শিশুদের জন্য মাছ-কখন পরিচয় করাতে হবে,উপকারিতা এবং রন্ধনপ্রণালীগুলি

শিশুদের জন্য মাছ-কখন পরিচয় করাতে হবে,উপকারিতা এবং রন্ধনপ্রণালীগুলি

মাছ হল প্রোটিনের অন্যতম একটি অত্যন্ত শক্তিশালী উৎস এবং এছাড়াও এটি হল আবার একটি স্বাস্থ্যকর অনিরামিষাশী প্রোটিনেরও উৎস।আপনি যদি একজন অনিরামিষাশী হয়ে থাকেন,এই শক্তিশালী স্বাস্থ্যকর খাদ্যটি আপনার সন্তানের ডায়েটে অবশ্যই রাখা উচিত তবে এটি করার পূর্বে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে কোন মাছটি আপনার বাচ্চার জন্য ভাল।

ছোট শিশুদের জন্য মাছের উপকারিতাগুলি

আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধির জন্য মাছের উপকারিতাগুলি নিম্নরূপঃ

  • এটি প্রোটিনের একটি শক্তিশালী উৎস।
  • এটি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ,সুতরাং শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য সবচেয়ে সেরা মাছটিকে নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • মাছমাংস হৃদপিণ্ডকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
  • এটি চোখের উন্নতিতে সহায়তা করে এবং সেগুলিকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
  • মাছ A,D,E এবং K এর মত ফ্যাটদ্রবণীয় ভিটামিনগুলির একটি দুর্দান্ত উৎস।

আপনার সন্তানের সাথে কখন মাছের পরিচয় করাবেন

মাছ হল আপনি আপনার সন্তানকে খাওয়াতে পারবেন এমন যেকোনও ধরনের শক্ত খাদ্যপদেরই অনুরূপ একটি খাদ্য উপাদান।এটিকে তার খাবারের সাথে পরিচয় করানো যেতে পারে তার 6 মাস বয়স অতিক্রম করার পর।তবে,বাচ্চার মাছে কোনওরকম অ্যালার্জি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেওয়া আবশ্যক।অ্যালার্জির ঝুঁকিগুলি যাতে হ্রাস করা যেতে পারে তার জন্য যদি আপনি আপনার বাচ্চার 8 মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত তার খাবারে মাছ যোগ করার জন্য অপেক্ষা করতে পারেন তবে সেটি এই ধরনের কোনও অ্যালার্জির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।আপনার বাচ্চা যদি ইতিমধ্যেই দানাশস্য এবং ঘরে প্রস্তুত অন্যান্য খাদ্যগুলি খাওয়া শুরু করে থাকে এবং সেগুলিতে তার অ্যালার্জির কোনও প্রতিক্রিয়া না হয়ে থাকে,তবে তার ডায়েটে মাছের সংযোজন করার ক্ষেত্রে হয়ত কোনও সমস্যার সৃষ্টি হবে না।যেকোনও ক্ষেত্রেই,কোনও রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া এবং খাদ্যজনিত অ্যালার্জি সংক্রান্ত কোনওরকম পারিবারিক ইতিহাস থেকে থাকলে তা তাঁকে জানানো সবসময়ের জন্যই সেরা সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে।

কীভাবে আপনার বাচ্চার সাথে মাছের পরিচয় করাবেন

যেকোনও নতুন খাদ্য উপাদানই আপনার ছোট্ট সোনার ডায়েটে খুব সাবধানতার সাথে শুরু করানো উচিত এবং শিশুটি সেটিকে ভালভাবেই গ্রহণ করেছে সেটিতেও নিশ্চিত হওয়া উচিত।শুরুতেই আপনার বাচ্চাকে একই সময়ে বিভিন্ন ধরনের মাছ খাওয়াবেন না।পরিবর্তে একই ধরনের মাছ খাওয়ানোর পর বরং লক্ষ্য করুন যে সেই মাছটির প্রতি আপনার বাচ্চার প্রতিক্রিয়া কিরূপ হয় এবং তারপরেই পরবর্তী অন্যধরনের মাছগুলি খাওয়ানোর দিকে অগ্রসর হন।সেদ্ধ মাছগুলি ছোট বাচ্চাদের হজমের জন্য সহজ,সুতরাং শিশুদের মাছ খাওয়ানোর সবচেয়ে সেরা উপায় হল সেগুলিকে হালকা করে ভেজে নেওয়া,অথবা বেক করে নেওয়া মাছগুলিও হল শিশুদের দেওয়ার জন্য অপর একটি ভাল বিকল্প,তবে সেগুলিকে ভালভাবে কাঁটা ছাড়িয়ে নিয়ে পিউরি আকারে প্রস্তুত করে নেওয়ার পরেই আপনার সোনার নিয়মিত খাবারের সাথে যোগ করুন। এছাড়াও আপনি আবার ম্যারিনেট হিসেবে হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করে মাছটিকে ভেজেও নিতে পারেন এবং আপনার সোনাকে সেটি খাওয়ানোর পূর্বে তার মধ্যস্থ কাঁটাগুলিকে ভালভাবে ছাড়িয়ে নেওয়া নিশ্চিত করুন।

