আপনি যদি লক্ষ্য করেন যে আপনার শিশুটি সঠিকভাবে মলত্যাগ করতে সক্ষম নয় বা মলত্যাগে অসুবিধা হয়, তবে আপনার শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য অনেক কারণে হতে পারে, যেমন খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, ফর্মুলা দুধ বা কোনও সাময়িক অসুস্থতা। আপনি কিছু ব্যবহৃত ও পরীক্ষিত ঘরোয়া প্রতিকারের মাধ্যমে আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে পারেন।
বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের 12টি সেরা প্রাকৃতিক প্রতিকার
আপনার বাচ্চাকে ব্যথা এবং অস্বস্তিতে দেখা খুব ভয়ঙ্কর হতে পারে। বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য কয়েকটি প্রাকৃতিক প্রতিকার যা ফলদায়ক হতে পারে তা নিম্নলিখিত:
1. আপেল রস
প্রাপ্তবয়স্কদের মতো, ফাইবারের অভাবে শিশুদের মধ্যেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। পেকটিনের উপস্থিতি– আপেলগুলিতে থাকা একটি জলে দ্রবণীয় ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে খুব উপকারী। আপনি একটি খোসাসহ আপেলের রস বানাতে পারেন এবং এটি আপনার বাচ্চাকে একটি খাওয়ানোর বোতল বা সিপারের মাধ্যমে পান করাতে পারেন। দিনে এক বোতল রস আপনার বাচ্চাকে সহজেই মল ত্যাগ করতে সহায়তা করতে পারে।
2. আলুবোখরা বা প্রুন রস
আলুবোখরার রস শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সাথে লড়াই করার জন্য বেশ কার্যকর। আলুবোখরা হল প্রাকৃতিক জোলাপ। তাই আলুবোখরার রস বাচ্চাদের মলত্যাগকে সহজ করতে আশ্চর্য কাজ করে আলুবোখরার রস খাওয়ার পর মলত্যাগ হতে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
3. বাদামী চিনি
যদি আপনার বাচ্চার বয়স এক বছরের বেশি হয় তবে বাদামী চিনির দ্রবণ কোষ্ঠকাঠিন্যের নিরাময়ে আশ্চর্য কাজ করতে পারে। আপনি আধা চা–চামচ চিনি ও আধা আউন্স জল মিশ্রিত করতে পারেন এবং এই দ্রবণটি আপনার বাচ্চাকে দিনে দুবার দিতে পারেন। খেজুরের চিনি বা বাদামী চিনি ব্যবহার করুন এবং সাদা চিনি ব্যবহার করবেন না।
4. জৈব নারকেল তেল
জৈব নারকেল তেল সত্যিই খুব ভাল কাজ করে যদি আপনার বাচ্চার কম বার মলত্যাগ হয় বা মল ত্যাগ করতে অসুবিধা হয়। আপনার বাচ্চার ছয় মাসের বেশি বয়স হলে আপনি আপনার বাচ্চার খাবারে দুই থেকে তিন মিলিলিটার নারকেল তেল যুক্ত করতে পারেন। আপনার বাচ্চা যদি ছয় মাসের কম বয়সী হয় তবে মলত্যাগ সহজ করতে আপনি আপনার শিশুর মলদ্বারের চারপাশে নারকেল তেল লাগাতে পারেন।
5. টমেটো
6 মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে টমেটো অত্যন্ত উপকারী। বাধাহীন মলত্যাগের জন্য আপনি আপনার বাচ্চাকে টমেটোর রস দিতে পারেন। এক কাপ জল দিয়ে একটি ছোট টমেটো সিদ্ধ করুন। মিশ্রণটি ঠান্ডা হলে ছেঁকে নিন। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে এই রস প্রতিদিন তিন থেকে চার চামচ করে আপনার বাচ্চাকে দিন।
6. মৌরি বীজ
মৌরি বীজ তাদের অনেক স্বাস্থ্যকর উপকারিতার জন্য পরিচিত এবং এই বীজগুলি হজম সমস্যার চিকিৎসার জন্য খুব কার্যকর। আপনি এক কাপ জলে এক চা চামচ মৌরি বীজ ফোটাতে পারেন। শীতল করুন এবং ছেঁকে নিয়ে এই মিশ্রণটি আপনার শিশুকে দিনে তিন থেকে চার বার দিন। আপনার বাচ্চা যদি 6 মাসেরও কম বয়সী হয় তবে মা তাকে দিনে দু‘বার মৌরির বীজ দিতে পারেন।
7. পেঁপে
পেঁপে ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে তাই খুব কার্যকর। ছয় মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার এক দুর্দান্ত প্রতিকার। পেঁপের মন্ড, খণ্ড বা স্মুথি শিশুর মলত্যাগ নিয়মিত করার জন্য দেওয়া যেতে পারে।
8. নাশপাতি
নাশপাতি পেকটিন এবং ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ। নাশপাতির রস বের করতে কুচি কুচি করা যেতে পারে। আপনার শিশুকে পাতলা করে নাশপাতির রস দেওয়া ভাল। অতএব, দুই আউন্স রস সমান পরিমাণ জলের সাথে মিশিয়ে নিন এবং আপনার বাচ্চাকে এটি দিন যাতে তার মলত্যাগে সহায়তা হয়। নাশপাতি চার মাস বয়সের পরে একটি শিশুকে দেওয়া যেতে পারে।
9. পানীয়
আপনার শিশুর ডায়েটে পর্যাপ্ত তরল বা পানীয়ের অভাবের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। সুতরাং, যদি আপনার বাচ্চা 6 মাসের বেশি বয়সী হয় তবে আপনাকে পরামর্শ দেওয়া হয় যে আপনি আপনার শিশুর ডায়েটে পর্যাপ্ত তরল অন্তর্ভুক্ত করবেন। স্যুপ, ফলের রস, দুধ এবং জল হল তরল গ্রহণের কয়েকটি উপায়। আপনার শিশুর দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল থাকলে মসৃণভাবে মলত্যাগে সহায়তা করতে পারে।
10. উষ্ণ জলে স্নান
উষ্ণ জলে স্নান উদ্বেগপুর্ণ পেশীগুলিকে প্রশান্ত এবং শিথিল করার একটি আদর্শ উপায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রেও একটি উষ্ণ স্নান ভাল কাজ করে। আপনার শিশুর বাথটাবটি গরম জলে পূর্ণ করুন এবং এতে কয়েক চামচ বেকিং সোডা দিন। এটি মলদ্বারের পেশীগুলি খুলতে এবং মলত্যাগে সহায়তা করবে।
11. মালিশ
পেটে মালিশ শিশুদের মলত্যাগকে প্ররোচিত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। মলগুলিকে মলদ্বার অঞ্চলে চলে যাওয়ার জন্য উদ্দীপিত করার জন্য আপনাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরিয়ে আলতো করে হাত দিয়ে মালিশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মালিশের জন্য আপনি যে কোনও ভাল শিশুর তেল ব্যবহার করতে পারেন।
12. ব্যায়াম
প্রাপ্তবয়স্কদের মতো বাচ্চাদেরও ঘুরে বেড়ানো বা ব্যায়াম করা মসৃণ মলত্যাগের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বাচ্চা যদি হামাগুড়ি দেওয়ার পর্যায়ে থাকে তবে আপনি বাচ্চাকে ঘরের চারপাশে ঘুরতে উৎসাহিত করতে পারেন। যদি আপনার শিশুটি আরও কম বয়সী হয় তবে আপনি আপনার শিশুর পা দুটিকে সামনে–পিছনের দিকে, গোল গোল করে বা পাম্পিং গতিতে সরিয়ে তাকে ব্যায়ামে সাহায্য করতে পারেন। এটি নবজাতকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সর্বাধিক কার্যকর প্রতিকারগুলির মধ্যে একটি।
আপনার শিশুর জন্য কোনও ঘরোয়া প্রতিকার অবলম্বন করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার উপদেশ দেওয়া হয়। যদি আপনার শিশুটি সঠিকভাবে না খায়, ওজন হ্রাস পায় বা মলে রক্ত পড়ে তবে অবিলম্বে চিকিৎসার সহায়তা নিন।