শিশুদের মধ্যে স্ক্যারস বা ক্ষতচিহ্নের দাগ – কারণগুলি এবং প্রতিকারসমূহ

শিশুদের মধ্যে স্ক্যারস বা ক্ষতচিহ্নের দাগ

প্রতিটি স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের পিছনে একটি গল্প আছে।কিন্তু যখন সেই স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি আপনার সন্তানের মধ্যে হয়ে থাকে,আপনি অবশ্যই চিন্তিত হবেন।একজন মা-বাবা হওয়ার কারণে,এটি হওয়ার পিছনে সম্ভাব্য খারাপ এবং তার থেকে আরও খারাপ কারণগুলি কি হতে পারে তা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন,কিন্তু আপনার ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই।স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি হল জীবনের একটা স্বাভাবিক অংশ,বিশেষকরে শিশুদের ক্ষেত্রে।বাচ্চাদের স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি হওয়া স্বাভাবিক;বাচ্চারা বাড়ির বাইরে ঘাসের জঙ্গল এবং ময়লার মধ্যে খেলা করে, সেখানে পড়ে যায় এবং কেটেও যায়,আর এভাবেই স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণগুলি তাদের ত্বকের একটি অংশীদার হয়ে ওঠে।তবে শিশুরা খুব দ্রুত নিরাময় করে ওঠে।কিন্তু আপনি কি জানেন যে এই স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি প্রকৃতপক্ষে কি এবং কীভাবেই বা সেগুলি গড়ে ওঠে?এই স্ক্যারগুলি সম্পর্কে সমস্ত কিছু এবং সেগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলিও জানুন।

স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি কি?

একটি স্ক্যারকে চিহ্ণিত করা যায় একটি দাগের দ্বারা যা সাধারণত কোনও মানুষের ত্বকের স্বাভাবিক টানের তুলনায় গাঢ় হয়ে থাকে,এটি হয়ে থাকে ত্বকের কলা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এবং পরবর্তীতে সেগুলি মেরামতের কারণে।ছড়ে যাওয়া,পুড়ে যাওয়া,আঁচড়ে যাওয়া অথবা কালশিটে পড়া থেকে ত্বকের ক্ষতি হয়ে থাকে।

একটি শিশুর উপর কীভাবে স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি গড়ে ওঠে?

যখন ত্বকে কোনও ক্ষত সৃষ্টি হয়,তখন সেই ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাটিকে আবৃত করে রাখতে দেহ যোজক কলাগুলিকে প্রেরণ করে যা কোলাজেন নামক কোষের দ্বারা গঠিত। কোলাজেন কোষগুলি কিছু দিনের মধ্যেই ত্বককে মেরামত করে পুনরুদ্ধার করে।যখন ত্বকের নিম্নদেশে এই প্রত্যর্পণ চলতে থাকে,তখন ত্বকের উপরের স্তরটি শুকিয়ে গিয়ে একটি খসখসে,শুকনো,গাঢ় আচ্ছাদনের একটি আস্তরণ গড়ে তোলে,যাকে “চুমটি” বা “খোল” বা “মামাড়ি” বলা হয়।যখন ত্বকটি সম্পূর্ণরূপে মেরামত হয়ে যায়,এই চুমটি বা খোলটি নিজে থেকেই খসে যায়।এই মেরামত হয়ে ওঠা ত্বকটি সাধারণত তার চারপাশের ত্বকের তুলনায় কিছুটা স্বতন্ত্র দেখতে লাগে।এটিকেই বলা হয়ে থাকে স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণযুক্ত দাগ।তবে প্রতিটি আঘাতের কারণেই অপরিহার্যভাবে স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণের দাগ হয়ে ওঠে না।ভীষণ হালকা কোনও আঘাতে মাঝেমধ্যে কোনও ক্ষতচিহ্ণের দাগ দেখা না দিয়েই তা নিরাময় হয়ে ওঠে,আবার স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণের দাগগুলি নিজেরাই সময়ের সাথে সাথে ম্লান হয়ে যায়।

একটি শিশুর উপর কীভাবে স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি গড়ে ওঠে?

