শিশুদের অ্যাজমা বা হাঁপানি

শিশুদের অ্যাজমা বা হাঁপানি

অ্যাজমা বা হাঁপানি হল শ্বাসকষ্ট জনিত সবচেয়ে সাধারণ একটি ব্যাধি এবং এটি ছোট শিশু এবং অল্প বয়সী বাচ্চাদের উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে।তবে যথাযথ যত্ন এবং চিকিৎসাগত সহায়তা আপনার সন্তানের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতে পারে।আমরা এখানে আলোচনা করব অ্যাজমার বিভিন্ন কারণ ও উপসর্গগুলি এবং তার জন্য উপলব্ধ বিভিন্ন চিকিৎসা বিকল্পগুলি সম্পর্কে।

অ্যাজমা কি?

অ্যাজমা বা হাঁপানি হল শ্বাস-প্রশ্বাসের অ্যালার্জেন এবং উত্তেজক পদার্থের প্রতি উচ্চ সংবেদনশীল হওয়ার কারণে শ্বাসনালীর দুরারোগ্য ব্যাধি।অন্য কথায়, অ্যাজমাকে এমন এক চিকিৎসাজনিত অবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে যেখানে শ্বাসনালী ফুলে ওঠে এবং তা ফুসফুসে বায়ুপ্রবাহে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।বিভিন্ন উত্তেজক এবং পরিবেশ দূষণকারী (পরাগ রেণু, ধূলো, তামাক জাতীয় পণ্যের ধোঁয়া ইত্যাদি)পদার্থ থেকে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যে প্রতিক্রিয়া দেখায় তার ফলে অ্যাজমা হয়ে থাকতে পারে।অতএব অ্যাজমা এবং অ্যালার্জির মধ্যে একটি দৃঢ় যোগসূত্র আছে।এটি প্রায়ই দেখা গেছে যে, যে সকল লোকেরা অ্যাজমায় ভুগে থাকেন, তাদের শ্বাসনালী উচ্চ সংবেদনশীল হয়ে থাকে এবং সামাণ্য উত্তেজক বা অ্যালার্জেনগুলিতেও তাদের শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

একদম ছোট শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের শ্বাসনালীটি তুলনামূলক বড় বাচ্চাদের তুলনায় ছোট হয়।আর ছোট শ্বাসনালীগুলি ভাইরাল বা ছত্রাক সংক্রমণ ও শ্লেষ্মার দ্বারা সহজেই অবরুদ্ধ হয়ে যায় বা শ্বাসনালী আঁট হয়ে যায় এবং তা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।সুতরাং, 12মাসের কম বয়সী শিশুদের অ্যাজমা হলে তা মারাত্মক জটিল সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

এটি শিশুদের ক্ষেত্রে কতটা সাধারণ?

প্রায় 10-12% বাচ্চাদের মধ্যেই অ্যাজমা প্রভাব ফেলতে পারে, আর এই পরিসংখ্যানটা ক্রমশ বাড়ছে।সাধারণত একটি বাচ্চার মধ্যে প্রথম অ্যাজমার লক্ষণ দেখা দিতে পারে মোটামুটি তার 5 বছর বয়সের আশেপাশের মধ্যে, তবে এটি বড় না হওয়া পর্যন্ত ধরা নাও পড়তে পারে।শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যাধির অন্যতম প্রধান একটি কারণ হল অ্যাজমা।

শিশুদের অ্যাজমা বা হাঁপানি হওয়ার কারণগুলি কি?

