শিশুদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি

শিশুদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি

আপনি যদি আপনার সন্তানকে স্তন পান না করিয়ে থাকেন,তবে যে স্বাস্থ্যগত সমস্যাটির দিকে আপনার লক্ষ্য রাখা উচিত তা হল ক্যালসিয়ামের ঘাটতিএকটি শিশুকে খাওয়ানোটা কোনও জটিল কাজ নয়,কিন্তু একটি শিশুর খাদ্য উৎসগুলি খুবই সীমিত,যা নিম্ন মানের পুষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।এছাড়াও বংশগত থেকে শুরু করে চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যাপারগুলি পর্যন্ত আরও অনেকগুলি বিভিন্ন ঝুঁকির কারণ রয়েছে,যেগুলির জন্যও আপনার শিশুর মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।ক্যালসিয়ামের ঘাটতিটি আসলে কি,এটি কীভাবে আপনার সন্তানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর থেকে বেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার উপায়টাই বা কি তার সন্ধান করুন।

একটি শিশুর জন্য ক্যালসিয়াম কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ক্যালসিয়াম প্রাথমিকভাবে হাড়ের যথাযথ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।আপনার শিশুটি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকার কারণে,তার অস্থির সার্বিক শক্তি বৃদ্ধিতে ক্যালসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এর একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের অস্থির ভর তাদের শৈশবকাল থেকে কৈশোরকাল পর্যন্ত প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম দ্বারা নিরূপিত হয়ে থাকে।এর সাথে আরও অতিরিক্তভাবে,ক্যালসিয়াম আবার মাংসপেশীর যথাযথ কার্যকারিতায়,হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় এবং স্নায়ুস্পন্দন স্থানান্তরে বা নার্ভ ইম্পালস ট্রান্সমিশনেও সহায়তা করে।

শিশুদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণসমূহ

  • সন্তান প্রসবের সময় কম অক্সিজেন সরবরাহ
  • ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ যেমন জেন্টামাইসিন,আপনার সন্তানের ক্যালসিয়াম মাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • সূর্যারশ্মিতে আপনার শিশুকে কম উন্মুক্ত করার কারণে তার দেহে ভিটামিন D এর অভাব দেখা দিতে পারে।এটিও আপনার সন্তানের দেহে ক্যালসিয়ামের মাত্রাকে হ্রাস করতে পারে,যেহেতু ভিটামিন D ক্যালসিয়ামের যথাযথ সঠিক শোষণে সহায়তা করে থাকে।
  • ডাইজর্জ সিন্ড্রোম নামক জিনগত ত্রুটির সাথে সংযুক্ত শিশুরা তাদের দেহে নিম্ন মাত্রার ক্যালসিয়ামে ভুগে থাকে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে যে কনজেনিটাল বা জন্মগত হাইপারথাইরয়েডিজম যুক্ত শিশুরা তাদের দেহে নিম্ন মাত্রার ক্যালসিয়ামে ভুগে থাকে।
  • গবেষণায় এটিও দেখা গেছে যে,নির্ধারিত সময়ের পূর্বে জন্মানো শিশুরা,বিশেষ করে 32 সপ্তাহের আগে জন্মানো শিশুদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • ডায়াবেটিক মায়েদের কারণে তাদের সন্তানের মধ্যে হাইপোক্যালসিমিয়া দেখা দেওয়ার ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু জল্পনা রয়েছে।একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে মাতৃ সংক্রান্ত হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে হয়ত মা এবং সন্তানের মধ্যে কিছু সম্পর্ক থাকতে পারে।
  • গরুর দুধে সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকাভুক্তদের ক্ষেত্রেও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।এটি প্রাথমিকভাবে দুটি কারণে হয়ে থাকে।প্রথমত,প্রথম দিকে শিশুর দেহ গরুর দুধ মধ্যস্থ ক্যালসিয়াম শোষণ করতে অক্ষম হয়,আর দ্বিতীয়ত,দুধ দেহে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে তার ফলে অস্থি থেকে ক্যালসিয়াম মুক্ত হয়ে দেহের আম্লিকতা হ্রাস করে,ফলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।