স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণের দাগগুলির জন্য ডাক্তারি চিকিৎসা

স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণের দাগগুলি গঠিত হওয়া হল প্রাকৃতিক নিরাময় প্রক্রিয়ার একটি অংশ,সুতরাং এর জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।তবুও,নতুন মা-বাবাদের জিজ্ঞাসিত একটি সাধারণ প্রশ্ন হলঃ আমার সন্তানের এই ক্ষতচিহ্নের দাগগুলি বা স্ক্যারগুলি কি চলে যাবে?ক্ষতচিহ্নগুলির উপস্থিতি হ্রাস করতে বা এগুলি পুরোপুরি দূর করতে স্ক্যারের চিকিৎসা সম্পূর্ণরূপে নান্দনিক।শিশুদের স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলির জন্য সাধারণত ব্যবহৃত ডাক্তারি চিকিৎসাগুলি হলঃ

  • স্ক্যার বা ক্ষতের দাগ অপসারণকারী ক্রীমঃ এগুলি ওষুধের দোকান থেকে কেনা যেতে পারে।যখন ক্ষতগুলি সতেজ হয়ে ওঠে আপনার এটি প্রয়োগ করা উচিত।শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নের দাগ অপসারণের বিশেষ ক্রীমগুলিকেই ব্যবহার করুন,কারণ সাধারণ মানের ক্রীমগুলিতে স্টেরয়েড থাকে যা শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • স্টেরয়েড চিকিৎসাঃ একটি অস্ত্রপচার প্রক্রিয়া সাধারণত করা হয়ে থাকে একটি প্রসারিত ক্ষতের দাগ অপসারনের জন্য।এটি একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া।তবে যতদূর নান্দনিক উপস্থিতির সহিত স্ক্যার সম্পর্কিত,সেক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি কিন্তু সাধারণত সেরা ফলই দিয়ে দিয়ে থাকে।
  • লেজার চিকিৎসাঃ পুড়ে যাওয়া এবং ত্বকের বৃহৎ ক্ষত দাগযুক্ত কোষের অপসারণ করতে একটি উচ্চ শক্তিযুক্ত রশ্মি ব্যবহার করা হয়।শল্য চিকিৎসার বিপরীতে,লেজার চিকিৎসা ক্ষতচিহ্নের দাগগুলিকে অপসারিত করে না,তবে স্ক্যারগুলির উপস্থিতি হ্রাস করার ক্ষেত্রে এগুলি ভীষণভাবে সফল।যাইহোক,তবে একটি বাচ্চার জন্য কিন্তু কখনই লেজার চিকিৎসার সুপারশ করা হয় না।
  • সিলিকন শীট থেরাপিঃ এই ধরনের চিকিৎসায়,সিলিকন জেলযুক্ত একটি প্লাস্টার ক্ষত-দাগগুলির উপর আটকে দেওয়া হয়।এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি ব্যবহার করা যেতে পারে ক্ষতগুলি সতেজ হয়ে দগদগে হয়ে উঠলে এবং তার পাশাপাশি ফুলে ওঠা দাগগুলির উপরেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।যখন ত্বকের আভ্যন্তরীণ স্তরকে রক্ষা করতে কোলাগেন ত্বকের কোষগুলিকে পুনরায় গঠণ করতে থাকে,তখন এই সিলিকন জেলযুক্ত প্লাস্টারটি ক্ষতের উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং ক্ষতের চুমটি বা খোল গঠণকে প্রতিরোধ করে।এই উপায়ে,বিবর্ণ ক্ষত-দাগের বিকাশকে তুচ্ছ করা হয়।
  • ক্রায়োথেরাপিঃ এটি এমন একটি পদ্ধতি যাতে নিরাময়ের জন্য শীতল তাপমাত্রাকে নিয়োগ করা হয়।ক্রায়োথেরাপির ক্ষেত্রে প্রসারিত ক্ষতচিহ্ণগুলি এবং অন্যান্য উপবৃদ্ধিগুলিকে অপসারিত করতে,এই নিক্ষেপ করা অংশগুলি ঠাণ্ডায় জমাটবদ্ধ হয়ে কঠিণ এবং চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়।

শিশুদের জন্য এই সকল চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি এবং এমনকি এর সাথে স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণের দাগগুলি অপসারণকারী ক্রীমগুলিকেও ডাক্তারের অনুমোদন ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়।এই চিকিৎসার সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি আপনার শিশুর পক্ষে খুব বেশি হতে পারে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুই একমাত্র সবচেয়ে সঠিক ও ভাল অবস্থানে রয়েছেন।সুতরাং,যেকোনও চিকিৎসা প্রক্রিয়া শুরু করার দিকে যাওয়ার পূর্বে আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে নিন।

স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্ণের দাগগুলির জন্য ঘরোয়া প্রতিকারসমূহ

