব্যথা থেকে তার মনোযোগ সরানো যেতে পারে। তার এবং নিজের প্রতি ধৈর্যশীল হওয়া এই পর্যায়ে আপনাদের দুইজনের উপকারের জন্য মূল চাবিকাঠি।

. ঘুমের মাঝখানে জেগে ওঠা

কখনও কখনও, দাঁতে ব্যথা একটি মৃদু নিস্তেজ মাত্রায় হয়ে যায়, যা আপনার শিশুর মধ্যে দীর্ঘ সময়ের জন্য থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে, এর সাথে কখনও কখনও নির্দিষ্ট তীক্ষ্ণ ব্যথাও থাকতে পারে যা আপনার শিশুকে খুবই বিরক্ত করে। এমনকি রাতে এমনও ঘটতে পারে, যখন আপনার শিশুটি শান্তভাবে ঘুমাচ্ছে এবং মুখের তীব্র ব্যথায় কাঁদতে কাঁদতে জেগে উঠছে। এরপরে যা ঘটে তা হল অবিরাম কান্নাকাটি, ঘুমে বিরক্ত এবং আবার ঘুমাতে ব্যর্থ হওয়া।

প্রতিকার

কিছু শিশুদের এখনই তাৎক্ষণিক মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তারা কয়েক মিনিটের জন্য কাঁদতে পারে এবং আবার ঘুমিয়ে যেতে পারে। যদি এটি না ঘটে, তবে আপনার হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। তার প্রিয় গান গুনগুন করা বা আলতো করে তার শরীরে চাপড় দেওয়া যতক্ষণ না সে আবার ঘুমিয়ে যায়।

. কোন কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকা

মুখে অনবরত হওয়া ব্যথা শিশুদের খাওয়ার প্রয়োজন বা কিছু দিনের জন্য ক্ষুধাও কমাতে পারে। সে আপনার স্তনে দীর্ঘক্ষণ স্তন্যপান করতে পারে না, এমনকি স্তন থেকে সরে যেতে পারে। বোতল, স্ট্র বা তার পছন্দসই সিপার ব্যবহার নাও করতে পারে, যেহেতু চোষার কাজটি তার ব্যথাকে ট্রিগার করতে পারে।

প্রতিকার

তাপমাত্রার পরিবর্তন আপনার শিশুকে আগ্রহী করার পাশাপাশি মাড়ির যন্ত্রণা থেকেও কিছুটা আরাম সরবরাহ করতে পারে। এক্ষেত্রে ঠান্ডা করা বুকের দুধ বা কোন নরম খাবার আপনার শিশুর জন্য সেরা হবে। যদি আপনার শিশুটি কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করে, তবে তাকে কিছু হিমায়িত দই, চটকানো কলা বা হিমায়িত ফলের অন্যান্য আইটেমগুলি দিন।

. অবিরত গাল ঘষা

দাঁত বেরনোর সময় মাড়ির ব্যথার ফলে হওয়া সংবেদনগুলি গালেও স্থানান্তরিত হতে পারে। এগুলি অভ্যন্তরীণভাবে চুলকায় বা অদ্ভুত বোধ হতে পারে, যার ফলে আপনার শিশুর মন সেই দিকে টানতে পারে, সে এমনভাবে গাল ঘষতে পারে যেন সে কোন কিছু ব্রাশ করার চেষ্টা করছে।

Related Post

প্রতিকার

আপনার শিশুকে কিছু টিথিং বিস্কুট দেওয়া এই ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। ব্যথা প্রশমিত করার জন্য মাড়ি বা গালে লাগানোর জন্য কোন ধরণের জেল বা ক্রিম ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন। এগুলি শিশুদের জন্য নিরাপদ নয় এবং মারাত্মক ফলাফল হতে পারে।

. চরম অস্বস্তিতে কান টানা

কান, নাক এবং গলা সবই আমাদের দেহের সাথে সংযুক্ত। এক অংশে যে কোন ধরণের বিড়ম্বনার ফলে অন্য অংশেও প্রভাব পড়তে পারে। মাড়ির ব্যথা কানে অদ্ভুত সংবেদন সৃষ্টি করতে পারে বা এমনকি কানের চুলকানির কারণ হতে পারে, যার উপশম করার জন্য আপনার শিশু ক্রমাগত তার কান টানতে পারে।

প্রতিকার

আপনার সন্তানের হাতকে খেলনা দিয়ে বা ঠান্ডা চিউইং রিংগুলি ব্যবহার করে ব্যস্ত রাখুন, যা মাড়ির ব্যথা কিছুটা উপশম করতে পারে। যদি টানা গুরুতর হয় তবে ডাক্তারের পরামর্শের পরে অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করাও সহায়তা করতে পারে। তার কান পরীক্ষা করে দেখুন যেহেতু কানের মধ্যে সংক্রমণেরও সম্ভাবনা থাকে।

