শিশুদের জন্য ডুমুর-স্বাস্থ্যকর উপকারিতা এবং দ্রুত রন্ধন প্রণালী

শিশুদের জন্য ডুমুর-স্বাস্থ্যকর উপকারিতা এবং দ্রুত রন্ধন প্রণালী

আমাদের সন্তানের জন্য রোজই এক খাবার রান্না করতে করতে এবং তাদের সেগুলি খাওয়াতে খাওয়াতে আমরা হয়ত এক ঘেয়ে হয়ে উঠতে পারি,সেই খাবারগুলি স্বাস্থ্যকর হওয়া সত্ত্বেও।এই সব ক্ষেত্রে,মায়েরা এ বিষয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার দিকে তাকিয়ে থাকবেন-এবং তাদের মনে সব থেকে বড় প্রশ্নটি হবে শিশুর জন্য সেগুলি করা কিছু ভাল হচ্ছে কি না।

ডুমুর হল সহজলভ্য আরও স্বাস্থ্যকর ফলগুলির মধ্যে একটি এবং বড়দের মধ্যে যাদের পাচন তন্ত্রের সমস্যা আছে তারা সাধারণত এটি খেয়ে থাকেন।প্রসঙ্গক্রমে,ডুমুর হল অন্যতম সেরা একটি স্বাস্থ্য সম্পূরক যেটি আপনি আপনার সন্তানকে দিতে পারেন-এতে আছে প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর উপাদান এবং খনিজ যা আপনার সন্তানকে ভাল ভাবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে।

শিশুদের জন্য ডুমুর কি নিরাপদ?

বাচ্চারা কি ডুমুর খেতে পারে?হ্যাঁ,ডুমুর বাচ্চাদের জন্য সর্বদাই নিরাপদ।এগুলি বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান এবং তন্তুর দুর্দান্ত উৎস যা আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সাহায্য করে।এছাড়াও ডুমুর আবার একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা জীবাণু বিরোধী মাধ্যম যা শিশুর রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থাপনার বিকাশে সাহায্য করতে পারে।এগুলি শিশুদের পাচন তন্ত্রের জন্যও খুব উপকারী।

ডুমুরের পুষ্টি মান

এখানে 100 গ্রাম ডুমুরের পুষ্টি মান দেওয়া হলঃ

পুষ্টি উপাদান প্রতি 100 g-এ মান
জল 79.1 g
ক্যালোরি 74
প্রোটিন 0.7 g
মোট লিপিড(ফ্যাট) 0.3 g
কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা 19.2 g
খাদ্যগত তন্তু 2.9 g
ভিটামিন C 2 mg
রাইবোফ্লাবিন 0.1 mg
ভিটামিন B-6 0.1 mg
ভিটামিন A 4 ug
থিয়ামিন 0.1 mg
নিয়াসিন 0.3 mg
ফোলেট 6 ug
ভিটামিন E 0.1 mg
ভিটামিন K 4.7 ug
ক্যালসিয়াম 35 mg
আয়রণ 0.4 mg
ম্যাগনেসিয়াম 17 mg
ফসফরাস 14 mg
পটাসিয়াম 232 mg
সোডিয়াম 1 mg
জিঙ্ক 0.2 mg

শিশুদের জন্য ডুমুরের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা

শিশুদের অন্য ডুমুরের অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারিতা রয়েছে,সেগুলির মধ্যে কিছু হল-

1.হজমে সহায়তা

এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও, ডুমুরগুলি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাগুলিকে প্রাকৃতিকভাবে কমা্তে পারার জন্য পরিচিত।শিশুদের পাচন তন্ত্র কেবল বিকাশশীল এবং দুর্বল হয় যখন তারা ছোট থাকে-ডুমুর একটা উৎকৃষ্ট সম্পূরক হতে পারে এবং এছাড়াও এগুলি পুষ্টিকর উপাদানগুলিকে আরও ভাল ভাবে শোষণ করতে সাহায্য করতে পারে।

2.ল্যাক্সেটিক বা রেচক ঔষধ

পাকা ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যগত তন্তু থাকে,এটি কোষ্ঠকাঠিণ্যের সমস্যায় সাহায্য করে থাকে।ডুমুরের মধ্যে খাদ্যগত তন্তু উচ্চ মাত্রায় থাকায় এটি একটি প্রাকৃতিক জোলাপ হিসেবে পরিচিত।

3.অপরিহার্য ভিটামিন এবং খনিজ

উপরের তালিকায় প্রমাণিত হিসেবে,ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর উপাদান এবং খনিজ আছে যা আপনার সন্তানের বৃদ্ধি এবং বিকাশে ভাল ভাবে সাহায্য করতে পারে।খনিজ যেমন কপার,আয়রণ,ম্যাগনেসিয়াম,পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামগুলি শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাদের শরীরের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য-এবং ডুমুর তাদেরকে সেই প্রয়োজনীয়তার পর্যাপ্ত পরিমাণকে সরবরাহ করতে পারে।

4.অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য

ডুমুর হল অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা জীবাণু বিরোধী বৈশিষ্ট্য সমন্বিত,যার অর্থ হল এই যে,এগুলি শিশুর অনাক্রম্যতাকে শক্তিশালী করে তোলে যেহেতু অল্প বয়সে সে দুর্বল থাকে।

5.লিভার বা যকৃৎ

অনুরূপভাবে,শিশুদের যকৃৎ ভীষণ দুর্বল হয়ে থাকে-তারা হেপাটাইটিস এবং জন্ডিসের মত অনেকগুলি সংক্রমণের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে।ডুমুর পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করে থাকে,এমনকি,ডাক্তাররাও এই সময়ে বাচ্চাদের জন্য শুকনো ডুমুরের রেসিপির পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

লিভার বা যকৃৎ

কখন আপনি শিশুদেরকে ডুমুর দিতে পারেন?

প্রতিবেদন অনুসারে ছয় মাসের প্রথম দিকে বাচ্চাদের জন্য ডুমুর বা আঞ্জির দেওয়া শুরু করা যেতে পারে-যাইহোক,এটিকে দেওয়ার আগে আপনার এ বিষয়টি নিশ্চিত করে নেওয়া উচিত যে,আপনার বাচ্চা অন্যান্য খাবারের সাথেও স্বচ্ছন্দ্যবোধ করে।

ডুমুরকে কীভাবে নির্বাচন এবং মজুত করবেন?

যখন তাজা ডুমুর চয়ন করবেন,পরীক্ষা করে নিন যে সেগুলির কোনও খুঁত বা চিহ্ন আছে কিনা যেগুলিকে হয়ত দেখা যেতে পারে সেগুলির বাইরের দিকের অংশে।শুকনো ডুমুরের বেলায় সর্বদা শক্তিশালী প্যাকেজিং এর সাথে নামী ব্র্যান্ডগুলি পছন্দের দিকে যান।ডুমুরগুলো যখন তাজা থাকে সেগুলি তখন বাইরে প্রায় পাঁচ দিনের জন্য এবং ফ্রিজের মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহের জন্য ভাল থাকতে পারে।সেগুলিকে একটা শুকনো জায়গায় রাখুন অথবা ফ্রিজের ভিতরে ঢুকিয়ে রাখুন।

বাচ্চাদের জন্য কীভাবে ডুমুর প্রস্তুত করবেন?

বাচ্চার বয়সের উপর এবং সে কঠিন খদ্যে অভ্যস্থ কিনা তার উপরে নির্ভর করে আপনার কাছে পছন্দ করার বিভিন্ন রেসিপি আছে।অন্যথায়,এটি তরল রূপে যেমন বাচ্চাদের জন্য ডুমুরের সিরাপ হিসেবে দেওয়া ভাল হতে পারে।

শিশুদের জন্য ডুমুরের স্বাস্থ্যকর রেসিপিগুলি

আপনি যখন আপনার সন্তানের খাবারে ডুমুরকে অন্তর্ভূক্ত করতে চান সেই সময় আপনি এই রেসিপিগুলি ব্যবহার করতে পারেন।

1.শিশুদের জন্য তাজা ডুমুর পিউরি

যদি শিশু চিবানোর জন্য এবং এখনও কঠিন খাবার খাওয়ার মত যথেষ্ট বড় না হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি দারুণ।

উপকরণ

দুটি তাজা ডুমুর

পদ্ধতি

এটি তৈরী করা মোটামুটি সহজ।প্রথমে ডুমুরগুলিকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে।তারপর সেগুলিকে কেবল একটা ব্লেন্ডারে নিয়ে ব্লেন্ড করুন একটা মসৃণ পিউরি না হওয়া পর্যন্ত।আপনার সন্তানের খাওয়াটাকে সহজ করে তোলার জন্য আপনি আবার এটিকে পোরিজ বা পুডিং-এর সাথেও যোগ করতে পারেন।

শিশুদের জন্য তাজা ডুমুর পিউরি2.বেকড ডুমুর

যদি শিশু এর মধ্যে কঠিণ খাবারের স্বাদ আস্বাদন করে থাকে এবং ভাল ভাবে চিবোতে শিখে যায়,এই রেসিপিটি সেক্ষেত্রে একদম মানানসই।কারণ এটি তৈরী করাও সহজ।

উপকরণ

3 টি ডুমুর এবং অলিভ অয়েল(জলপাই তেল)

পদ্ধতি

ওভেনটিকে আগে থেকে গরম করে রাখুন,এবং ডুমুরগুলির উপরে অলিভ অয়েলের প্রলেপ লাগিয়ে নিয়ে সেগুলিকে ওভেনের ভিতরে প্রতিস্থাপন করুন।এরপর সেটিকে বেক হতে দিন যতক্ষণ না ডুমুরের খোসাটি নরম হয় এবং কুঞ্চিত হয়ে যায়।এবার ডুমুরগুলিকে চটকে নিয়ে আপনার ছোট্ট সোনাকে খাওয়ান।

বেকড ডুমুর3.ডুমুরের মিল্কশেক

এটি তৈরী করা সহজ,এবং আপনার সন্তান এটিকে আরও চাইতে থাকবে।

উপকরণ

6 টি তাজা ডুমুর,বড় দু চামচ মধু এবং 300 মিলি দুধ

পদ্ধতি

প্রথমে ডুমুরগুলিকে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন,এরপর আপনি সাধারণ ভাবেই সমস্ত উপকরণগুলিকে মিক্সচারে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন এবং ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা পরিবেশন করুন।

ডুমুরের মিল্কশেক4.ডুমুরের জল

ভারতীয় পরিবারগুলিতে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী রেসিপি কোষ্ঠকাঠিণ্যের জন্য।

উপকরণ

ডুমুর এবং জল

পদ্ধতি

যদি ডুমুরগুলি তাজা হয়ে থাকে তবে শুধুমাত্র জলের মধ্যে সেগুলিকে সারারাত ধরে ভিজিয়ে রাখুন এবং তরলটিকে ছেঁকে নিয়ে বাচ্চাকে দিন।নতুবা শুকনো ডুমুরগুলিকে নিয়ে জলের মধ্যে ফোটাতে থাকুন যতক্ষণ না জলটি বাদামী বর্ণ ধারণ করে,এবং শিশুদেরকে সেটি খাওয়ান।

ডুমুরের জল5.শুকনো ডুমুরের পিউরি

যে সকল শিশুরা এখনও পর্যন্ত কঠিণ খাবারের সাথে স্বাচ্ছন্দ্য হয়ে ওঠে নি,সেই সকল শিশুদের জন্য এই ডুমুর পিউরিটিও অত্যন্ত উপযুক্ত।

উপকরণ

ডুমুর এবং ফরমূলা বা কৌটার দুধ যদি প্রয়োজন হয়

পদ্ধতি

প্রথমে,ডুমুরগুলি থেকে 2-3 টি নিয়ে গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন।তারপরে এই জল সমেত ডুমুরগুলিকে একটা মসৃণ পিউরিতে ব্লেন্ড করে নিন।আপনি এমনকি এর সাথে বুকের দুধ অথবা ফরমূলা দুধও যোগ করতে পারেন পিউরিটিকে মোলায়েম করে নেওয়ার জন্য।

শুকনো ডুমুরের পিউরিশিশুদের জন্য ডুমুর হল পুষ্টির এক দূর্দান্ত উৎস এবং শিশুদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটায় এবং পরিপাকের বিকাশে সাহায্য করে থাকে।যাইহোক,আপনি যে রেসিপি চয়ন করুন না কেন তা যেন আপনার সন্তানের তড়কা এবং হেঁচকি এড়িয়ে চলার জন্য উপযুক্ত হয় সে ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করুন।