ক্ষতচিহ্ণের দাগগুলির চিকিৎসায় ঘরোয়া প্রতিকারগুলি বেশ ভালভাবে কাজ করে থাকে।অন্যান্য স্ক্যার বা ক্ষতদাগগুলি ব্যতীত হাইপারট্রফিক এবং কেলয়েড স্ক্যার,এগুলির উভয়ের ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ ক্ষতচিহ্ণের দাগের তুলনায় কেবল আরও বেশি রঙের বা গঠণের পরিবর্তন হয়ে থাকে,স্ক্যারগুলি সাধারণত কোনরকম ডাক্তারি চিকিৎসা ছাড়াই সময়ের সাথে ম্লান হয়ে যায়।

এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি দাগের উপস্থিতি দ্রুত দূর রতে সহায়তা করতে পারে।

  • অ্যালভেরাঃ একটি ঘন,স্বচ্ছ জেল অ্যালোভেরা পাতার মধ্যে পাওয়া যায় যা ত্বকের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয় গুণাবলী উপস্থিতির কারণে পরিচিত।অ্যালোভেরা হল একটি প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং ফাঙ্গাস বিরোধী ময়েশ্চেরাইজার। কেবল একটি অ্যালোভেরা পাতাকে ছিঁড়ে নিয়ে সেটিকে চিঁড়ে তার মধ্যস্থ জেল রূপী নির্যাসটিকে বের করে নিন।এবার ক্ষতের উপরে সেই জেলটিকে ধীরে ধীরে ঘষে দিয়ে 30 মিনিটের জন্য সেটিকে ত্বকের উপরেই রেখে দিয়ে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এটি প্রতিদিন দু’বার করে করুন।

অ্যালভেরা

  • নারকেল তেলঃ স্ক্যার বা ক্ষতের দাগ দূর করতে বহু বছর ধরে নারকেল তেল ব্যবহৃত হয়ে আসছ্বে।স্ক্যারের চিকিৎসায় নারকেল তেল ব্যবহার করতে,এটিকে একটি পাত্রের মধ্যে নিয়ে গরম করে নিন এবং এটিকে ক্ষতচিহ্ণের দাগগুলির উপরে 2-4 মিনিটের জন্য ঘষুন।এক দিনে তিন বার পর্যন্ত এটির পুনরাবৃত্তি করা যেতে।
  • চন্দন কাঠঃ চন্দন কাঠকে গুঁড়ো হিসেবেও কেনা যেতে পারে।বড় এক চামচ চন্দনকাঠের গুঁড়োকে কয়েক ফোঁটা শিশু মালিশের তেলের সহিত মিশ্রিত করে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন।এবার এক টুকরো সুতির কাপড়কে এর মধ্যে ডুবিয়ে নিয়ে সেটিকে তার ক্ষত চিহ্ণগুলির উপর রাখে দিন।20 মিনিট এই ভাবে রেখে দেওয়ার পর সেটিকে ধুয়ে ফেলুন।প্রত্যহ দু’বার এর পুনরাবৃত্তি করুন।এছাড়াও আপনি আবার হলুদ গুঁড়োর সাথে চন্দন কাঠের গুঁড়োকে যোগ করে নিয়ে তার সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে নিয়ে একটি পেস্ট বানিয়ে সেটিকে ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগগুলির উপর প্রয়োগ করতে পারেন।
  • চা-গাছের তেলঃ চা-গাছের তেলে এর অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টিসেপ্টিক বৈশিষ্ট্যগুলি থাকার কারণে এটি বিভিন্ন ত্বক-সুরক্ষার পণ্যগুলিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তেল।আপনি খুব সহজ ভাবেই এক চামচ জলের সাথে এই তেলের দু’ফোঁটা যোগ করে নিয়ে সেটিকে ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগের উপর দিনে দুই অথবা তিন বার করে ঘষে দিতে পারেন।এছাড়াও আবার আপনি একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে চা-গাছের তেল এবং নারকেল তেলকে মিশ্রিত করে নিয়ে সেটিকে একই ভাবে ব্যবহার করতে পারেন ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগের উপর।
  • কোকো বাটার বা মাখনঃ কোকো মাখন হল ফ্যাকাশে হলদেটে একটি উদ্ভিজ্জ ফ্যাট যা নির্যাসিত করা হয় কোকো বীনস থেকে।চকোলেট তৈরীতেও এই একই উপাদান ব্যবহৃত হয়।এটি একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চেরাইজার এবং এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন E,যা ত্বকের মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে এটি ব্যবহার করুন।খুব সাধারণ ভাবেই কিছুটা কোকো বাটার হাতের আঙ্গুলে নিয়ে সেটিকে ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগগুলির উপর প্রয়োগ করে বৃত্তীয় গতিতে হালকা করে মালিশ করে দিয়ে সারা রাত ধরে রেখে দিন।প্রতিদিন এটির পুনরাবৃত্তি করুন।