অ্যাজমার ঠিক যথার্থ কারণটি জ্ঞাত নয়, তবে এটি নিম্নলিখিত দুটির একটি কারণে হয়ে থাকতে পারেঃ

অ্যালার্জি ভিত্তিক অ্যাজমা বা হাঁপানি

অ্যালার্জি-ভিত্তিক অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণ হল সংবেদনশীল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। যদি কোনও শিশুর অ্যালার্জি ভিত্তিক অ্যাজমা হয়ে থাকে তবে সে নির্দিষ্ট কিছু অ্যালার্জেনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে থাকতে পারে।এই সকল অ্যালার্জেনের উৎসগুলি এক শিশু থেকে আরেক শিশুর ক্ষেত্রে আলাদা হতে পারে। কিছু সাধারণ উৎসগুলি হল পরাগ রেণু, ধূলিকণা, পোষা প্রাণীর লোম অথবা লালা।

অ-অ্যালার্জিক অ্যাজমা

অ্যাজমা বা হাঁপানি অ্যালার্জি ছাড়াও আরও অন্যান্য কিছু কারণের জন্যও হয়ে থাকতে পারে যার মধ্যে থাকতে পারে পারিবারিক ইতিহাস(জেনেটিক কারণ সমূহ) অথবা শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ।

শিশুদের অ্যাজমার লক্ষণগুলি কি কি?

নতুন মা-বাবারা প্রায়শই এ ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে ওঠেন যে কীভাবে তারা বুঝবেন যে তাদের বাচ্চার মধ্যে অ্যাজমা আছে কিনা।এর উত্তর হল এর লক্ষণগুলির সন্ধান করা।শিশুদের অ্যাজমার কিছু লক্ষণ নিম্নরূপঃ

দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণ

আপনার বাচ্চার যদি অ্যাজমা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি হয়ত তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করে থাকতে পারেন।একটি তিন মাসের বাচ্চার সাধারণ শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণটি হল প্রতি মিনিটে 30-60 বার শ্বাস ফেলা।এই শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরণটি তিন মাস থেকে পরিবর্তিত হয় এবং তা প্রতি মিনিটে হয়ে দাঁড়ায় 20-40 বার মত।তবে অ্যাজমা আছে এমন কোনও শিশুর মধ্যে হয়ত তার শ্বাস নেওয়াটি প্রতি মিনিটে 50% মত বাড়তে দেখা যেতে পারে।

বুক শক্ত হয়ে থাকা

অ্যাজমা বা হাঁপানি যুক্ত কোনও শিশুর বুক শক্ত হয়ে যেতে পারে বর্ধিত বক্ষ পেশীগুলির কারণে।

শ্রমসাধ্য শ্বাস গ্রহণ

আপনি আপনার শিশুকে ঠিকমত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সংগ্রাম করতে এবং পেটের দ্রুত আন্দোলন হতে লক্ষ্য করে থাকতে পারেন এবং এছাড়াও প্রসারিত নাসারন্ধ্র এর একটি দৃশ্যমান লক্ষণ।

ভীষণ মাত্রায় কাশি

আপনার বাচ্চাকে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে কাশতে লক্ষ্য করে থাকতে পারেন।এই কাশির প্রবণতাটি আরও বেশি হয়ে উঠতে পারে সন্ধ্যার শেষের দিকে অথবা রাতের সময়।

শোঁ শোঁ শব্দ

অ্যাজমা আছে এমন শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় একটা শোঁ শোঁ শব্দ হতে থাকবে।এই শোঁ শোঁ শব্দটি হয়ে থাকে কষ্টদায়ক শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য।

খেতে সমস্যা

অ্যাজমা থাকা কোনও শিশুর খেতে সমস্যা হতে দেখা যেতে পারে।এটি তার শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।

ক্লান্তি এবং আলিস্যি

আপনার বাচ্চার যদি অ্যাজমা হয়ে থাকে তবে তাকে সাধারণের তুলনায় কম কার্যকর লক্ষ্য করতে পারেন।

কান্নার ক্ষীণ শব্দ

অ্যাজমা বা হাঁপানি আছে এমন শিশুদের কান্নাটি হয় ক্ষীন শব্দে, অথবা তাদের কান্নাটি সাধারণ শিশুদের কান্নার তুলনায় ভীষণ দুর্বল, ক্ষীন এবং অস্পষ্ট হয়ে থাকে।