শিশুদের মাছ দেওয়া শুরু করার সময় যে সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করতে হবে

আপনার বাচ্চার ডায়েটে মাছের পরিচয় করানোর সময় নিম্নলিখিত সাবধানতাগুলি অবলম্বনের সুপারিশ করা হয়ঃ

  • রান্না করার পূর্বে মাছটিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া নিশ্চিত করুন।
  • উচ্চ মারকারি উপাদান যুক্ত মাছগুলিকে এড়িয়ে চলুন
  • আপনার ছোট্ট সোনাটির জন্য কেবল তাজা মাছ ব্যবহার করাই নিশ্চিত করুন।
  • সুশির মত কাঁচা মাছের রেসিপিগুলি আপনার সোনার জন্য এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।

শিশুদের মাছ দেওয়া শুরু করার সময় যে সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করতে হবে
শিশুদের জন্য কোন মাছগুলি নিরাপদ?

উচ্চ প্রোটিন যুক্ত,কম মাত্রায় মার্কারি এবং অপেক্ষাকৃতভাবে আকারে বৃহৎ এমন ধরনের মাছই শিশুদের খাওয়ানোর জন্য সর্বোত্তম।বৃহৎ মাছের অর্থ হল বড় বড় কাঁটা এবং এটিই আপনার সোনার গলায় মাছের কাঁটা বিঁধে যাওয়ার কোনওরকম সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।একটি শিশুর খাওয়ার জন্য নিম্নলিখিত মাছগুলি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকেঃ

১. সার্ডিন

সাধারণত সার্টিন নামে পরিচিত এই মাছটি ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড,প্রোটিন,ভিটামিন D এবং ফসফরাসের একটি স্বাস্থ্যকর উৎস।এগুলিতে ভিটামিন D উচ মাত্রায় থাকার কারণে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের শোষণ বেশ সহজ হয় এবং হাড়কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে।

২. পমফ্রেট

এই মাছের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A,B-3,B-12,E এবং নিয়াসিন যেগুলি স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং বলিষ্ঠ পাচন তন্ত্রের জন্য একদম আদর্শ।এছাড়াও আবার পমফ্রেটের মধ্যে মার্কারি উপাদানটিও খুবই কম মাত্রায় থাকে।

৩. স্যালমন

আমাদের দেশে এই মাছটি ভারতীয় রাওয়া রূপে সহজলভ্য এবং এটি আপনার ছোট্ট শিশুটির খাদ্যে বেশ নিরাপদের সাথেই যোগ করা যেতে পারে।এর কম মার্কারিযুক্ত উপাদান এবং তুলনামূলক কম অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপকরণগুলির সহিত এই ভারতীয় রাওয়াগুলি আপনার বাচ্চাকে দেওয়া শুরু করার জন্য একটি আদর্শ মাছ হতে পারে।

কোন ধরনের মাছগুলি আপনার এড়িয়ে চলা উচিত?

শিশুর ডায়েটের কথা বিবেচনার সময় নিম্নলিখিত মাছগুলি এড়িয়ে চলা উচিতঃ

  • ম্যাকারেলঃ স্থানীয়ভাবে বাগদা (মারাঠি ভাষায়) বাংলায় যা কাজল গোরি হিসেবে পরিচিত,এই ধরনের মাছে প্রচুর মার্কারি আছে বলে জানা যায়,সুতরাং এই ধরনের মাছগুলি থেকে শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের যতটা দূরে থাকার কথা বিবেচনা করা যায় ততই মঙ্গল।
  • খোলাওয়ালা মাছঃ এই ধরনের মাছগুলির মধ্যে পড়ে কাঁকড়া,চিংড়ি এবং বাগদা চিংড়ি।যদিও এগুলিতে মার্কারির উপাদান কম মাত্রায় থাকে,খোলাওয়ালা মাছগুলি শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির সৃষ্টি করতে পারে এবং সেই কারণে আপনার বাচ্চা কমপক্ষে এক বছর না হওয়া পর্যন্ত আপনার তাকে এগুলি খাওয়ানো শুরু করার জন্য অপেক্ষা করা উচিত।

