In this Article
কোষ্ঠকাঠিন্য শিশুদের মধ্যে একটা সাধারণ সমস্যা।যদি আপনি সবে আপনার সন্তানকে কঠিণ খাবার দেওয়া শুরু করে থাকেন,তবে তার পেটে সেই খাবারটি অভিযোজিত হতে কিছুটা সময় নেবে।আপনার ছোট্ট সোনা হয়ত কয়েকদিন মলত্যাগের জন্য বেগ দিতে পারবে না অথবা তার বেগ দেওয়াটা হয়ত খুব কষ্টকর হয়ে উঠবে।এমনকি সে হয়ত তার আহারের রুচিও হারাতে পারে।এই সমস্ত লক্ষণগুলি কোষ্ঠকাঠিন্যকেই সূচিত করে।যদি আপনার বাচ্চার মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের ধাঁচ থাকে,তবে কি করলে তাকে কিছুটা আরাম বোধ করানো যাবে তা খুঁজে বের করার আপনি অবশ্যই চেষ্টা করুন।আপনি নিশ্চই ওভার দ্য কাউন্টার(OTC)ওষুধগুলি দিতে পারেন তবে এ ব্যাপারে বেশ কিছু ঘরোয়া প্রতিকারও রয়েছে যেগুলি তৎক্ষণাৎ স্বস্তি প্রদান করতে পারে।
সদ্য হাঁটতে শেখা ছোট বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য 12 টি প্রাকৃতিক প্রতিকার
প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলির ব্যবহার করার সুপারিশ প্রায়শই দেওয়া হয়ে থাকে।সুতরাং টলটলায়মান শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
1.তাকে লেবুর রস দিন
ছোট বাচ্চা এবং টলমল করে হেঁটে চলা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য লেবুর রস একটা দুর্দান্ত প্রতিকার রূপে কাজ করে থাকে।লেবুতে ভিটামিন C উচ্চ মাত্রায় থাকে,যা অন্ত্রের মধ্যে জল টানতে সাহায্য করে।যখন অন্ত্রের মধ্যে জলীয় উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যায়,এটি মলকে নরম করতে সাহায্য করে এবং অন্ত্র আলোড়নকে উদ্দীপিত করে।এক গ্লাস উষ্ণ জলে অর্ধেক লেবুর রস মিশ্রিত করুন,এবার এর সাথে মধু যোগ করে সেটিকে আপনার সন্তানকে দিন।এটি আপনার বাচ্চাকে খুব ভোরবেলায় খালি পেটে খাওয়ান।এটি তার অন্ত্র আলোড়োনকে উদ্দীপ্ত করবে।আলুবোখরার রস এবং আপেলের রস দিয়েও টলমল করে হেঁটে চলা বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করা যেতে পারে।
2.জলপাইয়ের তেল এবং কিশমিশের একটি মিশ্রণ ব্যবহারের চেষ্টা করুন
জলপাই তেল হল টলটলায়মান শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একটা প্রাকৃতিক প্রতিকার।এটি গ্রহণ করার যথাযথ উপায় হল এটিকে কিছু কমলা লেবুর রসের সাথে মিশ্রিত করে সেটি ব্যবহার করা।বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় এই মিশ্রণটি বেশ কার্যকর।
আবার কিশমিশও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি প্রদানের জন্য পরিচিত।সারা রাত ধরে জলের মধ্যে কিশমিশকে ভিজিয়ে রাখুন।পরের দিন সেগুলিকে জলের মধ্যে চটকে নিয়ে ছেঁকে নিন।এবার এই তরলটিকে আপনার শিশুকে প্রদান করুন,সে আগের থেকে অনেকটা ভাল অনুভব করবে।
3.ক্যাস্টর অয়েলও কাজ করে!
