In this Article
- একটি জন্ম শংসাপত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- জন্ম শংসাপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় নথি
- কারা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন বা রেজিস্টার করতে পারেন
- জন্ম শংসাপত্র নিবন্ধনের ফি কত?
- আপনার সন্তানের জন্ম শংসাপত্র কে দেবেন এবং কোথায় পাবেন?
- আপনি কখন জন্ম প্রমাণপত্র বা শংসাপত্র পাবেন?
- ভারতে একটি জন্ম শংসাপত্রের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন?
- নিবন্ধন করার পর জন্ম শংসাপত্র পেতে কত সময় লাগে?
যদি আপনি ভারতীয় হন এবং শ্রিঘ্রই কোন শিশুর জন্ম দিতে চলেছেন, তবে আপনার শিশুর জন্মের শংসাপত্র বা বার্থ সার্টিফিকেট পাওয়ার পদ্ধতিটি জানা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। একটি অফিশিয়াল জন্ম শংসাপত্র আপনার শিশুর জন্ম তারিখটিকে প্রতিষ্ঠা করবে এবং সাধারণত স্কুলে ভর্তি হওয়া, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার মতো ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন হয়। জন্ম শংসাপত্র না থাকলে সেই শিশুদের নাম, সরকারীভাবে পরিচয় এবং জাতীয়তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আপনার সন্তানের জন্মের ঠিক পরে জন্মের শংসাপত্রের জন্য আবেদন করা তুলনামূলক সহজ, তবে আপনি যদি দেরি করেন তবে প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে। আপনি যাতে আপনার ছোট্টটির জন্য একটি জন্ম শংসাপত্রের জন্য সহজেই আবেদন করতে পারেন, সেই সম্পর্কে কিছু বিশদ আলোচনা করি, যা আপনাকে সহায়তা করতে পারে।
একটি জন্ম শংসাপত্র কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শিশুদের স্কুল বা কলেজে ভর্তি, হাসপাতালের সুবিধাগুলি এবং উত্তরাধিকার ও সম্পত্তির দাবি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জন্ম শংসাপত্র বা বার্থ সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সন্তানের প্রথম অধিকার এবং তার পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করে। এটি নিম্নলিখিত প্রক্রিয়াগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে:
- বীমার জন্য শিশুর বয়স নির্দেশ করা
- বাবা–মা হিসাবে প্রমাণ করা
- কর্মসংস্থানের জন্য বয়সের প্রমাণ
- বিবাহের জন্য বয়সের প্রমাণ
- স্কুল / কলেজে ভর্তি
- নির্বাচনী তালিকায় নাম লেখানোর জন্য বয়সের প্রমাণ
- এনপিআর–এ তালিকাভুক্তি (জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধক)
- পাসপোর্টের জন্য আবেদন
- অভিবাসন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা (গ্রিন কার্ড পাওয়ার মতো)।
জন্ম শংসাপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় নথি
আপনার সন্তানের জন্ম শংসাপত্রের জন্য আবেদন করতে আপনার কাছে অবশ্যই কয়েকটি নথিপত্র থাকতে হবে। সেগুলির মধ্যে রয়েছে:
- আপনার এবং আপনার স্বামীর (বাবা–মায়ের) জন্ম শংসাপত্র
- যেখানে জন্ম হয়েছিল সেই হাসপাতাল কর্তৃক জারি করা তথ্য প্রমাণ
- বাবা–মা উভয়ের পরিচয়ের প্রমাণ (যাচাইয়ের জন্য)
- মা–বাবার বিবাহের শংসাপত্র।
কারা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন বা রেজিস্টার করতে পারেন
কারা সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে পারেন সে সম্পর্কে অনেকগুলি বিধিনিয়ম রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে –
- যখন কোন বাড়িতে জন্ম হয় – পরিবারের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি, বাড়ির প্রধান বা শিশুর নিকটতম আত্মীয়।
- যখন চলন্ত যানবাহনে জন্ম হয় – উল্লিখিত যানবাহনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি।
- বোর্ডিং হাউস বা ধর্মশালায় যখন জন্ম হয় – বোর্ডিং হাউসের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি।
- যদি শিশুটিকে কোন সর্বজনীন স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় – স্থানীয় পুলিশ ইনচার্জ বা গ্রামের প্রধান।
- যখন কারাগারে যখন জন্ম হয় – কারাগারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি।
- যখন নার্সিং হোম বা প্রসূতি হোমে জন্ম হয় – হোমের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার।
- যখন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল / উপ–বিভাগ হাসপাতাল / রেফারাল হাসপাতালে জন্ম হয় – তখন হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা উপ–সুপারিশেন্ট বা রেফারেল হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা অফিসার।
জন্ম শংসাপত্র নিবন্ধনের ফি কত?
