শিশুদের মাশরুম দেওয়া-উপকারিতা এবং রেসিপিগুলি

শিশুদের মাশরুম দেওয়া-উপকারিতা এবং রেসিপিগুলি

যদিও আপনি এগুলিকে সুপার মার্কেটের উৎপাদন বিভাগে সবজি এবং ফলগুলির মাঝে কোথাও মিলিয়ে মিশিয়ে থাকতে দেখতে পেতে পারেন,মাশরুমগুলি কিন্তু তাই বলে সেগুলির কোনওটির মধ্যেই পড়ে না!এগুলি হল এক ধরনের ছত্রাক।এগুলি কোনও উদ্ভিদ অথবা প্রাণী জগতের অন্তর্ভূক্ত নয়।

আপনি কি কোনও শিশুকে মাশরুম দিতে পারেন?

শিশুদের মাশরুম খাওয়ানো উচিত কি উচিত নয় এ বিষয়ে কোনও বাধা ধরা রীতিনীতির অস্তিত্ব বা নির্দেশিকা নেই।

কোন বয়সে একটি শিশু মাশরুম খেতে পারে?

যদিও এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে,তবে এ বিষয়ে চিন্তাধারার দু’টি বিস্তৃত ধারা রয়েছে।এক পক্ষের মতে,শিশুদের মাশরুম দেওয়া শুরু করা স্থগিত রাখা উচিত যতদিন না তারা কমপক্ষে 10 মাস বা তার বেশি বয়্সী হয়ে থাকে।আবার অন্য শিবিরটি বিশ্বাস করেন যে,মাশরুম খাওয়ানো শুরু করার জন্য ছয় মাস বয়সই যথেষ্ট।

উভয় ক্ষেত্রেই,প্রত্যেকেই একমত যে মাশরুমগুলি রান্না হওয়া উচিত এবং বাচ্চাদের সেগুলি পরিবেশন করার পূর্বে খুব ভালভাবে রান্না করে নেওয়া দরকার কারণ এগুলির মধ্যে ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলি রান্না প্রক্রিয়াটি চলাকালীন ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাবে।

মাশরুমের পুষ্টিমূল্য

মাশরুমের পুষ্টিমূল্য

 

পুষ্টিকর উপাদান পরিমাণ(প্রতি 1 কাপে অথবা 78 গ্রামে)
ক্যালোরি 15.4
প্রোটিন 2.2 গ্রাম
খাদ্যগত তন্তু .7 গ্রাম
পটাসিয়াম 223 মিলিগ্রাম
ফসফরাস 60.2 মিলিগ্রাম
ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড 97.3 মিলিগ্রাম
শর্করা 1.2 গ্রাম

শিশুদের জন্য মাশরুমের উপকারিতাগুলি

মাশরুম খাওয়ার স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি হল এই খাদ্যটির নিজস্ব প্রকৃতির কারণে এটির বৈচিত্র্যের মতই অনন্য।

১. লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে

মাশরুম হল সেই সকল বিরল খাদ্যগুলির মধ্যে একটি যেটি লিভারকে বিষমুক্ত হতে সহায়তা করে।এগুলি লিভারকে ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।এগুলি বিশেষ করে ছোট শিশু এবং অল্প বয়সী বাচ্চাদের জন্য ভীষণ ভাবে সহায়ককারী কারণ এগুলি হেপাটাইটিস B এবং জন্ডিসের মত রোগগুলি যেগুলি লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে থাকে সেগুলির ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হয়।

২. ভিটামিন D

বেশিরভাগ শাকাহারীদের খাদ্যেই পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন D থাকে না,ভিটামিন D দুগ্ধজাত পণ্য এবং সূর্যালোক থেকে পাওয়া যেতে পারে।তবে ভারতীয়রা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে বসবাসকারী বলে অধিকাংশ পিতা-মাতাই শীতকাল ব্যতীত তাদের সন্তানকে সরাসরি সূর্যালোকে প্রকাশ করাকে এড়িয়ে চলেন।

