10 টি সেরা শিশু খাদ্য যেগুলি আপনার সন্তানকে দেওয়া উচিত

10 টি সেরা শিশু খাদ্য যেগুলি আপনার সন্তানকে দেওয়া উচিত

নতুন মা বাবা হিসেবে, আপনি সর্বদাই আপনার সন্তানের জন্য সবচেয়ে সেরাটা চেয়ে থাকেন।কিন্তু সেটি যখন খাবারের কথা বলার সময় আসে,সেখানে সকল শিশুদের জন্য সত্যিই ভাল বলে কিছু নেই।আপনার বাচ্চার সহ্যের জন্য যেটি সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সেটিই হতে পারে সেরাশব্দটির নিকটবর্তী একটি মানানসই শব্দ।

তবে,খাদ্যগুলি বাচ্চার বয়সের জন্য উপযুক্ত হওয়া উচিত।বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে,বাচ্চার চার মাস বয়স হওয়ার পূর্বে আপনার তার সাথে কঠিণ খাদ্যের পরিচয় করানো উচিত নয়।এরপর থেকে ধীরে ধীরে তাদের ডায়েটে আধাশক্ত খাদ্য যোগ করা উচিত।

কোনও খাদ্য উপাদানকেই আপনার সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করা উচিত নয় যতক্ষণ না বাচ্চার এর প্রতি কোনও পরীক্ষিত ও প্রমাণিত অ্যালার্জির প্রবণতা থেকে থাকে।কারণ এটিই হল সেই সময় যখন থেকে তাদের খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠতে শুরু করবে এবং তা সারা জীবনের জন্য বিকাশ পাবে।সুতরাং তাদের খাবারের থালায় রকমারি খাদ্যের সমাবেশ ঘটান।মাঝেমধ্যে তাদের পিছনে বসে লক্ষ্য করুন যে প্রকৃতিগতভাবে তারা কি বেছে নেয়।শিশুদেরও নিজস্ব স্বাদকোড়ক আছে।

শিশুদের জন্য সেরা খাদ্য

শিশুদের জন্য সেরা খাদ্য

উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে,আমরা 10 টি খাদ্য উপাদানের একটি তালিকা তৈরী করেছি যেগুলি আপনি বুকের দুধ ছাড়ানোর খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।এগুলি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের ভিত্তিতে গঠিত।এগুলি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের সর্বোত্তম পুষ্টি নিশ্চিত করে এবং সেগুলির সবগুলিই হল এক কথায় চমৎকারঅনবদ্য।আসুন সেই চমৎকারগুলি সম্পর্কে কিছুটা পড়ে নেওয়া যাক।

  • তৈরী করা সহজ
  • খেতে পারা সহজ
  • পকেটের জন্যও সহজ

তবে সবকিছুই একবারে একসাথে আপনার সোনার থালায় যোগ করবেন না।আপনার ছোট্টটির জন্য একবারে একটি পদক্ষেপই গ্রহণ করুন।অন্য আরেকটি নতুন খাদ্য উপকরণ শুরু করার মাঝে 3 দিনের ব্যবধান রাখুন এটি লক্ষ্য করার জন্য যে শিশুটিকে দেওয়া খাদ্য উপাদানটির জন্য তার মধ্যে কোনও অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কিনা।

আপনার 6 মাসের শিশুর সর্বোত্তম স্বাস্থ্যের চাহিদা পূরণের জন্য সর্বোত্তম খাবারগুলি সম্পর্কে অতিরিক্ত নির্দেশিকা যুক্ত করতে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা করিয়া নেওয়া উচিত।

১. স্তন দুধ

এটি হল এমন এক খাদ্য যা শিশুর জীবনের প্রথম বছরে তার পুষ্টির প্রায় সমস্ত দিকগুলিই পূরণ করে।এটি আবার তাদের বিকাশের জন্যও অপরিহার্য।তবে,এটিতে আয়রণের পরিমাণ বেশ কম থাকায় ছয় মাস বয়সের পর বাচ্চা যখন আরও বেশি চঞ্চল এবং গতিময় হয়ে ওঠে তখন তাদের পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ নাও করতে পারে।বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য এই সময় থেকেই তাদের সবচেয়ে সেরা খাদ্যগুলি দেওয়া শুরু করা প্রয়োজন।