জন্ম শংসাপত্রের জন্য নিবন্ধীকরণ বা রেজিস্ট্রেশনের ফি হল ২০টাকা, তবে আপনি যদি সন্তানের জন্মের ২১ দিনের পরে আবেদন করেন, তবে লেট–ফি যুক্ত করা হয়।
আপনার সন্তানের জন্ম শংসাপত্র কে দেবেন এবং কোথায় পাবেন?
ভারতে, আরবিডি আইনের ৭ম ধারার বিধি অনুসারে, প্রতিটি স্থানীয় পৌরসভায় নগর নিগম নামে একজন নিবন্ধক নিযুক্ত থাকেন। যদি এটি একটি ছোট অঞ্চল বা জেলা হয় তবে সাধারণত কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা পঞ্চায়েতকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আইনের ৭ম (৫) ধারার বিধি অনুসারে একজন সাব–রেজিস্ট্রার নিয়োগের জন্যও নির্দেশনা দেয়, যিনি রেজিস্ট্রারের মতো একই অধিকার এবং ক্ষমতা উপভোগ করবেন। উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিরাই প্রধানত আপনার সন্তানের জন্ম শংসাপত্র জারি করতে পারেন।
১. গ্রাম্য অঞ্চলের জন্য
- পঞ্চায়েত সচিবরা জন্ম শংসাপত্র জারি করতে পারেন। এটি ৩টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (দমন ও দিউ, গোয়া এবং পন্ডিচেরি) এবং ১৫টি রাজ্যে (অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, কেরালা, মধ্য প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট, দাদ্রা, ও নগর হাভেলি, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা, রাজস্থান এবং উত্তরাখণ্ড) করা হয়।
- হরিয়ানা, আসাম, মেঘালয়, উড়িষ্যা, মণিপুর, সিকিম, পাঞ্জাব, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লক্ষদ্বীপ এবং দিল্লিতে প্যারা–মেডিক্যাল স্টাফ অফিসার বা মেডিকেল ইনচার্জ অথবা সমতুল্য ব্যক্তি জন্ম শংসাপত্র জারি করতে পারেন।
- অরুণাচল প্রদেশের গ্রাম্য স্তরের কর্মী বা সার্কেল অফিসার এবং নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের স্কুল শিক্ষকদের জন্ম শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
- জম্মু ও কাশ্মীর এবং চন্ডীগড়ের পুলিশ আধিকারিকদেরও এই অধিকার রয়েছে।
- তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের গ্রাম হিসাবরক্ষক বা প্রশাসনিক আধিকারিকরাও এটি করতে পারেন।
২. পৌর অঞ্চলের জন্য
পৌর অঞ্চল বা শহরগুলিতে, পৌর কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রার বা সাব–রেজিস্ট্রার বা নিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বা প্যারা–মেডিক্যাল স্টাফ ইনচার্জের জন্ম শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
আপনি কখন জন্ম প্রমাণপত্র বা শংসাপত্র পাবেন?
যদি আপনি আপনার সন্তানের জন্মের ২১ দিনের মধ্যে জন্ম শংসাপত্রের জন্য আবেদন করেন, তবে আপনি উপরে উল্লিখিত কর্তৃপক্ষের যে কোন একটিতে আপনার জন্ম সন্তানের শংসাপত্রের আবেদন করতে পারেন। আপনি যদি ২১ দিনের সময়সীমা অতিক্রম করে ফেলেন, তবে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট লেট–ফি দিতে হবে, যা স্থান এবং সময় অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
ভারতে একটি জন্ম শংসাপত্রের জন্য কিভাবে আবেদন করবেন?