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ক্যাস্টর অয়েল একটি শক্তিশালী প্রতিকার।ক্যাস্টর অয়েল প্রাথমিকভাবে একটা রেচক ঔষধ হিসেবে কাজ করে এবং অন্ত্রের আলোড়নকে উদ্দীপিত করে।ক্যাস্টর অয়েল প্রচন্ড ঘন এবং এর একটা তীব্র গন্ধ আছে,সেই কারণে লোকেরা এটিকে অন্য কোনও তরলের সাথে মিশ্রণের দ্বারা ব্যবহার করে থাকেন। এটিকে গ্রহণ করা যেতে পারে দুধ অথবা ফলের রসের সাথে মিশিয়ে।আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হলে এক গ্লাস দুধের সাথে এক চামচ তেল মিশিয়ে সেই মিশ্রণটিকে তাকে দিন।তবে সেই সকল শিশুকেই ক্যাস্টর অয়েল দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যাদের বয়স দুই বছরের বেশী।এতদতিরিক্ত,এটি সাবধানতার সাথে ব্যবহার করা উচিত এবং শুধুমাত্র ডাক্তারের সাথে পরামর্শের পরেই,কারণ যদিও এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা করে,এটিতে গা গোলানো এবং বমিও হতে পারে।
4.ত্রিফলার ব্যবহার
ত্রিফলা,নাম প্রস্তাব অনুযায়ী,এটি তিনটি ভেষজ ওষধির সমাহার।সেগুলি হল আমলকি, বয়রা এবং হরিতকি।ত্রিফলায় অসংখ্য উপকারিতা আছে এবং এটি সাধারণত দুধের সাথে খাওয়া হয়ে থাকে।গরম দুধের সাথে এক চামচ পূর্ণ করে ত্রিফলার গুঁড়ো যোগ করে রাত্রে ঘুমানোর আগে আপনার সন্তানকে দিন।কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এটি সবচেয়ে সেরা ভেষজ প্রতিকার।সদ্য হাঁটতে শেখা বাচ্চাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এটি হল অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ভারতীয় ঘরোয়া প্রতিকার।
5.জল সবসময়ের জন্য সেরা পছন্দ
এটিকে মনে রাখার মত কোনও কাজ নাও মনে হতে পারে কিন্তু মাঝেমধ্যেই বাবা–মায়েরা ব্যর্থ হয়ে পড়েন তাদের সন্তানরা সঠিক পরিমাণে জল পান করছে কিনা তা নজর রাখার ক্ষেত্রে।খাদ্যনালীর মাধ্যমে খাদ্যের গমন এবং যথাযথ হজমকে সুনিশ্চিত করার জন্য জল ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান আবার মলকে শুষ্ক হয়ে যাওয়াকেও বাধা প্রদান করে।সুতরাং আপনার সন্তানের হাইড্রেট বা জলয়োজিত থাকার বিষয়টিকে সুনিশ্চিত করুন।
6.মধু এবং কিছুটা শণ বীজ কতটা কাজ দেয়?
মধু অনাক্রম্যতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে এবং তার সাথে পাচন তন্ত্রকেও সহায়তা করে থাকে।এক গ্লাস দুধের সাথে 1-2 চামচ ভর্তি করে মধু নিয়ে মেশান এবং খালি পেটে সেটিকে আপনার সন্তানকে খাওয়ান।অন্যদিকে,শণ বীজ প্রাপ্ত বয়স্কের সাথে শিশু উভয়ের জন্যই ভাল।যখন কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসার সময় আসে,এটিকে একাধিক উপায়ে খাওয়া যেতে পারে।কিছু সময় ধরে শণ বীজগুলিকে জলের মধ্যে ফুটিয়ে নিয়ে তারপর সেটিকে ছেঁকে নিন।এবার এই ছেঁকে নেওয়া জলটিকে আপনার সন্তানকে দিন।এটি কোষ্ঠকাঠিন্যকে প্রতিরোধ করবে।
7.তাকে ব্যায়াম করতে দিন এবং উষ্ণ জলে স্নান করান
শারীরিক কার্যাবলীর অনুপস্থিতির ফল হল হজমের সমস্যা এবং বিপাকীয় ক্রিয়ার হ্রাস ঘটা,যা কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।প্রতিদিন আপনার টলমলকারী বাচ্চাকে কিছু ধরনের শারীরিক কার্যাবলীর সাথে ব্যস্ত রাখলে তা তার অন্ত্র আলোড়নকে উদ্দীপিত করবে।একটি বাচ্চার প্রতিদিন অন্ততপক্ষে এক ঘন্টা করে খেলা উচিত।কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে তাকে মুক্তি দিতে,আপনি আবার তাকে গরম জলেও স্নান করাতে পারেন।তার স্নানের জলের মধ্যে কয়েক চামচ বেকিং সোডা যোগ করুন এবং আপনার বাচ্চাকে 10-15 মিনিটের জন্য সেটিতে আরাম করতে দিন।
8.তার খাদ্য তালিকায় আঁশ বা তন্তু যুক্ত খাবার যোগ করুন
পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা তন্তু আছে যেসব ফল এবং সবজির মধ্যে সেগুলিকে তাকে খাওয়ান,এগুলি তার অন্ত্র আলোড়নে সহায়তা করে।যদি চালের দানাশস্য আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকার একটি অংশ হয় তবে সেটিকে বার্লি দানাশস্যে রূপান্তরিত করুন।দানাশস্যের সাথে কিছু ফলের রসের সমন্বয় বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য একদম আদর্শ প্রতিকার।এছাড়াও তার কোষ্ঠকাঠিন্যকে দূরে ঠেলে রাখার জন্য বীনস,পালং শাক,মিষ্টি আলু এবং ব্রকলির মত কিছু সবজি এবং ফলের মধ্যে কমলা লেবু এবং খুবানিকে আপনার সন্তানের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা উচিত, আপনি আপনার সন্তানকে ভুট্টার সিরাপ দিতে পারেন এটির মধ্যে শর্করা ভিত্তিক প্রোটিন থাকার কারণে।এই প্রোটিনটিও বাচ্চাদের অন্ত্র সঞ্চালনকে উদ্দীপ্ত করার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
9.তাকে কালোজাম দিন
কালোজাম আবার ক্রমসংকোচনশীল সঞ্চালনের উদ্দীপনায় অত্যন্ত কার্যকর।এগুলি হল পরিপাক নালীর মধ্যে অনৈচ্ছিক সঞ্চালন যা তরঙ্গ উৎপাদন করে এবং খাদ্যকে সামনের দিকে ঠেলে এগিয়ে দিতে সাহায্য করে।এটি অন্ত্রের সঞ্চালনাকে নিয়মিত রুটিনে পুনরায় সেট করতে সাহায্য করে এবং কষ্টকর বেগ দেওয়াকে হাটিয়ে দিতে সাহায্য করে।জলের সাথে কালোজামকে মিশিয়ে পাতলা তরল রূপে খালি পেটে খাওয়ালে তা প্রত্যাশিত ফল অর্জনে সাহায্য করে।
10.মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়াও খুব ভাল
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসায় মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়াকে উচ্চ মাত্রায় সুপারিশ করা হয়ে থাকে।মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া হল জোলাপেরই একটি রূপ।এটি মূলত কাজ করে অন্ত্রের মধ্যে জলকে ঢুকিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে,যা অন্ত্র আলোড়নকে বাড়িয়ে তোলে।এটি শুধুমাত্র স্বল্প সময়কালের জন্য ব্যবহার করা হয়।আপনি দুধের সাথে এক চামচ এই মিশ্রণটিকে মিশিয়ে নিতে পারেন এবং আপনার বাচ্চাকে সেটি খাওয়ান।খুব কম সময়কালের জন্য দিনে দুবার করে আপনার বাচ্চাকে এটি দিন এবং আপনার সন্তান খুব শীঘ্রই অনেকটা ভাল অনুভব করবে।
11.কলা এবং গরম জলের একটা মিশ্রণ দিন
কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য এটি বেশ জনপ্রিয় একটি প্রতিকার।গরম জলের সাথে এটিকে সমন্বিত করা এবং সকালে এটিকে প্রথম জিনিস হিসেবে খাওয়া,হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য পরিচিত,যা আবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।
12.পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহার করুন
পেট্রোলিয়াম জেলির সাময়িক ব্যবহারও আবার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি আনতে পারে।পেট্রোলিয়াম জেলি একটি প্রাকৃতিক জোলাপ হিসেবে কাজ করে;এটিকে শিশুর পশ্চাৎ অঞ্চলে প্রয়োগ করতে হবে।এটি অন্ত্র সঞ্চালনে সহায়তা করে এবং কম পরিশ্রমের সাথে বেগ দিতে সাহায্য করে।
কখন একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনার প্রয়োজন
যদি প্রাকৃতিক প্রতিকারগুলি কাজ করতে ব্যর্থ হয় এবং আপনার সন্তান দু সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকে ,আপনার দ্রুত ডাক্তারি সহায়তা নেওয়া উচিত।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
1. কীভাবে আপনি জানবেন যে আপনার বাচ্চার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে?
যদি আপনার সন্তানের সপ্তাহে তিনবারের থেকে কম অন্ত্রের গতি থাকে,তাহলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।কোষ্ঠকাঠিন্যের কিছু অন্যান্য উপসর্গগুলি হল পেট ব্যথা,বমি বমি ভাব,ক্ষুধামান্দ্য এবং পেট ফেঁপে থাকা।এছাড়াও বেগ দেওয়ার সময় আপনার বাচ্চা কাঁদতে অথবা তীক্ষ্ণ আর্তনাদও করতে পারে।
2.কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কি আপনার ডুশ দেওয়ানো উচিত হবে?
অনেক দিন ধরে যদি আপনার সন্তান অন্ত্র আলোড়নে ব্যর্থ হয়,তার অবশ্যই যন্ত্রণা হবে।এই ধরনের পরিস্থিতিতে,অন্ত্রের আলোড়নকে উদ্দীপ্ত করতে আপনাকে কৃত্রিম ওষুধের উপর অবলম্বন করতে হবে।আপনি ডুশ প্রয়োগ করতে পারেন কিন্তু কেবলমাত্র ডাক্তারের সাথে আলোচনার পরেই।ডুশকে সাধারণত রাত্রি বেলায় প্রয়োগ করা উচিত যাতে এটি মলদ্বারের চারপাশের অঞ্চলটিকে পিচ্ছিল করে তোলে এবং মলের চলাচলকে সহজ করে তোলে।নারকেল তেল অথবা ক্যাস্টর অয়েলের ব্যবহার হল ডুশের জন্য সবচেয়ে সেরা বাজি।একটি সিরিঞ্জে তেল পূর্ণ করুন,এরপর এর খোলা মুখটিকে খুব ধীরে ধীরে শিশুর মলদ্বারের মধ্যে প্রবেশ করান,এবং সিরিঞ্জটিতে চাপ প্রয়োগ করে ভিতরে তরলটিকে প্রবেশ করিয়ে দিন।এটি অন্ত্রকে উদ্দেশ্য করে অন্ত্রের সঞ্চালনকে উদ্দীপ্ত করে।
প্রাকৃতিক প্রতিকার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে স্বস্তি প্রদান করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।সুতরাং,এই প্রতিকারগুলি আপনার শিশুর জন্য ব্যবহারের চেষ্টা করুন–সে দুদিনের মধ্যে ভাল হয়ে যাবে।যাইহোক,তবে যদি এই প্রতিকারগুলি ব্যর্থ হয়,একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন।কিন্তু প্রতিরোধ সর্বদাই প্রতিকারের চেয়ে ভাল,এবং এটি অর্জন করা যেতে পারে সঠিক ধরনের খাদ্য গ্রহণ এবং সারাদিন ধরে ভাল পরিমাণে শারীরিক ক্রিয়াকার্যের মাধ্যমে।