প্রস্তাবিত বয়স:

  • প্রথম ছয় মাস শুধুই বুকের দুধ
  • এরপর 12 মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত বা সম্ভব হলে তারও বেশি সময়ের জন্য বুকের দুধের সাথে ক্রমশ পরিপূর্ণ করতে থাকুন তরল,আধাশক্ত,শক্ত বা কঠিণ খাদ্য।

২. অ্যাভোকাডো

আপনার দুরন্ত শিশুর জন্য তার প্রথম আদর্শ সবুজখাদ্যটি কি হতে পারে? অ্যাভোকাডো,কারণ এগুলি অন্য যেকোনও ফল বা সবজির তুলনায় ভাল ফ্যাট(মোনোস্যাচুরেটেড) এবং খুব উচ্চ প্রোটিনে পরিপূর্ণ।

এটি আবার কর্মব্যস্ত নতুন মায়াদের জন্যও বেশ আদর্শ কারণঃ

  • এর উচ্চ ফ্যাট জাতীয় উপাদানগুলি বাচ্চাকে বেশ কয়েক ঘন্টার জন্য পরিপূর্ণ করে রাখে।
  • এগুলিকে রান্না করার প্রয়োজন পড়ে না।

প্রস্তাবিত বয়স:

ছয় মাস বয়স থেকে শুরু করুন

৩. আয়রণ সমৃদ্ধ দানাশস্য

স্পষ্টতই,শিশুরা তাদের দেহে সঞ্চিত আয়রণের সহিত জন্মগ্রহণ করে থাকে যা তাদের 6 মাস বয়স থেকে নিঃশেষিত হতে শুরু করে।তাই এই সময় থেকেই আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া শুরু করা উচিত।এর উপর আবার মায়ের বুকের দুধেও আয়রণের পরিমাণ কম থাকে।চাল,বার্লি এবং ওটমিলের মত যেকোনও আয়রণ সমৃদ্ধ দানা শস্যই এই সকল ঘাটতিগুলিকে পূরণ করতে পারে।শুরু করার জন্য এগুলির যেকোনও একটিকেই বেছে নিতে পারেন।ব্যবহারের জন্য কিছু জন আবার চালকেই সুপারিশ করে থাকেন কারণ আপাতদৃষ্টিতে,সেগুলি থেকে সাধারণত কোনও অ্যালার্জি হয় না।

প্রস্তাবিত বয়স:

দেরী করার পরিবর্তে দ্রুত শুরু করাই শ্রেয়ঃ 4-6 মাসের মধ্যে হল শ্রেষ্ঠ সময়।

৪. লাল মাংস বা রেড মিট

লাল মাংস হল প্রোটিন,আয়রণ,রাইবোফ্লাভিন,নিয়াসিন,ভিটামিন B-6 এবং জিঙ্কের উৎস।পশুখাদ্য থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিকর উপাদানগুলি মস্তিষ্ক,কঙ্কালের গঠণ এবং পেশীর সঠিক বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক।সুতরাং শিশুর প্রথম খাদ্যের জন্য তাদের শুধুমাত্র সবজি দেওয়া হল একটি পৌরাণিক কাহিনী কারণ তারা উদ্ভিদের উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়রণকে সহজে হজম করতে পারে না।

লাল মাংসগুলিকে খুব ভাল ভাবে রান্না করে,পিষে বা চটকে নিয়ে বুকের দুধ অথবা সবজির মন্ডের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে নেওয়া উচিত যাতে বাচ্চারা এটিকে সহজে খেতে এবং হজম করতে পারে।তবে পিউরিটি থেকে যেকোনও ক্ষুদ্র হাড়ের টুকরোকেও বের করে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন।আপনি আবার ক্যানজাত মাংসের সাধারণ পিউরিও কিনতে পারেন।

প্রস্তাবিত বয়স:

