In this Article
শরীর সুস্থ এবং হাইড্রেশন ঠিক রাখার জন্য ঘন ঘন জল খাওয়ার যে নিয়ম বড়দের ক্ষেত্রে আছে সেই নিয়ম শিশুদের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর ফলে একাধিক প্রশ্ন আসতে পারে, যেমন কত মাস বয়স থেকে সদ্যজাত শিশু জল খাবে? এবং শিশুদের ডিহাইড্রেশন হওয়ার লক্ষণ কী কী? আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে এক মাস বয়সের শিশু কি জল খেতে পারে? তাই, শিশুদের কীভাবে জল খাওয়াবেন সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক তথ্যগুলি দেখুন।
কবে থেকে বাচ্চাদের জল খাওয়ানো শুরু করা যাবে?
অনেক সময় সদ্য সন্তান হওয়া বাবা মায়েরা বুঝতেই পারেন না কখন থেকে বাচ্চাকে জল খাওয়ানো শুরু করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের যেমন প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে জল খাওয়া উচিত, কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে তা নয়। তাদের বয়স অনুযায়ী জলের চাহিদা আলাদা হয় এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জল খাওয়ালে তার ফল খারাপ হতে পারে, কারণ তাদের দেহ এটির জন্য প্রস্তুত থাকে না।
জন্ম থেকে 4 বছর বয়স পর্যন্ত
যেসব শিশুরা বুকের দুধ খাচ্ছে তাদের জল খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই কেননা বুকের দুধেই শিশুর পুষ্টি ও তরলের সব প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়ে যায়। এর কারণ, আপনার সন্তানকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য বুকের দুধ প্রয়োজনীয় তরল সরবরাহ করে থাকে। অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি চাহিদা মতো বুকের দুধ দিতে পারছেন, ততক্ষণ আপনার সদ্যজাত শিশুকে অতিরিক্ত জল দেওয়ার কথা ভাবতেও হবে না।
যেসব শিশুরা ফরমূলা দুধ খাওয়া শুরু করেছে তাদেরও বাইরের জল বেশী খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। বেশিরভাগ শিশুদের জন্য তৈরি ফরমূলা দুধে কতটা জল মেশাতে হবে ভালো ভাবে গুলে যাওয়ার জন্য তার নির্দিষ্ট নির্দেশ থাকে। যখন আপনি এই নির্দেশগুলি অনুসরণ করেন এবং শিশুর বয়স অনুযায়ী সামঞ্জস্য করে ফরমূলা দুধের ঘনত্ব ঠিক করেন, তখন সেটিকে সঠিক সময়মতো খাওয়ালে শিশুর হাইড্রেশন সঠিক থাকে।
5 – 8 মাস বয়স
বাচ্চাদের এই মাসগুলোতে জল পান করা উচিত? উত্তরটি হলো এই বিষয়ে কোন কঠোর ও দ্রুত নিয়ম নেই। 6 মাস বয়স পর্যন্ত, আপনার শিশুর বুকের দুধ বা ফর্মুলা ব্যতীত কিছু পান করার প্রয়োজন নেই। নবজাতক পর্যায় চলে যাওয়ার পরে এবং ধীরে ধীরে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দেওয়া শুরু হলে সাধারণত বাচ্চাদের জল খাওয়ানো শুরু করা হয়।
বাচ্চাদের সাধারণত 5 থেকে 8 মাস বয়সের মধ্যে কঠিন খাদ্য দেওয়া শুরু হয়। এই সময়ে, আপনি আপনার বাচ্চাকে দিনে কয়েকবার চুমুক দেওয়ার জন্য একটি সিপি কাপে জল দিতে পারেন। এটি খুব ঘন ঘন হওয়ার দরকার নেই, ধরে নেওয়া হচ্ছে যে কঠিন খাদ্যের পাশাপাশি, আপনি এখনও বাচ্চাকে স্তন্যদান বা ফর্মুলা প্রদান করছেন।
9 – 12 মাস বয়স
আপনার সন্তানের বয়স এক বছর বা তার একটু বেশি হলে আপনি বুকের দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথে দুপুর বা রাতের খাবারে কাপে করে জল বা পাতলা রস খাওয়াতে পারেন। তবে বায়ুযুক্ত পানীয় বা কৃত্রিম মিষ্টিযুক্ত পানীয় খাওয়াবেন না। সদ্য মা হওয়ার পর, আপনি আপনার বাচ্চার জলের চাহিদা নিয়ে বিভ্রান্ত হতে পারেন। যেহেতু তারা তেষ্টা পেলে বলতে পারে না তাই অনেক সময় তাদের সঠিকভাবে জলের প্রয়োজনীয়তা মিটছে কিনা সে বিষয়ে আপনি চিন্তিত হতে পারেন এবং বুকের দুধের সাথে জল আলাদা করে দেওয়া উচিৎ কিনা ভাবতে পারেন। কিন্তু, যেভাবে সে তার খিদে প্রকাশ করে, সেরকম সে তার তৃষ্ণাও নির্দিষ্ট সংকেতের মাধ্যমে প্রকাশ করবে, যেমন জোরে চিৎকার করা।
কিভাবে আমি শিশুকে জল খাওয়ানো শুরু করতে পারি?