. তার দৃষ্টিতে যা আসে সমস্ত কিছু চিবানো

দাঁতগুলি মাড়ির ত্বকে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করে যখন তারা শিকড় থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়াস করে। এই চাপটির প্রতি শিশুরা পাল্টা চাপ প্রয়োগ করে এবং হাতের কাছে যা কিছু পায় তা চিবানোর দ্বারা এগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে।

প্রতিকার

চিউইং রিংগুলি এক্ষেত্রে আপনার সেরা বন্ধু, তেমনই কাজ করে ঠাণ্ডা বরফ কিউব বা এক চুমুক ঠান্ডা জল। নিশ্চিত করুন যে সে ধারালো বস্তুগুলিকে চিবিয়ে না ফেলে, যেহেতু এগুলি মাড়ির ক্ষতি করতে পারে এবং তার মধ্যে হেমোটোমা বা সিস্টের কারণ হতে পারে।

. গালের ত্বকে জ্বালা

বেশিরভাগ সময়, দাঁত বেরনোর সময় অতিরিক্ত লালা বের হয়, যা মুখের চারপাশে এবং গালে দীর্ঘ ক্ষনের জন্য ভেজা এবং আর্দ্র রাখতে পারে। এটি বারবার মোছার কারণে সেখানে র‍্যাস বা জ্বালা হতে পারে।

প্রতিকার

মৃদু ওয়াইপ বা একটি নরম কাপড় ব্যবহার করুন এবং ঘষে মোছার পরিবর্তে ত্বককে হালকাভাবে শুকিয়ে দিন। যদি গুরুতর হয়ে ওঠে তবে র‍্যাসের চিকিৎসার জন্য শিশুবান্ধব মলম ব্যবহার করুন।

দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়া কতটা স্থায়ী হয়?

দাঁত বেরনোর ব্যথায় শিশুদের কী দিতে হবে তা একবার জানার পর আপনি ভাবতে পারেন যে এই পর্বটি কত দিন স্থায়ী হবে। সাধারণত, সামনের দাঁত (উপরের এবং নীচের উভয় দিকের) .৫ বছর ধরে বেরোয়, তার পরে অন্যান্য দাঁত ধীরে ধীরে কয়েক বছর অবধি বেরোতে থাকে। ক্রমটি বিভিন্ন শিশুদের মধ্যে আলাদা হতে পারে, তবে প্রথম কয়েকটি দাঁত বেরনোর পর ব্যথা কমে যায়।

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে

শিশুদের দাঁত বেরনোর সময় হওয়া জটিলতাগুলি মধ্যে সাধারণত হল দাঁতগুলি সঠিকভাবে মাড়ি ভেদ করে বেরোতে ব্যর্থ হয়, তখন আপনার ডাক্তারের কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও ভাল ধারণা পাওয়া দরকার।

  • কিছু শিশু হাইপোডোনটিয়া নামক একটি পরিস্থিতিতে ভোগে, যেখানে একটি শিশুর প্রাথমিক দাঁত সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকে। বিরল ক্ষেত্রে, একটি শিশুর কোন দাঁতই না বেরোতে পারে, তাকে অ্যানোডোনিয়া বলে।
  • দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়া চলাকালীন, আপনার শিশু মুখে বোতল বা এমনকি আপনার স্তনবৃন্ত নিয়ে ঘুমোতে পছন্দ করতে পারে। এর ফলে দুধটি একটি দীর্ঘ সময় ধরে নতুন দাঁতগুলির সংস্পর্শে আসে, যার ফলে খুব অল্প বয়সে দাঁতের ক্যাভেটি এবং ক্ষয় তৈরি হয়।

দাঁত বেরনোর প্রক্রিয়াটি একটি ভাল লক্ষণ যা আপনার সন্তানের বিকাশ একটি সুস্থ পথে চলছে তা বোঝায়। এটির সাথে যে ব্যথা হয় তার অনেক উপায়ে যত্ন নেওয়া যেতে পারে, পাশাপাশি এটি নিশ্চিত করা যায় যে দাঁত বেরনোর প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াটিতে কোনভাবেই বাধা সৃষ্টি না করে। যদি শিশুদের দাঁত বেরনোর সময় জ্বর হয়, তবে আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা ভাল এবং প্রয়োজনে ওষুধের জন্য পরামর্শ নেওয়া ভাল।

Share
Published by
প্রিয়াংকা কুণ্ডু
Tags: Teething