৩. আয়রণ

যদিও অ-নিরামিষাশীদের খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ থাকে,তবে নিরামিষাশীদের ডায়েটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সবুজ শাক-সবজি এবং বাদাম অন্তর্ভূক্ত থাকে যেগুলি তাদের আয়রণ সরবরাহ করে থাকে।আয়রণ হল হিমোগ্লোবিনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেটি লোহিত রক্ত কণিকায় পাওয়া যায় এবং নতুন রক্ত কোষগুলি গঠণের জন্য প্রয়োজন হয়।

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

মাশরুমে রয়েছে জৈব রাসায়নিক পদার্থ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে।তিন মাস বয়সের পর শিশুর স্বাস্থ্যের অনাক্রম্যতা হ্রাস পাওয়ার কারণে(মায়ের দ্বারা প্রতিস্থাপিত রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাটি তিন মাসের জন্য স্থায়ী হয়ে থাকে)রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রিত হলে তা বাচ্চাকে সুস্থ থাকতে এবং বিভিন্ন রোগ ব্যাধি থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার হতে সহায়তা করে থাকে।

৫. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়াটি চলাকালীন সময়ে উপজাত দ্রব্য হিসেবে গঠিত হওয়া “ফ্রী র‍্যাডিক্যাল” বা “মুক্ত মৌলগুলি” থেকে দেহকে মুক্ত করতে সহায়তা করে থাকে।এই মুক্ত মৌলগুলি দেহস্থ কোষগুলির এবং DNA এর ক্ষতির কারণ হতে পারে।অন্য কারণটি হল এই যে পরিপূরক হিসাবে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি গ্রহণ শরীরের দ্বারা যতটা এটি হতে পারত ঠিক ততটা দক্ষতার সাথে ব্যবহৃত হতে পারে না,অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি সাধারণত খাবারের মধ্যে থেকেই গৃহীত হয়ে থাকে।

সঠিক মাশরুম চয়নের পরামর্শগুলি

  • সর্বদা তাজা মাশরুমগুলিই ক্রয় করুন।যদি আপনি কোনও দোকান থেকে প্যাকেটজাত মাশরুম ক্রয় করে থাকেন,তবে সেই প্যাকেটটিকেই তুলে নিন যেটি সেই দিনেই সরবরাহ করা হয়েছে।
  • ভাল মাশরুম সবসময় শুকনো হয় এবং তাতে কোনরকম ভাঙ্গা ফাটা থাকে না।
  • মাশরুমের “গিল” বা ফুলকাগুলি(মাশরুমের টুপির ভিতরের দিকটি)বাদামী বা গোলাপী হওয়া উচিত।মাশরুমের টুপির ভিতরের অংশটি কালো হয়ে গেলে সেই ধরনের কোনও একটিও মাশরুমকে বাছে নেবেন না।
  • যদি সেগুলি প্লাস্টিকের মধ্যে প্যাক করা না থাকে তবে আপনি সেগুলির ঘ্রাণ নিতে সক্ষম হবেন।সেগুলির মধ্যে সামাণ্য গন্ধ থাকাও উচিত নয়।যদি সেটি থেকে টকটক বাসি হয়ে যাওয়ার মত গন্ধ ছাড়ে,সেটিকে নেবেন না।
  • টিনজাত বা ক্যানজাত মাশরুমগুলিকে এড়িয়ে চলুন কারণ এগুলির মধ্যে প্রিজারভেটিভ থাকবে।

কীভাবে মাশরুমগুলিকে মজুত করে রাখবেন এবং প্রস্তুত করবেন?