7-10 মাস পরে।

৫. ব্রকোলি

বাচ্চা যখন চামচে খাওয়ার পর্যায় পার করে আসে,ব্রকোলির ফুলগুলি শিশুর ছোট্ট আঙ্গুলগুলিতে একদম উপযুক্ত ভাবে মানানসই হয়ে ওঠে।নরম এবং পরিচালনাযোগ্য করার জন্য সেগুলি সেদ্ধ করুন।এগুলি ভিটামিন C এর চমৎকার উৎস,কিন্তু এগুলিকে ভালভাবে ভাঁপিয়ে বা মাইক্রোওভেনে করে রান্না করে নেওয়া উচিত কারণ সেদ্ধ করলে এর অর্ধেক ভিটামিনগুলি দূর হয়ে যায়।এছাড়াও এর মধ্যে থাকে বিটাক্যারোটিন,ফোলিক অ্যাসিড,আয়রণ,পটাসিয়াম এবং ফাইবার বা তন্তু।

কিছু শিশু আবার ব্রকোলির স্বাদটিকে পছন্দ নাও করতে পারে।এটিকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলতেঃ

  • গাজর এবং মিষ্টি আলুর মত কোনও মিষ্টিজাত সবজির সাথে এটিকে মেশান।
  • সেদ্ধ করে নিয়ে সেটি ঠাণ্ডা করার পর আরো বেশি ঠাণ্ডা করুন।তবে বাচ্চার যদি সহজেই ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার ধাঁচ থাকে অথবা যদি আবহাওয়া সাধারণত ঠাণ্ডাই থাকে,খুব বেশি ঠাণ্ডা করে রাখা কোনওকিছুই বাচ্চাকে পরিবেশন করবেন না।

প্রস্তাবিত বয়স:

8-10 মাস

৬. বীট

বীটে রয়েছে ভিটামিন C,ভিটামিন A,ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলিক অ্যাসিড।এটি অন্যান্য সবজিগুলির মধ্যে সাধারণতই মিষ্টি প্রকৃতির একটি সবজি যা বাচ্চারা গ্রহণ করতে দ্রুতই পছন্দ করে থাকে।শিশুদের জন্য বীটের সবচেয়ে সেরা প্রস্তুতিটি হল এগুলিকে সেদ্ধ অথবা রোস্ট করে নেওয়ার পরে এগুলির পিউরি অথবা জ্যুস হিসেবে ব্যবহার করা।

প্রস্তাবিত বয়স:

বীটের মধ্যে থাকে নাইট্রেট যা শিশুদের 6 মাসের পূর্বে দেওয়া উপযুক্ত নয় কারণ এগুলির কারণে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে।শিশুদের বীট দেওয়া শুরু করার সেরা সময় হল 8-10 মাস।

৭. মিষ্টি আলু

শিশুদের জন্য কিছু সবজির স্বাদ প্রায়শই বরখাস্ত হয়।আর আপনি যদি সেগুলির সাথেই আপনার ছোট্টটির সবজির যাত্রা শুরু করেন,তবে সেক্ষেত্রে কিছু বাধা আসতে পারে।এগুলির পরিবর্তে আপনি মিষ্টি আলুর মত আরও বেশি মনোরম স্বাদের প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানগুলির দ্বারা সেটি শুরু করতে পারেন।এগুলি পটাসিয়াম, ভিটামিন C এবং ফাইবার বা তন্তু সরবরাহ করে।এছাড়াও আবার এগুলির মধ্যে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন এবং একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যেগুলি কিছু ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে দেহকে শক্তিশালী করে তোলে।বাচ্চার জন্য তার প্রথম সবজিটিকে একটি স্মরণীয় উপহার হিসেবে গড়ে তুলতে সেটিকে ভালভাবে চটকে নিন।

প্রস্তাবিত বয়স:

মোটামুটি প্রায় 6 মাস।

৮. কলা

এটি হল এমন এক খাদ্য যা শিশুর কৌতুকপূর্ণ মুখমণ্ডলে একটি দন্তহীন হাসির ঝলক নিয়ে আসে।এটিকে চটকিয়ে এবং জগাখিচুড়ি আরওওওওও….’ মিষ্টি কিছু বানানো সহজ,যা শিশুদের উচ্চ মাত্রায় পুষ্টি যোগায় এবং তাদের মলঅপসারণের একটি কৌশল হিসেবেও পরিচিত।এগুলি হল আবার