শিশুদের উপর মাছের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি

শিশুদের খাদ্যে মছের সংযোজন করার পূর্বে তাদের উপর মাছের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি বুঝতে পারাটা অতীব গুরুত্বপূর্ণঃ

  • উপরের উল্লেখ অনুযায়ী,অনেক ধরনের মাছেই উচ্চ মাত্রায় মার্কারি উপাদান থাকে।এটি শিশুদের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের উপর একটি বলার মত প্রভাব ফেলতে পারে।
  • মার্কারিযুক্ত মাছগুলি দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চাদের খাওয়ানো হলে তা থেকে শিশুর কিডনি এবং ত্বকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি দেখা দিতে পারে।
  • খোলাওয়ালা মাছগুলিতে থাকে মিথাইল মার্কারি এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক যেগুলি শিশুর সার্বিক বৃদ্ধির উপর একটি প্রভাব ফেলে।

আপনার শিশুর যদি মাছে অ্যালার্জি থাকে তবে কীভাবে তা বুঝবেন?

যখন আপনার বাচ্চাকে প্রথমবার মাছ খাওয়ানো শুরু করে করে থাকেন,আপনার কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণের দিকে নজর রাখা উচিতঃ

  • শিশুর ত্বকের উপর র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি অথবা অন্য কোনও ত্বকজনিত সমস্যা
  • মুখ অথবা জিহ্বার কোনও অংশ ফুলে ওঠা
  • বমি হওয়া অথবা ডায়রিয়া
  • শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা
  • কাশি অথবা শ্বাস কষ্ট

আপনার সোনার জন্য মাছের সুস্বাদু রেসিপিগুলি

ভারতীয় শিশুদের জন্য নিম্নলিখিত সাধারণ অথচ সুস্বাদু মাছের রেসিপিগুলি প্রস্তুতের চেষ্টা করতে পারেনঃ

১. মাছের পিউরি

উপকরণ

কাঁটাবিহীন মাছ,গোলমরিচ অথবা জিরে গুঁড়ো

রন্ধন প্রণালী

  • মাছের টুকরোগুলি ভালভাবে ধুয়ে নিয়ে সেগুলিকে একটি কড়াইয়ের মধ্যে নিয়ে তার মধ্যে বেশ কিছুটা জল ঢালুন এবং সাদা হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত সেগুলিকে সেদ্ধ করতে থাকুন।
  • এবার সেগুলিকে কড়াই থেকে তুলে নিয়ে তার উপর এক চিমটে গোলমরিচ অথবা জিরে গুঁড়ো যোগ করুন।
  • একটি মিহি পেস্ট রূপে গড়ে তোলার জন্য সেগুলিকে ভালভাবে চটকে নিন অথবা একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে ভালভাবে পিঁষে নিন এবং আপনার সোনাকে পরিবেশন করুন।

২. মাছ এবং গাজরের পিউরি

উপকরণ

1/2 কাপ কাঁটাবিহীন মাছ,1 টি গাজর,জিরে অথবা গোলমরিচ গুঁড়ো

রন্ধন প্রণালী

  • কাঁটা বিহীন মাছের টুকরোগুলি এবং সূক্ষ্ম ভাবে কাটা গাজরের কুঁচিগুলিকে ভালভাবে সেদ্ধ করে নিন যতক্ষণ না সেগুলি ভালভাবে রান্না হয় ও নরম হয়ে ওঠে।
  • একটি মিক্সচার গ্রাইন্ডার ব্যবহার করে এগুলিকে মিশ্রিত করতে থাকুন যতক্ষণ না সেগুলি একটি মসৃণ পিউরি রূপে গড়ে ওঠে।
  • এবার এর সাথে এক চিমটে গোল মরিচ অথবা জিরে গুঁড়ো যোগ করুন।

মাছ হল প্রোটিন,ভিটামিন এবং খনিজের এক অবিশ্বাস্য উৎস,যা এটিকে শিশুর বিকাশে সহায়তার জন্য একটি মূখ্য উপাদান হিসেবে গড়ে তুলেছে।শুধু মনে রাখবেন,এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়ানো উচিত।সম্ভব হলে মাছের বৈচিত্র্যগুলির মধ্যে মার্কারি উপাদানটি পরীক্ষা করে নিন এবং তার ফলে আপনার সোনাটিকে মাছ খাওয়ানোর এই যাত্রাপথটি আপনার আরও সুগম হয়ে উঠবে আশা করা যায়।