ত্বক এবং নখ নীলচে এবং বিবর্ণ হয়ে যাওয়া

অ্যাজমা থাকা শিশুদের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকার দরুণ আপনার সন্তানের ঠোঁট অথবা নখের আস্তরণ নীলচে অথবা বিবর্ণ দেখায়।

এগুলি হল শিশুদের মধ্যে অ্যাজমা বা হাঁপানি হওয়ার বেশ কিছু লক্ষণ, যদি আপনার সন্তান এই চিকিৎসা জনিত অবস্থাটিতে ভুগে থাকে তবে তা নির্ধারণ করতে আপনাকে এগুলি সহায়তা করবে।

অ্যাজমা বা হাঁপানির জরুরীকালীন অবস্থাগুলি সম্পর্কে জেনে নিন

অ্যাজমার আক্রমণটি হালকা, মাঝারি অথবা তীব্র হতে পারে।হালকা অ্যাজমার আক্রমণে একটি শিশু স্বাভাবিক বোধ করতে পারে এবং ভালভাবেই ক্রিয়াকলাপ করতে পারে।তবে মাঝারি বা তীব্র অ্যাজমার আক্রমণে আপনার শিশুর মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে পারেঃ

শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যাওয়া(ঘুমের সময় প্রতি মিনিটে 40 বারের বেশি)।

বুক বড় হয়ে ওঠে

  • ত্বকের বর্ণ পরিবর্তিত হয়(ঠোঁট এবং নোখের চারপাশ নীলচে অথবা বিবর্ণ হয়ে যায়)
  • খাওয়া অথবা চোষণ বন্ধ করে দেয়
  • নাসারন্ধ্র প্রসারিত হয়ে ওঠে
  • মৃদু এবং ক্ষীণ কান্না

আপনি যদি আপনার শিশুর মধ্যে উপরোক্ত লক্ষণ এবং উপসর্গগুলির প্রকাশ লক্ষ্য করে থাকেন, সঠিক পন্থায় সেটির যত্ন নিন।

কোন শিশুদের অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি?

আপনার ছোট্ট শিশুটি কিম্বা বাচ্চার মধ্যে অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি হয় নিম্নোলিখিত পরিস্থিতিগুলিতেঃ

যদি সেটি পরিবারের কারুর মধ্যে বিদ্যমান থাকে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাজমা বা হাঁপানি বংশগত কারণে হয়ে থাকে এবং তাছাড়াও যদি মা-বাবার মধ্যে কারুর অ্যাজমা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে বাচ্চার মধ্যেও সেটি হওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।আপনার যদি কোনও নিকট আত্মীয়ের মধ্যে অ্যাজমা থাকে সেক্ষেত্রেও আবার আপনার বাচ্চার মধ্যে অ্যাজমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

অ্যালার্জি

আপনার শিশু যদি বায়ুবাহিত পদার্থ যেমন ধূলিকণা, পরাগরেণু, উদ্ভিদ তন্তু, ছত্রাক এবং ছত্রাকের বীজের প্রতি অ্যালার্জিপ্রবণ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার শিশুর অ্যাজমা হওয়ার একটা উচ্চ সম্ভাবনা থাকে।অ্যাজমা হওয়ার 60% এর বেশি ক্ষেত্রেই সেটি অ্যালার্জি জনিত অ্যাজমা বা হাঁপানি হয়ে থাকে।আপনার শিশু যখন এই সকল অ্যালার্জেনগুলির কোনও একটিতে প্রশ্বাস গ্রহণ করে, তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি অতি দ্রুত কাজ করতে থাকে।আর তারই পরিণামস্বরূপ শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং দ্রুত শ্লেষ্মা জমতে থাকে যা অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রকোপকে বাড়িয়ে তোলে।