যেহেতু ভারত সরকার এখন ডিজিটাল স্পেস প্রসারিত করেছে, পুরানো উপায়ে ব্যবহার করে জন্ম শংসাপত্র পাওয়ার প্রক্রিয়া খুব ধীর হতে পারে। এখন কয়েকটি শহরে অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম শংসাপত্রের জন্য আবেদন করার একটি সহজ উপায় রয়েছে। আপনি অনলাইনে যাচাই করে নিতে পারেন যে আপনার শহর সেই বিভাগে আসে কিনা।
১. অনলাইন নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া
অনলাইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভারতে জন্ম শংসাপত্র প্রাপ্তির প্রক্রিয়া নীচে রয়েছে:
- crsorgi.gov.in ওয়েবসাইটে যান
- বাম দিকে তাকান যেখানে আপনি ‘সাইন–আপ’ বোতামটি পাবেন
- নিবন্ধন করতে, ‘জেনারেল পাবলিক’–এর জন্য সাইন আপ–এ ক্লিক করুন।
- সাইনআপ বক্সটি পপ–আপ হিসাবে উপস্থিত হবে। এই বক্সে আপনার সমস্ত বৈধ বিবরণ পূরণ করুন, যেমন ব্যবহারকারীর নাম, ব্যবহারকারী আইডি, জেলা বা শহর / গ্রাম, আপনার মোবাইল নম্বর, জন্মের স্থান এবং এই জাতীয় আরও কিছু।
- যদি নিবন্ধকরণ ইউনিটের ক্ষেত্রটি ব্যবহারকারীর নাম বা ‘ইউজার নাম’টি দেখায় এবং সক্রিয় থাকে, তার অর্থ আপনার অঞ্চল অনলাইন নিবন্ধনের জন্য বৈধ তালিকায় আছে।
- ভেরিফিকেশন কোডটি দিন এবং রেজিস্টার ট্যাবে ক্লিক করুন।
- নিবন্ধকরণের পরে, একটি ধন্যবাদ বার্তা নিবন্ধটি নিশ্চিত করতে আপনার ইমেল আইডি চেক করার অনুরোধের সাথে পপ আপ হবে।
- আপনার ইমেল ইনবক্স চেক করুন। এটি আপনাকে লগইন করতে একটি নতুন পাসওয়ার্ড সেট আপ করতে বলবে।
- এটি সেট করুন, এবং আবার সাইন ইন করুন।
- আপনার সন্তানের নাম, তার বাবা–মা এবং জন্মের স্থান পূরণ করার জন্য একটি ফর্ম পপ আপ হবে।
- এটি পূরণ করুন এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে জমা দিন।
- একটি প্রিন্ট আউট নিন এবং আপনার কম্পিউটারে একটি সফট কপি ডাউনলোড করুন।
- আপনার অঞ্চলের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান।
- ফর্মটি তার বা সাব–রেজিস্ট্রারের দ্বারা অ্যাটেস্টেড করান।
২. অফলাইন নিবন্ধকরণ প্রক্রিয়া
অফলাইন প্রক্রিয়াটির মাধ্যমে ভারতে জন্ম শংসাপত্র নিবন্ধনের জন্য, পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কিভাবে আবেদন করতে হবে সে সম্পর্কে পদক্ষেপগুলি নীচে দেওয়া হল:
- আপনার পৌর কর্পোরেশন অফিসে গিয়ে একটি জন্ম শংসাপত্র রেজিস্ট্রেশন ফর্ম নিন।
- মেডিকেল ইনচার্জ দ্বারা আপনার সন্তানের জন্মের সময় হাসপাতাল কর্তৃক প্রদত্ত চিঠিটি জমা দিন।
- আপনার শিশুর জন্মের ২১ দিনের মধ্যে আপনাকে ফর্মটি পূরণ করতে হবে।
- পোস্ট করুন, অফিসে জন্মের সময় এবং তারিখ, বাবা–মায়ের নাম, লিঙ্গ, ঠিকানা, নার্সিং হোম / হাসপাতাল ইত্যাদি বিশদ যাচাই করা হবে।
- যদি যাচাইকরণ সব ঠিক থাকে, আপনি ৭–১৫ দিন পরে আপনার ঠিকানায় প্রেরণ করা জন্ম শংসাপত্রটি পাবেন।
- ঠিক নিশ্চিত হতে হবে, ৭ দিন পরে অফিসে ফলোআপ করতে হবে।
- যদি আপনার কোন তাড়া থাকে তবে আপনি কোন কোন ক্ষেত্রে একটি সেলফ–অ্যাড্রেস খাম সরবরাহ করলে এক সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে জন্ম সংশাপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।
যদি আপনার শিশুর জন্মের ২১ দিনের মধ্যে নিবন্ধন না হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এটি জারি করার জন্য পুলিশ যাচাইকরণ হবে। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় নেয় এবং তাই আপনার ছোট্ট সন্তানের জন্মের সাথে সাথেই তার জন্ম শংসাপত্রের জন্য নিবন্ধন করা উচিত।
নিবন্ধন করার পর জন্ম শংসাপত্র পেতে কত সময় লাগে?
যথাযথভাবে প্রক্রিয়া করার পরে জন্মের শংসাপত্রটি পেতে সাধারণত ৭ দিন থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে সময় লাগবে। আপনি যদি এটি অফলাইনে করেন, তবে এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া হতে পারে। তবে, অনাবাসী ভারতীয়রা (এনআরআই) সাধারণত এইভাবে করতে পছন্দ করেন, কারণ পাসপোর্ট অফিস পৌর কর্পোরেশনের দেওয়া প্রমাণ গ্রহণ করে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কার জন্ম সংশাপত্র না থাকলে কী হবে। উত্তরটি হল, সে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি পাবেন না এবং তাই সে অধিকার ও সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন না। তারা বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বা পাসপোর্ট পেতে পারবে না। একটি জন্ম শংসাপত্র এই পৃথিবীতে আপনার অস্তিত্বের স্ট্যাম্প এবং তাই প্রতিটি মানুষের পক্ষে এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সুতরাং জটিলতা, লেট–ফি বা ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া এড়াতে জন্মের ২১ দিনের মধ্যেই – সর্বদা আপনার সন্তানের জন্ম শংসাপত্রটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সম্পন্ন করুন।