In this Article
একটি শিশুকে স্তন পান করানো তার স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।একটি শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাসে তার প্রয়োজনীয় অপরিহার্য পুষ্টিকর উপাদানগুলি মায়ের বুকের দুধের মধ্যেই থাকে।সুতরাং একজন মায়ের তাঁর নিজস্ব ডায়েটের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিত।যদি আপনার একটি নবজাত থেকে থাকে,তবে এই সময়ের মধ্যে আপনি অবশ্যই এটি অনুভব করেছেন যে স্তন দুধ পান করানো হল মাতৃত্বের সবচেয়ে অন্তরঙ্গ একটি অংশ।আপনার সন্তানের জন্য বুকের দুধই একমাত্র পুষ্টির উৎস হওয়ার কারণে এটা বলা নিষ্প্রয়োজন যে আপনি স্বাস্থ্যকর পছন্দগুলির মধ্যেই থাকবেন।এবং যখন স্বাস্থ্যকর খাবারের কথা আসে,কীভাবে আমরা ফলকে বাদ দিতে পারি?এমন বিশেষ কিছু ফল আছে যেগুলিকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অবশ্যই আপনার ডায়েটে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।জেনে নিন সেগুলি কি।এবং তার সাথে আবার এটিও জেনে নিন যে স্তন পান করানোর সময় আপনার কোন ফলগুলিকে এড়িয়ে চলা উচিত।
স্তন পান করানোর সময় যে ফলগুলি খেতে হবে
বুকের দুধের পুষ্টিগুণগুলি নির্ভর করবে আপনার খাদ্য পছন্দের উপর।আপনি হয়ত ভাবতে পারেন যে বাচ্চাকে স্তন পান করানোর সময় সব ধরনের ফল খাওয়াই ভাল,কিন্তু সেটা আসলে ঠিক কথা নয়।কিছু ফল আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে থাকতে পারে এবং সেগুলিকে বর্জন করাই উচিত।তবে যে ফলগুলি এড়িয়ে চলা উচিত সে বিষয়ে কথা বলার পূর্বে দেখে নেওয়া যাক কোন ফলগুলি আপনার খাওয়া উচিত।এখানে এমন কিছু ফলের নাম তালিকাভুক্ত করা হল যেগুলিকে আপনার ডায়েটে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১. কাঁচা পেঁপে
একটি দুর্দান্ত সুপার ফল হিসেবে বিবেচিত পেঁপে ফাইবার এবং প্যাপাইনের মত স্বাস্থ্যকর খনিজগুলির দ্বারা পরিপূর্ণ।সবুজ কাঁচা পেঁপেকে একটি গ্যালাক্টাগজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।গ্যালাক্টাগজ হল এমন পদার্থ যা প্রাকৃতিকভাবে স্তন দুধ উৎপাদন বর্ধিত করে।সুতরাং,আপনি যদি একজন স্তন পান করানো মা হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই আপনার ডায়েটে কাঁচা সবুজ পেঁপে সংযোজন করুন।এটি আবার অ–আম্লীক ভিটামিন C এর একটি দুর্দান্ত উৎস এবং একটি প্রাকৃতিক রেচক হিসেবে কাজ করে,যার ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রতিরোধ করে এবং স্বাস্থ্যকরভাবে হজম ক্ষমতা বজায় রাখে।কাঁচা পেঁপে খেলে তা আবার আপনার শরীরকে হাইড্রেট রাখতেও সহায়তা করবে–যা স্তন দুধ পান করানোর সময় খুবই প্রয়োজন।আপনি একটি স্মুদির সহিত আধ কাপ কাঁচা পেঁপে যুক্ত করে সেটিকে তাজা তাজা গ্রাস করতে পারেন।
২. কলা
কলাও প্রাকৃতিক রেচকগুলির মধ্যে একটি এবং এটি আবার হজমেও সহায়তা করে থাকে।এর সাথে কলা আবার পটাসিয়াম এবং ফাইবার বা তন্তুতেও সমৃদ্ধ।স্তন দুধ পান করানোর সময় আঁশ বহুল ফলগুলিকে আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি কোষ্ঠকাঠিণ্য দূর করতে সহায়তা করে।তবে স্তন্যপান করানো মহিলাদের জন্য এই ফলটিকে উপযুক্ত করে তোলে এর যেই উপাদানটি তা হল এর মধ্যস্থ পটাসিয়াম।গর্ভাবস্থায় এবং এমনকি গর্ভাবস্থার পরবর্তীতেও পটাসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আপনার দেহে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য স্তন পান করানোর সময় আপনার এটির আরও বেশি প্রয়োজন হবে।
৩. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো হল অন্যতম একটি স্বাস্থ্যকর ফল এবং এটি মা ও সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্যই খুব উপকারী হতে পারে।আপনি যদি আপনার ছোট্ট সোনাটিকে স্তন পান করিয়ে থাকেন,আপনি অবশ্যই আপনার ডায়েটে অ্যাভোকাডো অন্তর্ভূক্ত করুন।কলার অনুরূপ অ্যাভোকাডোও প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়ামে ভরপুর।নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যাভোকাড ভক্ষণ আবার আপনার শিশুর দৃষ্টিশক্তি,চুলের গুণমান,হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য এবং হজমের বিকাশেও সহায়তা করে।