একজিমা

একজিমা এবং অ্যাজমার মধ্যস্থ পারস্পরিক সম্পর্কটির পশ্চাতে একটি বৈজ্ঞানিক প্রমাণও আছে।এর অর্থ হল এই উভয় ব্যাধিই একই ধরণের মিউট্যান্ট জিনের কারণে হয়ে থাকে।অতএব, আপনার শিশু যদি একজিমায় ভুগে থাকে, সেক্ষেত্রে তার অ্যাজমা হওয়ারও সম্ভাবনা 20% থেকে যায়।

উচ্চ সংখ্যক ইওসিনোফিল

আপনার শিশুর যদি অ্যালার্জি প্রবণতা থাকে, সেক্ষেত্রে তার মধ্যে ইওসিনোফিলের (এক ধরণের শ্বেত রক্তকণিকা) সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।আপনার শিশুর রক্ত এবং লালাতে চার শতাংশের বেশি সংখ্যক ইওসিনোফিল থাকলে তা তাকে হাঁপানি বা অ্যাজমায় আক্রান্ত করে তোলে।

সাঁ সাঁ করে নিঃশ্বাস ফেলা

প্রতিটি ঠান্ডা লাগার ক্ষেত্রে যদি আপনার শিশুকে সাঁ সাঁ করে নিঃশ্বাস ফেলতে লক্ষ্য করে থাকেন, তার মানে হল আপনার ছোট্টটির নাসাপথ অবরুদ্ধ হয়ে গেছে।আর এই অবস্থাটি শিশুদের মধ্যে অ্যাজমা বা হাঁপানি হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।

খাদ্য জনিত অ্যালার্জি

খাদ্য জনিত অ্যালার্জি থেকে অ্যাজমা হওয়ার ঘটনা খুব একটা সাধারণ নয়।তবে কয়েকটি নির্দিষ্ট খাদ্য অ্যালার্জি থেকে আপনার শিশুর মধ্যে অ্যাজমা বা হাঁপানি বিকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা একটা থাকে।

শিশুদের মধ্যে অ্যাজমা কীভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে?

যদি আপনার ডাক্তারবাবু আপনার শিশুর মধ্যে অ্যাজমা বা হাঁপানি আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন, তবে তিনি সেটি নির্ণয়ের জন্য নিম্নোলিখিত পরিমাপগুলি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনঃ

এর লক্ষণগুলির ব্যাপারে অনুসন্ধান

আপনার শিশুর মধ্যে প্রকাশ পেতে পারে এমন অনেক বিভিন্ন ধরণের আজমা বা হাঁপানি সংক্রান্ত লক্ষণ বা উপসর্গের ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

পরিবারের চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাসের ব্যাপারে চর্চা

আপনাকে হয়ত আপনার পরিবারের চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাসের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হতে পারে।আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনাকে জিজ্ঞাসা করবেন যে আপনার পরিবারের কারুর আগে কখনও কোনও অ্যালার্জি, একজিমা অথবা অ্যাজমা ছিল কিনা।

বুকের এক্স-রে

ব্রঙ্কিওলসে কোনও বাধা, কলাগুলিতে ফোলাভাব অথবা মিউকাস বা শ্লেষ্মা জমে আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য আপনার ডাক্তারবাবু হয়ত আপনার ছোট্টটির বুকে একটি এক্স-রে করার প্রস্তাব দেবেন।

রক্ত পরীক্ষা

আপনার শিশুর রক্ত পরীক্ষা করানো হতে পারে তার ইওসিনোফিলের সংখ্যা নিরীক্ষণের জন্য।এর সংখ্যাটি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হল তা শিশুটির অ্যাজমা বা হাঁপানি হওয়াকেই সূচিত করে।