কোকো বাটার বা মাখন

  • মধুঃ মধু ত্বককে আদ্র করে, এবং এটি শুকিয়ে যাওয়ার পর ধুয়ে ফেলার সাথে ত্বকের আলগা ছাল বা আঁশগুলিকেও অপসারিত করে।দাগের উপরে কিছুটা মধু মালিশ করুন এবং একটি ব্যান্ডেজ দিয়ে সেটিকে ঢেকে দিন।সারা রাত এইভাবে ব্যান্ডেজটি রেখে দিন এবং সকালে খুলে নিয়ে ঐ ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগের জায়গাটি ধুয়ে ফেলুন।দাগগুলি ম্লান হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন পুনরাবৃত্তি করুন।
  • অ্যাপেল সীডার ভিনিগারঃ ACV ত্বককে ক্ষতিকারক মাইক্রোবগুলির থেকে রক্ষা করে,এবং এর মধ্যে থাকে ভিটামিন C যা ত্বকের মেরামতে সহায়তে করে।এটি আবার প্রাকৃতিক ভাবেই ক্ষতকে শুকিয়ে তোলে এবং ত্বকের মৃত কোষগুলির অপপ্সারণে সহায়তা করে।জলের সাথে ACV যোগ করে নিয়ে এটিকে স্বাভাবিক ভাবে পাতলা করে নিন।এরপর একটি তুলোর বলকে এর মধ্যে ডুবিয়ে নিয়ে সেটিকে আপনার বাচ্চার ত্বকের ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগগুলির উপরে প্রয়োগ করে সামাণ্য চাপ দিন।এই প্রতিকারটিতে ত্বকের টোনিং বৈশিষ্ট্যটিকে বাড়ানোর জন্য এই মিশ্রণের সাথে আপনি আবার কিছুটা মধুও যোগ করতে পারেন।এটিকে 30 মিনিটের জন্য এই অবস্থায় রেখে দেওয়ার পর ধুয়ে ফেলুন।নিয়মিত দু’বার করে এটি করতে থাকুন।
  • ল্যাভেন্ডার তেলঃ কেবল ল্যাভেন্ডার তেলটিকে একক ভাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা এটিকে ঘন আকারে গড়ে তুলতে আপনি আবার এর সাথে জলপাই তেলও যোগ করতে পারেন।এটির দ্বারা আপনার ছোট্টটির ত্বকের ক্ষতচিহ্নযুক্ত এলাকার উপর উষ্ণ মালিশ করুন।ধুয়ে ফেলার পূর্বে কম করে 30 মিনিট এটিকে এই ভাবে রেখে দিন।প্রত্যহ দু’বার প্রয়োগ করুন।
  • জলপাই তেলঃ স্ক্যারগুলির উপরে এই তেলটিকে প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে মালিশ করে দিন।এবার ত্বকে এটি শুকানোর জন্য 30 মিনিট ফেলে রাখুন।অতিরিক্ত তেলটি একটি টিস্যু অথবা কাগজের তোয়ালে দিয়ে শুধু মুছে নিন।প্রতিদিন দু’বার পুনরাবৃত্তি করুন।

জলপাই তেল

  • টুথপেস্টঃ ব্রণ এবং ত্বকের অন্যান্য ক্ষতের চিকিৎসায় টুথপেস্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।কড়াইশুঁটির একটি দানার সম পরিমাণ টুথপেস্ট নিয়ে সেটিকে বচ্চার স্ক্যারযুক্ত অঞ্চলগুলির উপর হালকা করে ঘষে দিয়ে সারা রাতের জন্য রেখে দিন।এবার পরের দিন সকালে সেটিকে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।মাথায় রাখবেন যে,টুথপেস্টের নিজস্ব একটা জ্বলন প্রভাব আছে,সুতরাং আপনার বাচ্চার ত্বকে থেকে থাকা অরক্ষিত ক্ষতগুলির উপর এটি প্রয়োগ করা উচিত নয়।

স্ক্যার বা ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগগুলিকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে?