একটি রেফ্রিজেরাটরের মধ্যে মাশরুমগুলিকে নিরাপদ ভাবেই এক সপ্তাহের জন্য সংরক্ষণ করে রেখে দেওয়া যেতে পারে।

এগুলিকে একটি কাগজের ব্যাগের মধ্যে করে অথবা একটি ট্রের উপরে রেখে তার উপর একটি কাগজের তোয়ালে ঢাকা দিয়ে ফ্রীজের ভিতরে সংরক্ষণ করুন।তবে সেগুলিকে কোনও বায়ু নিরুদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যাগের ভিতরে রাখবেন না।

মাশরুমগুলিকে যখন প্রস্তুত করবেন,সেগুলিকে জলের মধ্যে ভিজিয়ে রাখবেন না,কারণ এর ফলে এগুলি তার নিজস্ব স্বাদ ও গন্ধ হারাবে।সাধারণভাবে দ্রুততার সহিত সেগুলিকে জল দিয়ে ধুয়ে তুলে নিন অথবা এমনকি আবার আপনি সেগুলিকে একটি ভিজে কাপড় দিয়ে ভালভাবে মুছেও নিতে পারেন।

ছোট শিশুদের জন্য মাশরুমজনিত অ্যালার্জির ঝুঁকিগুলি

অধিকাংশ খাবারগুলির মতই মাশরুমেও খুব সামাণ্যই অ্যালার্জির সম্ভাবনা রয়েছে। মাশরুমের প্রতি অ্যালার্জির পরিসংখ্যান যদিও পরিষ্কারভাবে জানা যায় না তবে অনুমান করা হয় এটি মোটামুটি প্রায় 1% এর মত।

যাইহোক,তবে কাঁচা মাশরুমগুলি বীজগুটিকাগুলিকে মুক্ত করতে পারে,এবং পরাগ রেণুর অ্যালার্জিকে বৃদ্ধি করে যা শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলে।এই ধরনের অ্যালার্জিগুলি খুব বেশি সাধারণ হয়ে থাকে।

আপনার সোনার জন্য মাশরুমের সহিত সুস্বাদু রেসিপিগুলি

মাশরুমগুলি সাধারণত একটি অতিরিক্ত পার্শ্ব খাদ্যপদ হওয়ার কারণে, যাতে সেটা বাদ না পরে তাই কীভাবে এটিকে একটি শিশুর খাদ্যতালিকায় অর্ন্তভূক্ত করা যেতে সে সম্পর্কে আলচিত হল।

১. পিউরি

পিউরি

একটি শিশুর ডায়েটে মাশরুমের পরিচয় করানোর একটি চমৎকার উপায় হল শিশুদের জন্য মাশরুমের পিউরি প্রস্তুত করা।

আপনার কি কি প্রয়োজন হবে

  • বাটন মাশরুম (সূক্ষ্মভাবে কুঁচানো)-300 গ্রাম
  • পিঁয়াজ (সূক্ষ্মভাবে কুঁচানো)-1 টি ছোট
  • আলু(ঘনকাকারে কাটা)-150 গ্রাম
  • ক্রীম চীজ-50 গ্রাম
  • মাখন
  • জল-এক কাপের 3/4 অংশ

প্রস্তুতির ধাপগুলি

  • একটি কড়াই গরম করে তার মধ্যে কিছুটা মাখন নিয়ে গলিয়ে নিয়ে তার সাথে পিঁয়াজ এবং মাশরুম কুঁচিগুলিকে সাঁতলাতে থাকুন যতক্ষন না সেগুলি ভাজা ভাজা হয়ে ওঠে।(মাঝারি আঁচে)
  • এবার এর সাথে আলুর টুকরোগুলি এবং জল যোগ করে পুনরায় সেটিকে মোটামুটি প্রায় 10 মিনিটের জন্য রান্না করুন।
  • একবার রান্না হয়ে গেলেই মিশ্রণটিকে মিক্সচার গ্রাইন্ডারের মধ্যে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।
  • এবার এর সাথে ক্রীম চীজ যোগ করে আরও একবার ব্লেন্ড করে নিন।

২.বাটার মাশরুম

বাটার মাশরুম

আপনি আপনার সন্তানের প্যালেটের জন্য প্রয়োজনীয় রসুন,গোলমরিচ,ভেষজ এবং নুন এর পরিমাণ কমাতে পারবেন।