উপরে উল্লিখিত পরিমাপগুলি পরীক্ষা করার পরই এটি নির্ধারণ করা যায়।একবার রোগ নির্ণয় ক্রিয়াটি সম্পন্ন হলে, আপনার শিশুর জন্য আপনার ডাক্তারবাবু সবচেয়ে সেরা বিকল্পটির পরামর্শ দেবেন।

শিশুদের অ্যাজমা বা হাঁপানির ক্ষেত্রে চিকিৎসাগুলি

শিশুদের অ্যাজমা বা হাঁপানির ক্ষেত্রে চিকিৎসাগুলি

অ্যাজমার কোনও প্রতিকার নেই।এর ওষুধ এবং চিকিৎসাগুলি শুধুমাত্র এই ব্যাধির উপসর্গগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।এক্ষেত্রে এমন অনেক উপায় আছে যেগুলির দ্বারা আপনার শিশুকে এর ওষুধগুলি সরবরাহ করা যেতে পারে, যেমনঃ

  • নেবুলাইজার
  • ড্রাই-পাউডার ইনহেলার(DPI)
  • মিটারড-ডোজইনহেলার(MDI)
  • ইঞ্জেকশন

আর আপনি যদি ওষুধের সন্ধান করেন, তবে আপনার জানা উচিত যে অ্যাজমার ওষুধ সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকে, যেগুলি হল নিম্নরূপঃ

দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণের ওষুধ

প্রস্তাবিত নামানুসারেই এটি বোঝা যাচ্ছে যে, অ্যাজমা বা হাঁপানির উপসর্গগুলি প্রতিরোধ করার জন্য এই ওষুধগুলি শিশুদের দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করতে হতে পারে।আপনার বাচ্চার তীব্রতার উপর নির্ভর করে আপনার ডাক্তারবাবু সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হবেন যে কত দীর্ঘ সময়ের জন্য আপনার শিশুর সেই ওষুধগুলির প্রয়োজন হবে।

দ্রুত স্বস্তিদায়ক ওষুধ

শ্বাস্কষ্ট, সোঁ সোঁ শব্দে নিঃশ্বাস পড়া এবং বুকের মাংসপেশী শক্ত হয়ে ওঠা থেকে এই ওষুধগুলি দ্রুত স্বস্তি নিয়ে আসে।এই ওষুধগুলি MDI অথবা শিরায় ইঞ্জেকশান প্রদানের মধ্য দিয়ে পরিচালনা করা যেতে পারে।এগুলি হাঁপানির উপসর্গগুলি থেকে তৎক্ষণাৎ স্বস্তি আনে তবে সেগুলি দীর্ঘমেয়াদে উপকারিতা সরবরাহ করতে পারে না।

অ্যালার্জি প্ররোচিত অ্যাজমার ওষুধ

যদি অ্যাজমার আক্রমণের মূল অভিযুক্তকারীটি হয়ে থাকে অ্যালার্জিকারক বস্তুগুলি, সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারবাবু ওষুধের একটি ভিন্ন কোর্সের প্রস্তাব দেবেন। অ্যালার্জিজনিত হাঁপানির ওষুধগুলি দ্রুত স্বস্তি প্রদানকারী এবং দীর্ঘমেয়াদী হাঁপানির ওষুধগুলির সাথে একত্রে কাজ করে।

অ্যাজমা বা হাঁপানির উপসর্গগুলি হ্রাস করার ক্ষেত্রে কি কি করা যেতে পারে?

একজন মা-বাবা হিসেবে আপনার বাচ্চার হাঁপানি কীভাবে রোধ করা যায় অথবা শিশুদের অ্যাজমার লক্ষণগুলি হ্রাস করার জন্য কি কি ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন সে ব্যাপারে আপনি হয়ত চিন্তা করতে পারেন।ভাববেন না, এক্ষেত্রে আপনার সমস্যা সমাধানের কিছু সম্ভাব্য উপায় আছেঃ