  • শক্তির উৎস কারণ এগুলি কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ।
  • হজমে সহায়ক এবং মলকে নরম করে তোলার উপাদানের দ্বারা গঠিত,কারণ এগুলি ফাইবার বা তন্তুতে পরিপূর্ণ।

এগুলি আবার 6-9 মাস বয়স থেকে শিশুদের জন্য তাদের ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ককারী খাদ্যগুলির মধ্যে সেরা হিসেবে বিবেচিত।

সেগুলি সম্পূর্ণ রূপে পাকা হলে, ভালভাবে চটকে নেওয়ার পরেই বাচ্চাকে পরিবেশন করুন।অপেক্ষাকৃতভাবে একটু বড় বাচ্চাদের জন্য তাদের ফিঙ্গার ফুড বা আঙ্গুলে তুলে নিয়ে খেতে পারার খাবার হিসেবে কলাকে ছোট ছোট টুকরো করে নিয়ে পরিবেশন করা যেতে পারে।

প্রস্তাবিত বয়স:

4 মাস কারণ তাদের হজম করা সহজ হবে।

৯. আলুবোখরা

আলুবোখরা যেগুলিকে আপনি হয়ত শুকনো প্লাম হিসেবে জানেন,শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে কারণ এগুলি খুব নরম এবং মিষ্টি।এর ভাল দিকটি হল এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কোষ্ঠকাঠিণ্যের নিরাময়ের জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার রূপে কাজ করে।এটি প্রায়ই ঘটে থাকে যখন শিশুরে আধাশক্ত খাদ্য থেকে সম্পূর্ণ কঠিণ খাদ্যে পদার্পণ করে।আপনি কলাকে একটা পিউরি হিসেবে অথবা সেটিকে ওটমিল,দানা শস্য অথবা অ্যাপেলশসের সহিত মিশ্রিত করে আপনাদের ছোট্ট সদস্যটিকে পরিবেশন করতে পারেন।

প্রস্তাবিত বয়স:

4-6 মাস কারণ তারা এগুলিকে সহজে হজম করতে পারবে এবং এটির অ্যালার্জির ঝুঁকি নিয়ে কোনও প্রতিবেদন নেই।

১০. গাজর

গাজর তার পরিপূর্ণতার সহিত আপনার সন্তানের চোখকে সুরক্ষিত রাখে কারণ এর মধ্যে থাকে বিটাক্যারোটিনের প্রাচুর্য এটি দেহের মধ্যে ভিটামিন A তে পরিবর্তিত হয় যা একটি স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিশক্তির জন্য অপরিহার্য।বিটাক্যারোটিন হল আবার একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও যা গাজরকে কমলা রঙে রাঙায়িত করে তোলে।

গাজরের প্রাকৃতিক মিষ্টতার কারণে এটিও শিশুদের দেওয়ার উপযোগী প্রথম সবজি হিসেবে বিবেচিত।গাজরগুলি ভীষণ নরম না হয়ে যাওয়া অবধি সেগুলিকে ভালভাবে সেদ্ধ করে নেওয়া উচিত।তারপর আপনি সেগুলিকে দিয়ে হয় পিউরি বানাতে পারেন অথবা সেগুলিকে ঘনকাকারে কেটে নিয়ে কেবল গাজরের ফিঙ্গার ফুড হিসেবেও পরিবেশন করতে পারেন।একটা গোটা সেদ্ধ গাজরকে আপনার সোনাকে পরিবেশনের পূর্বে সেটির একদম ভিতরের অংশ পর্যন্ত ঠাণ্ডা করে নেওয়াকে নিশ্চিত করুন।

প্রস্তাবিত বয়স:

6 এবং 8 মাস

সচেতন হন যে এক্ষেত্রে খাদ্যের এমন কোনও নির্দিষ্ট একটি সেট বা নিয়ম নেই যা একটি শিশুকে অত্যন্ত বলদায়ক এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারে।এগুলি সবই হল আপনার সন্তানের সঠিক বয়স ভিত্তিক সহ্য হতে পারে এমন ধরনের খাদ্যগুলি কীভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে তার পরীক্ষা এবং আবিষ্কারমূলক কিছু প্রয়াস।