In this Article
একটা ছোট শিশুর জন্য সবচেয়ে সেরা জিনিস হল তার মায়ের বুকের দুধ। তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এখনও বিকাশের পর্যায়ে থাকার কারণে তার হজম করার পক্ষে সবচেয়ে ভাল তার মায়ের দুধ। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) একটি শিশুর চূড়ান্ত পুষ্টি হিসাবে তার মায়ের দুধের পরামর্শ দিয়ে থাকে ও তার প্রচার করে।যাইহোক, যদি কোনও কারণের জন্য স্তন পান করানো সম্ভব না হয় অথবা শিশুর দুধের চাহিদা মেটানো সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে শিশু এক বছর পূর্ণ করার পর তাকে গরু কিম্বা মোষের দুধ দেওয়া যেতে পারে।
কখন আপনার শিশুর সাথে গরু বা মোষের দুধের পরিচয় করাবেন
শিশুদের অনাক্রম্য তন্ত্র বিকাশের পর্যায়ে থাকে যা ততটা শক্তিশালী নয়।সুতরাং তাদের পক্ষে পশুর দুধ হজম করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।যদিও গরু এবং মোষ দু–ধরণের দুধের মধ্যেই খনিজ এবং প্রোটিন আছে, তবুও সেগুলি বাচ্চাদের পক্ষে সহ্য হয় না কারণ এক বছরের আগে যদি সেগুলি বাচ্চাদের খাওয়ানো হয় তবে তা তাদের কিডনিতে প্রভাব ফেলতে পারে।সুতরাং বাচ্চাদের সাথে এ ধরণের দুধগুলি পরিচয় করানোর সবচেয়ে ভাল সময় হল তাদের এক বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর।
গরুর দুধ না মোষের দুধ– কোনটা বেশি ভাল?
1.ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থ
মোষের দুধের থেকে গরুর দুধের মধ্যে স্নেহ পদার্থ কম পরিমাণে থাকে।সুতরাং গরুর দুধের ঘনত্ব মোষের দুধের ঘন্ত্বের থেকে পাতলা হয়।আপনার 1 বছর বয়সী ছোটটির মোষের থেকে গরুর দুধ হজম করা সহজ হবে।
2.প্রোটিন
গরুর দুধের তুলনায় মোষের দুধে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি থাকে (মোটামুটি প্রায় 11% বেশি)।এই উচ্চ পর্যায়ের প্রোটিন উপাদান দেহে অপেক্ষাকৃত বেশি তাপ প্রতিরোধী আর তা ছোট শিশুদের পক্ষে হজম করাও শক্ত।অতএব বাচ্চাদের পেটের পক্ষে গরুর দুধ তুলনামূলকভাবে শীতল।এর পরেও যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে মোষের দুধ খাওয়াতে চান, তবে তা খুবই অল্প পরিমাণে দিন।
3.ক্যালসিয়াম
মোষের দুধ ক্যালসিয়ামের একটি অতি সমৃদ্ধ উৎস যা হাড়ের বিকাশের জন্য অপরিহার্য।বাচ্চাদের ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয় তাদের সার্বিক বৃদ্ধি এবং শক্তি ও উচ্চতা বিকাশের জন্য।সুতরাং ক্যালসিয়ামের একটা ভাল উৎস হিসেবে মোষের দুধ এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য ভাল।
4.তাপন মূল্য
মোষের দুধের সাথে তুলনায় গরুর দুধে কম ক্যালোরি থাকে– সুতরাং এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য মোষের দুধ সমৃদ্ধ হতে পারে।
5.ঘনত্ব
গরুর দুধের মধ্যে মোষের দুধের তুলনায় জলীয় পরিমাণ বেশি থাকে।সুতরাং এক্ষেত্রে গরুর দুধ খাওয়া উপকারি হয়ে উঠতে পারে যেহেতু এটি আপনার বাচ্চাকে হাইড্রেট রাখতে পারে।
6.ব্যবহারের মেয়াদ
উচ্চ পারক্সিডেস ক্রিয়ার কারণে মোষের দুধকে বেশীদিন ধরে প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যদিও গরুর দুধ আদর্শগতভাবে 1-2 দিনের মধ্যে খেয়ে ফেলা উচিত।
প্রতিটি শিশুই অদ্বিতীয় এবং তাদের হজম ক্ষমতাও পৃথক হয়ে থাকে।শিশুদের জন্য মোষের দুধকে পছন্দ করা যেতে পারে, এটি স্নেহ পদার্থ, প্রোটিন, ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ এবং এর তাপনমূল্যটি উচ্চ হওয়ার কারণে, যা এটিকে গরুর দুধের থেকে আরও বেশি উপকারি করে তুলেছে।তবে একটা শিশুর পক্ষে এটা হজম করাটা মুশকিলের হতে পারে।গরুর দুধ হজম করা সহজ এবং তা বাচ্চাদের আরও বেশি হাইড্রেট রাখে।একজন মা হিসেবে আপনি দু ধরণের দুধই অল্প মাত্রায় দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন, আর দেখুন কোনটা আপনার বাচ্চার সহ্য হয় ও তার জন্য বেশি উপযুক্ত হয়।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
1.কম ফ্যাট নাকি ফ্যাট হীন দুধ–কোনটা আপনার ছোট বাচ্চার জন্য ভাল?