  • এই সমস্যার কারণ হিসেবে দায়ী বিষয়গুলির(তামাকের ধোঁয়া, যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ইত্যাদি) থেকে আপনার বাচ্চাকে দূরে রাখুন।
  • আপনার শিশুর কক্ষটি পরিষ্কার এবং ধূলোমুক্ত রাখুন।
  • ধৌতকরণযোগ্য খেলনাগুলিই আপনার শিশুকে দিন এবং সপ্তাহে অন্তত একদিন সেগুলিকে ধুয়ে দিন।
  • পোষ্যগুলির থেকে আপনার শিশুকে দূরে রাখুন
  • প্রয়োজনবোধে একটি এয়ার পিউরিফায়ার এবং হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন।
  • অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে এ ধরণের খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন।

উপরিল্লিখিত সকল বিষয়গুলিই হাঁপানির উপসর্গগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।তবে আপনার শিশুর মধ্যে আপনি যে মুহূর্তে অ্যাজমার কোনও লক্ষণের প্রকাশ লক্ষ্য করবেন অনতিবিলম্বে তৎক্ষণাৎ তাকে ডাক্তারবাবুর কাছে নিয়ে যান চিকিৎসাগত সহায়তার জন্য।

বাচ্চাদের অ্যাজমা বা হাঁপানি কীভাবে পরিচালনা করবেন?

অ্যাজমা বা হাঁপানি যে কেবল শিশুদের জন্যই যন্ত্রণাদায়ক তা নয় এটি মা-বাবাদের পক্ষেও কষ্টকর।নিম্নে এমন কিছু উপায়ের উল্লেখ করা হল যেগুলি আপনি প্রয়োগ করার চেষ্টা করতে পারেন আপনার সন্তানের হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যঃ

  • আপনার বাচ্চার হয়ে থাকা অ্যাজমা বা হাঁপানির জরুরী অবস্থার লক্ষণগুলি ভালভাবে বোঝার এবং লক্ষ্য করার চেষ্টা করুন।আপনার শিশুর হাঁপানির ধরণটি জানতে পারলে তা আপনাকে সেটি আরও ভালভাবে মোকাবিলা করতে সহায়তা করবে।
  • জরুরী অবস্থায় চটপট ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে এ ব্যাপারে যত্ন নেওয়ার একটি পরিকল্পনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • আপনার শিশুর যত্ন নেওয়ার পরিকল্পনাটির সাথে সংলগ্ন থাকুন এবং সেটি যথাযথভাবে বজায় রাখুন ও এ ব্যাপারে নিয়মিতভাবে আপনার ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলুন।
  • আপনার টলমল করে হেঁটে চলা ছোট্টটি অথবা আপনার এখনও স্কুলে ভর্তি না করা একদম ছোট বাচ্চাটি যদি কখনও শরীর খুব বেশি ভালো বোধ না করে তবে তা তাকে সেটি আপনাকে বলতে বা জানাতে শেখান।

অ্যাজমা বা হাঁপানি কি নিরাময়যোগ্য?

হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদি অবস্থা যা আপনার শিশুকে দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রভাবিত করতে পারে।হাঁপানির জন্য উপলব্ধ কোনও নিরাময় ব্যবস্থা নেই; তবে কিছু শিশুর মধ্যে আবার এই অ্যাজমার প্রকোপটি কমতে থাকে তারা বড় হয়ে ওঠার সাথে।এটি দেখা গেছে যে, 50% শিশু তাদের কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর সাথে সাথে হাঁপানি রোগটির প্রকোপ কাটিয়ে ওঠে।

এটি মা-বাবাদের বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে যদি যথাযথ যত্ন নেওয়া হয়ে থাকে তবে অ্যাজমা বা হাঁপানি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না। আপনার শিশুর মধ্যে এই দীর্ঘমেয়াদী ব্যাধিটির মোকাবিলা করতে যথাযথ চিকিৎসাগত সহায়তা এবং নির্দেশিকা গ্রহণ করুন।