জল শিশুকে তখনই খাওয়ানো শুরু করা উচিৎ যখন তারা শক্ত খাবার খেতে শুরু করে। একবছর না হওয়া পর্যন্ত তাদের কিডনি বেশী জল বিপাক করার মতো পরিণত হয় না। তাই এই সময় তাদের জলের চাহিদা খুব কম। যদিও, এই সময় শিশুদের এক চুমুক করে সামান্য জল খাইয়ে তাদেরকে জলের স্বাদের সাথে পরিচিত করানো যায়। আপনার সন্তানের তেষ্টা পেলে তাকে বোতল থেকে বা সিপি কাপ থেকে অল্প অল্প করে জল খাওয়ান। এছাড়াও, আপনার সন্তান একটু বড় না হওয়া পর্যন্ত খোলা কাপ থেকে জল খাওয়াবেন না।
শিশুদের কতটা জল খাওয়াতে হবে?
আপনি যদি 6 মাস বয়সী শিশুর জন্য কতটা জল প্রয়োজন ভেবে চিন্তিত হন, তাহলে আপনার জানা দরকার যে এটি শিশুর ও তার খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করে। যদি সে এখনও বুকের দুধ খায় তাহলে সামান্য জলই তার জন্য যথেষ্ট। শিশু যদি সঠিকভাবে বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধ পায় তাহলে জলবিয়োজনের আশঙ্কা খুবই কম থাকে। সুতরাং, এই বিষয়ে চিন্তা করবেন না। 4 মাসের কম বয়সী শিশুদের আলাদা করে জল খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। তাদের দুধের মধ্যেকার তরল থেকে তাদের দেহ জলের প্রয়োজনীয়তা মেটায়।
শিশুদের মধ্যে জলাধিক্যের সমস্যা
যদিও অত্যধিক জল সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের কোনও অনিরাময়যোগ্য ক্ষতি করে না, কিন্তু এটি অল্পবয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। 6 মাসের কম বয়সী বাচ্চাদের অত্যাধিক পানীয় জল দেওয়া হলে, স্তন-দুগ্ধ বা ফরমূলা দুধ থেকে পুষ্টি শোষণের জন্য শরীরের যে প্রাকৃতিক ক্ষমতা থাকে তা ব্যাহত হতে পারে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক পরিমাণে পানীয় জল খেলে, তাদের শরীরের মধ্যে সোডিয়াম-এর স্তর নিচে নামিয়ে দিতে পারে। তাদের কিডনি একই সময়ে বেশি পরিমাণে জল নেওয়ার মতো পরিণত থাকে না এবং এতে জল বিষক্রিয়ার মতো বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। যদি জল খাওয়ার পর আপনার শিশুর শরীরে জল বিষক্রিয়ার উপসর্গ দেখা যায়, যেমন আবঝা দৃষ্টি, জ্বালা বা অবসন্নতা, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। খুব বেশী জল শিশুদের খিঁচুনির কারণ হতে পারে। একই কারণে অল্পবয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানো উচিৎ না। সাঁতার কাটার সময় বেশি পরিমাণে জল খেয়ে ফেললে জল বিষক্রিয়া হতে পারে এবং জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
শিশুদের কখনো কি জল খাওয়ার প্রয়োজন হয়?