আদর্শগতভাবে, টলমল করে হেঁটে চলা ছোট বাচ্চাদের হোল মিল্ক খাওয়ানো যেতে পারে কারণ এটা আপনার বাচ্চাকে সরবরাহ করতে পারে উচ্চ পরিমাণে ফ্যাট বা স্নেহ পদার্থ যা তার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এটা আবার এমনকি ভিটামিন A এবং D শোষণেও সাহায্য করে।কম ফ্যাট যুক্ত বা ফ্যাট হীন দুধ প্রোটিন এবং খনিজে সমৃদ্ধ হয় যা ছোট শিশু এবং বাচ্চাদের হজম করার পক্ষে শক্ত এবং তাদের কিডনির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।দুই বছর বয়স হওয়ার পর আপনি আপনার বাচ্চাকে কম ফ্যাট যুক্ত বা ফ্যাট হীন দুধ খাওয়াতে পারেন।
2.টলমল করে হেঁটে বেড়ানো ছোট শিশুর জন্য জৈব বনাম হরমোন–মুক্ত গরুর দুধ – কোনটি সেরা?
জৈব দুধ বা হরমোন–মুক্ত দুধ যে বাচ্চাদের জন্য একটা বেশ ভাল বিকল্প এমন কোনও প্রমাণ নেই।যাইহোক, আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ানো শুরু করতে চান, আপনি জৈব বিকল্পগুলির দিকে যেতে পারেন–এর জন্য আপনার পকেটটিকে আরেকটু ভারী রাখতে হতে পারে।এ ব্যাপারে যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হল খাওয়ানোর আগে দুধটাকে পাস্তুরাইজড করে নেওয়া প্রয়োজন। পাস্তুরাইজড না করা দুধের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পরজীবী বা প্যারাসাইট এবং ব্যাকটেরিয়া যা আপনার বাচ্চার ক্ষতি করতে পারে।পাস্তুরাইজড না করা দুধ খাওয়ার পর বাচ্চারা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে যা তাদের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নেয়।
আপনার ছোট শিশুটিকে পশুর দুধ খাওয়ানো শুরু করার টিপস
1.আপনার ছোট্টটিকে শুধুমাত্র তার খাওয়ার সময়েই দুধ দেওয়া শুরু করুন।
2.আপনার বাচ্চা যদি এর স্বাদ পছন্দ না করে, তবে তা বুকের দুধ অথবা ফরমূলার সাথে মিশিয়ে নিন, দেখুন সে কীরকম প্রতিক্রিয়া করে।
3.আস্তে আস্তে শুরু করুন।মনে রাখবেন যে এক বছর পার করার পরেই দুধ আপনার বাচ্চার খাদ্যের একটা অংশ হবে কিন্তু সেটা নিজেই একটা সম্পূর্ণ আহার হয়ে উঠবে না।
4.দুধে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয় কিনা সে দিকে দৃষ্টি রাখুন।যদি আপনি কোনওরকম উপসর্গ লক্ষ্য করেন যেমন ঠোঁট ফুলে যাওয়া, র্যাশ বেরোনো, বমি হওয়া, ডায়রিয়া অথবা মলের মধ্যে রক্ত– তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
5.আপনার বাচ্চাকে নিয়মিতভাবে দুধ খাওয়ানো শুরু করার আগে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিন।
সুতরাং, স্তন পান করানোটাই যদিও আপনার বাচ্চার পক্ষে সবচেয়ে সেরা বাজি, গরু কিম্বা মোষের দুধও বিকল্প হিসেবে তাকে দেওয়া যেতে পারে, তবে তা তার এক বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পরেই।পশু দুধের সাথে পরিচয় করানোর সময় আপনি অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির কথা মাথায় রাখবেন, যেমন কিডনির ওপর এর প্রভাব, সেটি পাস্তুরাইজ করে নেওয়ার ব্যাপারটি, কত ঘনঘন তার ফিডিং বোতল আপনাকে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে ইত্যাদি।দুধ হল ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস, সুতরাং সেটিকে অবশ্যই বিচক্ষণতার সাথে আপনার সন্তানের ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।যদিও গরু এবং মোষের দুধ নবজাত শিশুর জন্যও উপকারি হতে পারে, তবে আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকায় সেটা অন্তর্ভূক্ত করার আগে সর্বদা সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।