শিশুর দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণগুলি

শিশুদের দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণগুলি পর্যবেক্ষণ করা খুবই কঠিণ কাজ।অতএব, শিশুদের মধ্যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিগুলির কিছু লক্ষণ লক্ষ্য করার জন্য আপনার সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণঃ

  • ঘুমের সময় শিশুর বালিশের নিচে এবং তার চুলের উপরে ঘামের দাগ পর্যবেক্ষণ করা।
  • অস্বাভাবিক মেজাজ বিক্ষিপ্ত মানসিক আচরণ,অস্থিরতা এবং আপনার শিশুকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রটি অত্যন্ত অসুবিধাজনক হয়ে ওঠা
  • দেরি করে দাঁত গঠিত হওয়া এবং দাঁত ওঠা,আর একবার বড় হয়ে গেলে দাঁতগুলিতে আলগা ও অসম শ্রেণীবিন্যাসের ন্যায় ত্রুটিগুলি থাকা।
  • একটি ছড়ানো প্রশস্ত পেট,যা দেখে একটি ব্যাঙের পেটের অনুরূপ লাগতে পারে।
  • নিম্ন মাত্রার মানসিক একাগ্রতা
  • চারপাশের পরিবেশের প্রতি তার আগ্রহহীন দৃষ্টিভঙ্গী
  • ক্ষুধামান্দ্য
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রতি উচ্চ সংবেদনশীলতা
  • রাত্রে ঘুমের সমস্যা দেখা দেওয়া এবং স্বাভাবিকের তুলনায় আরও বেশি করে সমানে কাঁদতে থাকা,যা পরিণামে রাত্রিকালীন ত্রাসে পরিণত হয়।
  • মস্তিষ্কে কম অক্সিজেন সরবরাহের কারণে তড়কা এবং হৃদরোগে ভোগা
  • মুখমণ্ডলের অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গী ঠোঁট এবং জিভে আকস্মিক টান অনুভূত হওয়া,চোখে স্পন্দন অনুভব হওয়া ইত্যাদি।
  • দুর্বল বৃদ্ধি এবং অস্থিসন্ধিগুলিতে বিকৃতি
  • নিম্ন রক্তচাপ
  • হাতে এবং পায়ে খিঁচুনি যার উপসর্গগুলি অনেকটাই তড়কার অনুরূপ দেখতে।এটি একটি মারাত্মক লক্ষণ এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতিটি যদি এক্ষেত্রে শনাক্ত করা না যায় তবে তা শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

শিশুর দেহে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণগুলিশিশুদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতির চিকিৎসা যেভাবে করবেন

এমনকি আপনার শিশুর দেহে যদি ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমেও যায়,কয়েকটি সহজ পদক্ষেপের দ্বারা আবার সেটির সংশোধনও করা যেতে পারে,যেমনঃ

  • তাদের দেহে পর্যাপ্ত সূর্যারশ্মি পাওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করুন।ভিটামিন D যথাযথ সঠিকভাবে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে।
  • শিশুদের জন্য বুকের দুধ হল ক্যালসিয়ামের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎস।
  • যে সকল শিশুরা তড়কা,খিঁচুনিতে ভুগে থাকে,তাদের রক্তপ্রবাহের মধ্যে সরাসরি ক্যালসিয়াম প্রবেশ করানো হয়।তবে এই প্রক্রিয়াতে একটি বড় অসুবিধা আছে,সেটি হল যদি খুব দ্রুত ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় তবে সেক্ষেত্রে হার্ট ফেলিওর পর্যন্ত ঘটতে পারে।

যদিও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা উচিত, উপরে বর্ণিত প্রক্রিয়াগুলির দ্বারা এটির সমাধান করা যেতে পারে।পর্যবেক্ষণ করে এটি লক্ষ্য করা গেছে যে অধিকাংশ নবজাত শিশুরাই নিম্ন মাত্রার ক্যালসিয়ামের ঝুঁকিতে থাকে।তবে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অর্থ হল এই যে সেক্ষেত্রে কোনও স্থায়ী ক্ষতির সম্ভাবনা কম এবং আপনার শিশু কোনও রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতা এবং সমস্যা ছাড়াই একজন সুন্দর সুস্থ্ ও স্বাস্থ্যকর প্রাপ্ত বয়স্কে পরিণত হয়ে উঠতে পারবে।