সদ্যজাত শিশুদের জল খাওয়ানোর প্রয়োজন না হলেও, তারা একটু বড় হলে তাদের জল খাওয়ার প্রয়োজন হয়। সুতরাং, আপনার শিশু বড় হয়ে উঠলে আপনি তাদের খাবারের সাথে জল খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। বাচ্চারা প্রায় 4-6 মাস বয়স হলে, 30 মিলিলিটার জল পান করতে পারে, কিন্তু এর চেয়ে বেশি জল খাওয়াবেন না। আপনার সন্তানের 9 মাস থেকে 1 বছর বয়সের পর থেকে আস্তে আস্তে জল খাওয়ানো বাড়াতে পারেন। আপনার সন্তানের এক বছর বয়স হয়ে গেলে, তার দেহ বেশি পরিমাণে জল গ্রহণ করার মতো পরিণত হয়ে ওঠে। তবে, এক বছর হয়ে যাওয়ার পরও, তাকে জল খাওয়ানোর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
আপনার সন্তানকে জল খাওয়ানোর বিষয়ে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
অল্পবয়সী শিশুদের জল খাওয়ানোর সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হল এবং কিছু সংশয় দূর করার জন্য আলোচনা করা হল।
6 মাস বয়সী বা তার থেকে ছোট শিশুকে জল খাওয়ানো কতটা নিরাপদ?
উত্তরটি হল যে আপনি 4 থেকে 6 মাস বয়সের শিশুদের সামান্য জল খাওয়াতে পারেন। যাইহোক, একদিনে 30-60 মিলির চেয়ে বেশি পরিমাণে জল খাওয়ানো নিরাপদ নয়।
আমরা ফরমূলা দুধ কি জলের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারি?
আপনি যদি খাওয়ার-জন্য-প্রস্তুত ফরমূলা ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার এটিতে জল দেওয়ার দরকার নেই। তবে, যদি আপনি গুঁড়ো ফরমূলা দুধ খাওয়ান, তাহলে এতে জল মেশানোর প্রয়োজন হবে। যে পরিমাণ জল নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে বেশী জল মেশাবেন না, কারণ এর থেকে খিঁচুনির মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।
কখন বাচ্চারা জল খাওয়া শুরু করতে পারে?
অনেক বাবা-মা জানেন না কোন বয়েস থেকে জল খাওয়ানো শুরু করা উচিত। যেমন আগে বলা হয়েছিল, শিশুদের বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধ খাওয়ানো হলে, অতিরিক্ত জল খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। এমনকি পরামর্শ দেওয়া হয় যে 4-6 মাস বয়সের পরেই বাচ্চাদের জল খাওয়ানো শুরু করা উচিত।
শিশুর ডিহাইড্রেশন হয়ে যায় যদি?
যেসব শিশুরা চাহিদা মতো বুকের দুধ পায় তাদের ডিহাইড্রেশন হওয়ার খুব কম সম্ভাবনা থাকে। এমনকি ফরমূলা খাওয়ানো শিশুরাও তাদের খাবারের সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল পেয়ে যায়।
আমরা কি বুকের দুধ খাওয়া শিশুকে জল খাওয়াতে পারি?
বুকের দুধ খাওয়া শিশুকে জল খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয় না। শিশুর তরলের চাহিদা বুকের দুধ থেকেই মিটে যায়।
বাচ্চাদের বেশি জল খাওয়ালে কি খিঁচুনির উপসর্গ দেখা দিতে পারে?
হ্যাঁ, অত্যধিক জল খাওয়ার কারণে শিশুর একধরণের অবস্থার সৃষ্টি হয় যাকে জলীয় বিষক্রিয়া বলা হয়। এটি খুব বিপজ্জনক অবস্থা যা নাটকীয় ভাবে খিঁচুনির কারণ হতে পারে। এটি শিশুর শরীরের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে, যেহেতু অত্যধিক জল খাওয়ার কারণে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যায়।
উপসংহার: জীবন্ত জীবের বেঁচে থাকার জন্য জল অনিবার্যভাবে প্রয়োজনীয়। প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে, আমাদের প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং সর্বোত্তম স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল পান করতে হয়, তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বিষয়টি এরকম নয়। শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জল দেওয়া উচিত।