আপনার কি কি প্রয়োজন হবে

  • বাটন মাশরুম(মিহি করে কুঁচানো)-200 গ্রাম
  • রসুন(কুঁচানো)-10 গ্রাম
  • মাখন- বড় 2 চামচ
  • ভেষজ(শুকনো অথবা তাজা ধনে পাতা,পার্সলে,তুলসী বা ওরেগানো)-1 চা-চামচ (শুকনো) বা 2 চা চামচ(তাজা মিহি করে কুঁচানো)
  • গোল মরিচ-1/2 চা-চামচ
  • নুন- স্বাদমত

প্রস্তুতির ধাপগুলি

  • অল্প আঁচে মাখন গলিয়ে নিয়ে তার মধ্যে রসুন গুলো ভাজুন।
  • যখন রসুন ভাজার গন্ধ ছাড়বে তখন তাতে মাশরুম কুঁচিগুলো দিয়ে দিন এবং অনবরত সাঁতলাতে থাকুন।
  • মাশরুম থেকে প্রচুর জল বের হতে থাকবে যতক্ষণ না জল শুকিয়ে যায় ততক্ষণ আপনি রান্না করতে থাকুন কিন্তু দেখবেন মাশরুম গুলো যেন জলসিক্ত থাকে।
  • এখন গোল মরিচ, ভেষজ এবং নুন মেশান এবং গ্যাসের আঁচ নিভিয়ে দিন।

এই পদটি রুটি চাপাটি,সাদা ভাত ইত্যাদি দিয়ে খেতে পারেন।যদি আপনি সলটেড বা লবণযুক্ত মাখন দিয়ে এটি বানান তাহলে শেষ ধাপে নুন কম যোগ করবেন।

৩. মাশরুম পোলাও

মাশরুম পোলাও

পোলাও হল আপনার বাচ্চার জন্য একটা দারুন চিত্তাকর্ষক খাবার যা আপনি মাশরুম দিয়ে বানাতে পারেন।

আপনার কি কি প্রয়োজন হবে

  • বাটন মাশরুম (কুঁচানো)-200 গ্রাম
  • তেল-বড় 2 চামচ
  • বাসমতী চাল-200 গ্রাম
  • পিঁয়াজ(কুঁচানো)-1টা বড় মাপের
  • জল-1.75 কাপ
  • লেবুর রস- 1চা-চামচ
  • রসুন-10 গ্রাম
  • আদা-10 গ্রাম
  • কাঁচা লঙ্কা-1 টি
  • মশলা (1/2 চা-চামচ জিরা,1-ইঞ্চি লম্বা দারুচিনি,2 টি এলাচ,2 টি লবঙ্গ,2 টি তেজ পাতা)

প্রস্তুতির ধাপগুলি

  • চাল ধুয়ে নিন এবং আধ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
  • প্রেসার কুকারে তেল গরম করুন আর তাতে মশলা গুলো দিয়ে সাঁতলে নিন।
  • মশলা গুলো ভাজা ভাজা হতে শুরু করলে তাতে কুঁচানো পিঁয়াজগুলি দিন এবং স্বর্ণাভ বাদামী রঙের হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
  • রসুন, আদা, কাঁচা লঙ্কা গুলো থেঁতো করে নিয়ে পিঁয়াজের সাথে মিশিয়ে দিন।
  • এর সাথে মাশরুম যোগ করুন এবং 5 মিনিট ধরে রান্না করুন।
  • এবার এতে ভিজিয়ে রাখা জল ঝরানো চালগুলি যোগ করুন এবং বাকি সব কিছু এর সাথে মিশিয়ে দিন।
  • জল এবং লেবুর রস যোগ করুন এবং নুন দিন স্বাদমত।
  • 2-3 টি হুইসল পড়া পর্যন্ত কুকারের ঢাকা বন্ধ করে রান্না করুন ।

আপনার মাশরুম পোলাও তৈরী!আপনি ইচ্ছা করলে এটিকে ধনে পাতা দিয়ে গার্নিশ করে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারেন।