শিশুদের জন্য নারকেল দুধ-উপকারিতা এবং রন্ধন প্রণালী

শিশুদের জন্য নারকেল দুধ-উপকারিতা এবং রন্ধন প্রণালী

দক্ষিণ ভারতীয়দের মধ্যে অসম্ভব প্রিয়, গঠনে ক্রীম জাতীয় ও স্বাদে ভরপুর এই পানীয়টি, এবং এটি ছাড়া অনেক খাদ্যপদই অপূর্ণ থেকে যায়।এ ব্যাপারে যতটা আপনার বাচ্চার জন্য চিন্তিত হন,হ্যাঁ,আপনি আপনার সন্তানকে নারকেল দুধ দিতে পারেন যেহেতু এটির সাথে নানা উপকারিতা সংশ্লিষ্ট থাকে।যাইহোক,আপনার বুকের দুধের বিকল্প হিসেবে এটিকে না দেওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করুন,যেহেতু এটির মধ্যে বেশীরভাগ পুষ্টিই থাকে না যেগুলি আপনার সন্তান আপনার বুকের দুধ থেকে পেয়ে থাকে।

নারকেল দুধ কি?

বেশ কিছু জনপ্রিয় বিশ্বাসের বিপরীতে,নারকেল দুধ প্রযুক্তিগত ভাবে দুধনয়। এমনকি যদিও এটির রঙ এবং গঠন দুধের ন্যায়,এই পানীয়টি হল নারকেল জল এবং নারকেল শাঁসের মিশ্রণ।নারকেলের শাঁস বা মাংসকে প্রথমে কুড়িয়ে নিয়ে ফুটানো হয়,এবং তারপর নারকেল দুধটি নিষ্কাশিত হওয়া পর্যন্ত সেটিকে ভালোকরে চিপে নিংড়ে নেওয়া হয়।

শিশুদের জন্য কি নারকেল দুধ ভাল?

নারকেল দুধ পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ।এটির মধ্যে যে ফ্যাট থাকে তার বেশীরভাগটাই শরীরের জন্য ভাল।মস্তিষ্কের বিকাশ,ইনসুলেশন এবং স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য শিশুদের অপরিহার্য ফ্যাটের প্রয়োজন।এছাড়াও নারকেল দুধে আয়রণ,ম্যাগনেসিয়াম,জিঙ্ক,ভিটামিন C এবং E এর মত বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ থাকে।এই সকল পুষ্টিগুলিই আপনার সন্তানের ভালো স্বাস্থ্য,বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধের শক্তি নিয়ন্ত্রণে সাহায্যের জন্য উচ্চ মাত্রায় উপকারী।এছাড়াও শরীরের উপর নারকেল দুধের একটা শীতল প্রভাব আছে,ঠিক এই কারণের জন্যই ডাক্তাররা গ্রীষ্মকালে এটিকে পান করার সুপারিশ করে থাকেন।

নারকেল দুধের পুষ্টি মান

প্রতি 100 গ্রামের পুষ্টি মান
প্রোটিন 2.3 g
খনিজঃ

  • আয়রণ
  • জিঙ্ক
  • পটাসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ক্যালসিয়াম
  • ফসফরাস
 

1.6 mg

0.67 mg

263 mg

37 mg

16 mg

100 mg

ভিটামিন

  • থিয়ামিন
0.03 mg

 

শিশুদের জন্য নারকেল দুধের স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি

এখানে দেওয়া হল কেন আপনি আপনার আদরের ছোট্ট সোনার খাবারের মধ্যে নারকেল দুধ অন্তর্ভূক্ত করা অবশ্যই বিবেচনা করবেন

শিশুদের জন্য নারকেল দুধের স্বাস্থ্যকর উপকারিতাগুলি1.অপরিহার্য ফ্যাটের সমৃদ্ধ উৎস

নারকেল দুধে আছে উচ্চফ্যাটজাত উপাদান,এবং এই ফ্যাটগুলি ভাল ধরনেরস্যাটুরেটেড বা সম্পৃক্ত,মনোআনস্যাটুরেটেড,এবং পলিআনস্যাটুরেটেড।এগুলির সবগুলিই মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে,এবং আপনার বাচ্চার এগুলির প্রয়োজন আছে যেহেতু শৈশবকালে মস্তিষ্কের বিকাশ অনবরত দ্রুত গতিতে হতে থাকে।

2.ভিটামিন এবং খনিজ

আপনার সন্তানের সার্বিক বিকাশের জন্য ভিটামিন এবং খনিজগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, এবং নারকেল দুধ ঠিক সেগুলি দ্বারাই পরিপূর্ণ।পটাসিয়াম এবং সোডায়িম যৌথভাবে কাজ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে।ভিটামিন C দৈহিক কলার এবং লহিত রক্ত কণিকার মেরামতে এবং বিকাশে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।এটি স্বাভাবিকভাবে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।ভিটামিন E একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ গুলিকে দূরে ঠেলে রাখতে সাহায্য করে।

3.একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে

একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ব্যাকটেরিয়া,ভাইরাস এবং জীবাণুগুলির সাথে যুদ্ধ করে সেগুলির থেকে আপনার শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে,এবং নারকেল দুধ দূর্দান্ত একটা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করে।নারকেল জল হল এই দুধের একটা অংশ এবং এই জলের মধ্যে থাকে লিপিড যেগুলি অ্যান্টিবডিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ বন্ধে সাহায্য করতে পারে।

4.গরু/ছাগল দুধের একটি বিকল্প

কিছু শিশু আবার ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হয়ে থাকে এবং তার ফলে গরু অথবা ছাগলের দুধে তাদের এলার্জি থাকে।এক্ষেত্রে নারকেল দুধ একটা দূর্দান্ত পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।যাইহোক,নারকেল হল একটি সম্ভাব্য এলার্জেন এবং যখন একটি ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু শিশু নারকেল দুধ খেতে পারে,অন্য ধরনের এলার্জির সম্ভাবনা সম্পূর্ণ রূপে উড়িয়ে দেওয়া যায় না,যদিও শিশুদের মধ্যে নারকেল দুধের এলার্জি খুবই দুর্লভ।

5.অন্ত্রের কীটগুলিকে মারতে সাহায্য করে

অসংখ্য ডাক্তার আপনার সন্তানকে কীটমুক্ত করতে নারকেল দুধের সুপারিশ করে থাকেন।শিশুরা অন্ত্রের কীট প্রবণ হয়।নারকেল দুধে থাকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল লিপিড,ক্যাপ্রিক অ্যাসিড এবং লারিক অ্যাসিড যা এই কীটগুলিকে মেরে ফেলতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবে আপনার সন্তানের অনাক্রম্যতাতে সাহায্য করে।

আপনি কি বুকের দুধ বা ফরমূলা বা কৌটার দুধের বিকল্প রূপে নারকেল দুধ দিতে পারেন?

নারকেল দুধে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারিতা আছে,কিন্তু এটি বুকের দুধ বা ফরমূলা দুধের বিকল্প হিসেবে আপনার ছোট্ট সোনার জন্য যথেষ্ট নয়;এখানে বলা হল সেটা কেন

1.যথেষ্ট প্রোটিন উপাদান থাকে না

দেহের পেশী এবং কলার মেরামত এবং বিকাশের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।একটি শিশুর প্রতিদিন নূন্যতম 11 গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন হয় এবং পরিমাপ অনুযায়ী 100 গ্রাম নারকেল দুধ থেকে কেবলমাত্র 2 গ্রাম মত প্রোটিন পাওয়া যায়।এটি স্পষ্ট করে দেয় যে,এটি আপনার বাচ্চার জন্য যথেষ্ট নয়।

2. যথেষ্ট ক্যালসিয়াম উপাদান থাকে না

হাড় এবং দাঁতের বিকাশের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন,এবং আপনার শিশুর যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম প্রয়োজন, নারকেল দুধে আছে তার মাত্র 10% প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম উপাদান।

3.আপনার সন্তানের ক্ষুধা দমন করতে পারে

নারকেল দুধ হল অপরিহার্য ফ্যাট এবং ক্যালোরিতে ভরপুর এবং এটা আপনার সন্তানকে বেশ কিছু ঘন্টার জন্য পরিপূর্ণ রাখতে পারে সত্যি সত্যি যথেষ্ট পুষ্টি সরবরাহ না করেই, যেটি আপনার সন্তানের প্রয়োজন।শিশুর পেট ভর্তি হওয়া থেকেই সে বুকের দুধ অথবা অন্য খাবার খেতে প্রত্যাখ্যান করবে কয়েক ঘন্টার জন্য।

আপনার ছোট বাচ্চার খাদ্যে কীভাবে নারকেল দুধের পরিচয় করাবেন?

আপনার বাচ্চা নারকেল দুধ খাওয়া শুরু করতে পারে যখন সে প্রায় আট মাস বয়সের হবে অথবা যখন সে কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করে দেবে।প্রথমবার আপনি আপনার বাচ্চাকে নারকেল দুধ দিন কেবলমাত্র দুই চামচ দিয়ে শুরু করে,যদি তার এতে কোনও এলার্জির প্রতিক্রিয়া থাকে।এরপর থেকে আপনি তাকে গরু বা ছাগলের দুধের পরিবর্তে আপনার বাচ্চার ফরমূলার সাথে মিশিয়ে নারকেল দুধ দেওয়া শুরু করতে পারেন।আপনি নারকেল দুধকে সেদ্ধ এবং চটকানো ভাত বা আলুর সাথে যোগ করতে পারেন,সামান্য চিনির সাথে এটিকে কিছুটা মিষ্টি করে তুলতে পারেন।যাইহোক,খুব বেশি চিনি দাঁতের সমস্যার কারণ হতে পারে,সুতরাং,এটিকে অর্ধ চাচামচের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।আপনি আবার নারকেল দুধ এবং স্ট্রবেরী,আম ও কলার মত ফলগুলি দিয়ে মিল্ক শেকও বানাতে পারেন।নারকেল দুধ এবং তা দিয়ে তৈরী শিশুখাদ্য রেসিপিগুলি আজকের দিনে ভীষণ সমাদৃত,যেহেতু নারকেল দুধে একটা ক্রীম ভাব,উচ্চ সমৃদ্ধি এবং সামান্য মিষ্টি স্বাদ আছে, যেটা বেশীরভাগ শিশুই ভালোবাসে।

আপনার ছোট বাচ্চার খাদ্যে কীভাবে নারকেল দুধের পরিচয় করাবেন?

বাড়িতে কীভাবে নারকেল দুধ বানাবেন?

আপনি দোকানে নারকেল দুধ পেতে পারেন কিন্তু এটা বাড়িতে তৈরী করে নেওয়া ভাল কারণ এতে আপনি নিশ্চিত থাকবেন যে,আপনার বাচ্চা কোনও প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষক খাচ্ছে না।এখানে দেওয়া হল কীভাবে আপনি বাড়িতে আপনার শিশুর জন্য তাজা নারকেল দুধ বানাবেন

উপকরণ

  • ছোবড়ামুক্ত একটা তাজা নারকেল
  • গরম জল
  • নারকেল জল

পদ্ধতি

  • নারকেলটাকে ফাটান এবং একটা বাটিতে নারকেল জলটাকে সংগ্রহ করুন এবং সেটিকে একপাশে সরিয়ে রাখুন।
  • ছোবড়া ছাড়ানো নারকেলটাকে কুঁড়িয়ে নিন এবং সেটিকে কিছুটা গরম জলের সাথে সেদ্ধ করে নিন।
  • সেদ্ধ করা নারকেলের শাঁস বা নারকেলের মাংসের সাথে নারকেল জলটি মেশান এবং একটা ঘন পেষ্টের রূপ হওয়া পর্যন্ত সেটিকে পিঁষে নিন।
  • এবার একটা পরিষ্কার রেশমের কাপড়ে এই পেষ্ট বা পিউরিটিকে ঢেলে নিয়ে ভালোকরে চিপে নিংড়ে নিন।
  • একটা পরিষ্কার বাটিতে নারকেল দুধটাকে সংগ্রহ করুন এবং এটাকে ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন।

আপনার দেহের উপর একটা শীতল প্রভাব রাখতে একটি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসেবে কাজ করা থেকে নারকেল দুধকে একটা মহান স্বাস্থ্যকর পানীয়ের জন্য পুরষ্কৃত করা যায়।সুতরাং এগিয়ে চলুন এবং আপনার সন্তানকে এই সুস্বাদ্য পানীয়ের সাথে পরিচয় করান।