ক্ষতটিতে ভোগার সময় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে তা ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগগুলির গঠণ হ্রাস করতে পারে।ক্ষতটি সৃষ্টি হওয়ার প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যে ক্ষতের কলাগুলি সর্বাধিক সক্রিয় হয়।সদ্য দগদগে ক্ষতটির উপর 10 মিনিটের জন্য একটি স্থির চাপ প্রয়োগ করুন।

মুখমণ্ডলে আঘাতের ক্ষেত্রে,পরিষ্কার গজ কাপড় ব্যবহার করে সেই ক্ষতের উপর চাপ প্রয়োগ করুন।এটি ক্ষতচিহ্নের দাগ সৃষ্টি হওয়ার শক্ত কলাগুলির গঠণে বাঁধা দেয়।তবে,এটি করার পূর্বে ক্ষত স্থানটি ভালভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া প্রয়োজন কারণ অন্যথায় ধূলো-ময়লার মত বাহ্যিক উপাদানগুলি সেই স্থানে প্রবেশ করবে যার ফলে নিরাময়ের পরেও সেই স্থানটিতে একটি গাঢ় দাগ হয়ে যাবে।

বাচ্চাদের ক্ষতগুলি খুব দ্রুত হারে নিরাময় হয়।তবে পুষ্টিকর উপাদানগুলির বৃদ্ধি এক্ষেত্রে সবসময়ই সহায়তা করে।ক্ষত চিহ্নের একটি দাগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ভিটামিন C খুবই গুরুত্বপূর্ণ,সুতরাং আপনার সন্তানের ডায়েটে ভিটামিন C অন্তর্ভূক্ত করুন।

যদি ক্ষত চিহ্নের দাগগুলি ক্রমশ বড় হতে থাকে এবং ম্লান হয়ে না যায় তখন কি করবেন?

স্ক্যার বা ক্ষতের দাগগুলি অনির্দেশ্য,তবে সেগুলি ছোটদের মধ্যে বরং খুবই দ্রুত হালকা হয়ে যায়।উদাহরণের জন্য বলা যাক,সহজভাবে মনে করার চেষ্টা করুন তো আপনার ছোটো বেলায় আঘাত পাওয়া ক্ষত চিহ্নগুলির মধ্যে কতগুলি দাগ এখনও আপনার মধ্যে উপস্থিত রয়েছে?শুধুমাত্র গভীর ক্ষতচিহ্নগুলিই এত বছর ধরে রয়ে গেছে।

ক্ষত চিহ্নগুলির গঠন দু’ধরণের হয়ে থাকে যেগুলি মূলত ক্রমশ বেড়েই উঠতে থাকে ম্লান হওয়ার বদলে।

  • হাইপারট্রফিক স্ক্যারঃ এই ধরনের স্ক্যারগুলি উঁচুনিচু অসমান ফুসকুড়ির ন্যায় এবং ক্ষতের চারপাশের ত্বক থেকে উত্থিত হয়ে থাকে।এগুলি প্রাথমিক ক্ষত স্থানের জায়গার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে না।হাইপারট্রফিকস্ক্যার বা ক্ষতগুলিবেশিরভাগসময়েই পোড়াক্ষতেগঠিত হয়।
  • কেলয়েডঃ কেলয়েডের স্ক্যার বা ক্ষতদাগগুলি উত্থিত হয় মসৃণ ভাবে এবং ফোসকার সাথে এর সাদৃশ্য থাকে। এই ধরনের দাগটি মূল ক্ষত ছাড়িয়ে তার চারপাশের ত্বকের উপরে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে যেতে পারে, যা মূলত বিশ্রী প্যাচ বা দাগগুলিকে গড়ে তোলে।

যদি এই ধরণের ক্ষতচিহ্নযুক্ত দাগগুলি মুখের মত শরীরের কোনও বিশিষ্ট অংশে দেখা দেয় তবে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তা উল্লেখ করা উচিত।আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সেটি কি ধরণের ক্ষতের দাগ তা চিহ্নিত করে ডাক্তারী চিকিৎসার সহায়তায় বাচ্চার মুখমণ্ডলের উপর হয়ে থাকা ক্ষতের দাগগুলিকে কীভাবে হ্রাস করা যেতে পারে সে ব্যাপারে আপনাকে আরও পরামর্শ দিতে সমর্থ হবেন।

মা-বাবা হিসেবে আমরা সর্বদাই আমাদের সন্তানের জন্য সবচেয়ে সেরাটাই চাই। বাচ্চাদের মুখের উপর যদি এই ধরনের ক্ষতের দাগগুলি গড়ে ওঠে তবে সেক্ষত্রে মানুষজন হয়ত তার থেকে দূরে সরে যাবে এই ধরণের জটিল হীনমান্যতাতেও তারা অনেক সময় ভুগে থাকে।অন্য লোকেরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবে যদিও আমরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না,আমরা শুধুমাত্র তাদের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন করতে পারি এবং তাদের ক্ষত দাগগুলিকে অতিক্রম করে চলার জন্য উৎসাহিত করতে তাদেরকে আরও বেশি করে সমর্থন করতে পারি।