৪. ফুটি
ফুটি ভিটামিন K,ভিটামিন B,ফাইবার,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,নিয়াসিন,থিয়ামিন এবং ফোলেটে সমৃদ্ধ।এগুলি আবার ভিটামিন C তেও ভরপুর এবং আপনাকে হাইড্রেট রাখে।ফুটি আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে স্বাস্থ্যকর একটি ফল বিশেষ,বিশেষ করে স্তন পান করানোর সময়।
৫. সবেদা
সবেদা(যা হিন্দিতে আবার চিকু নামেও পরিচিত)উচ্চ ক্যালোরিতে সমৃদ্ধ যা বুকের দুধ পান করানো মায়েদের জন্য এটিকে উত্তম করে তুলেছে।সবেদা খাওয়ার মাধ্যমে আপনি স্তন পান করানোর সময় ক্ষয় হয়ে যাওয়া ক্যালরিগুলিকে পূরণ করে নিতে পারেন।এছাড়াও সবেদা আবার ফাইবার বা তন্তু এবং বিভিন্ন খনিজ এবং ভিটামিনে সমৃদ্ধ।উপরন্তু,এটি আবার প্রদাহ বিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি বহন করে যা স্তন পান করানো মায়েদের জন্য স্বাস্থ্যকর পছন্দগুলির তালিকায় এটিকে উত্থিত করেছে।
৬. ডুমুর
ডুমুরগুলি ম্যাঙ্গানিজ,ম্যাগনেসিয়াম,কপার,ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়ামের মত বহু খনিজে সমৃদ্ধ।এগুলি আবার ফাইবার,ভিটামিন K এবং ভিটামিন B-6 এরও দুর্দান্ত উৎস।মূলত এই কারণেই বহু রাঁধুনি তাদের স্যালাড প্রস্তুত করতে ডুমুর ব্যবহার করে থাকেন এবং অনেক শিশু খাদ্য সংস্থাগুলি শিশু খাদ্যগুলিতে ডুমুর সংযুক্ত করে থাকেন।
স্তন পান করানোর সময় যে ফলগুলি আপনার খাওয়া উচিত নয়
যদিও সকল ফলগুলিই সাধারণত স্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে,তবে এমন কয়েকটি ফল আছে যেগুলি এড়িয়ে চলা উচিত যদি আপনি আপনার সন্তানকে স্তন দুধ পান করানোর পর্যায়ে থেকে থাকেন।আপনি যদি আপনার ছোট্ট ব্যক্তিটিকে বুকের দুধ পান করান তবে সেক্ষেত্রে এই ছয়টি ফল খাওয়া এড়িয়ে চলুনঃ
১. বাতাবি লেবু
যদিও বাতাবি লেবু স্বাস্থ্যকর ফলগুলির মধ্যে একটি অন্যতম তবে এটি অত্যন্ত অম্লীয় প্রকৃতির হয়ে থাকে,যা 18 মাসের কম বয়সী শিশুদের পক্ষে হজম করা অত্যন্ত কঠিণ হয়ে ওঠে।এটি আবার তাদের গ্রাসনালী এবং পাকস্থলীর আস্তরণে জ্বলন সৃষ্টি করতে পারে।এছাড়াও এটি থেকে আবার অসম্ভব অ্যাসিডিটিও হতে পারে,সুতরাং স্তন পান করানোর সময় এটিকে বর্জন করাই উচিত।যাইহোক,আপনার ছোট্ট সোনাটি তার 3 বছর বয়স অতিক্রম না করা অবধি বাতাবি লেবুকে বর্জন করাই হবে সবচেয়ে ভাল।
২. লেবু
লেবু হল ভিটামিন C তে সমৃদ্ধ এবং এর মধ্যস্থ ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যের জন্য এটি শরীরের জন্যও চমৎকার।এটিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এর সীমাহীন উপকারিতা আছে।তবে এটি বাতাবি লেবুর মতই অনেকাংশে অনুরূপ।লেবুর অম্লীয় ধর্মীতাটি এটিকে জলের সহিত মিশ্রিত করে পাতলা করে নেওয়ার পরেও ভীষণ উচ্চ মাত্রায় থাকে,সুতরাং বাচ্চাকে স্তন পান করানোর পর্যায়ে এটিকে পরিহার করাই উচিত।
৩. চেরী
চেরী খুবই স্বাস্থ্যকর যখন এটিকে সংযমের সাথে ভক্ষণ করা হয়ে থাকে,তবে এটি কেবল সম্পূর্ণ রূপে বিকাশ প্রাপ্ত পাকস্থলীর অধিকারী অপেক্ষাকৃত কিছুটা বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।আপনি চেরী খেতেই পারেন যদি আপনার সদ্য টলমল করে হাঁটতে শেখা একটি ছোট্ট বাচ্চা থাকে।আর আপনি যদি বুকের দুধ পান করানোর সময় সেগুলিকে খেয়ে থাকেন আপনার বাচ্চার মধ্যে গ্যাস্ট্রিক এবং হজমের সমস্যা বিকাশ পাবে,যা তার ঢেকুর তোলা,বারংবার বাতকর্ম করা এবং পেট ব্যথার প্রকোপকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
৪. শুকনো আলুবোখরা
চেরীর মতই আলুবোখরা একটি এক বছরের কম বয়সী শিশুর দেহে ভেঙ্গে যাওয়া এবং হজম হওয়া কঠিণ।যদিও আলুবোখরা ভীষণই স্বাস্থ্যকর,তবে সেগুলিকে সাধারণত আপনার ছোট্ট সোনার জন্য সুপারিশ করা হয়ে থাকে না কারণ তার ছোট্ট পেটটি এটিকে হজম করার মত এখনো পর্যন্ত প্রস্তুত না হয়ে থাকতে পারে।স্তন দুধ পান করানোর পর্যায়ে আপনার আলুবোখরা ভক্ষণ আপনার শিশুকে গ্যাসে পূর্ন করে তুলে তাকে দৈহিক অস্বস্তিতে অস্থির করে তুলতে পারে,যা তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।আলুবোখরা খাওয়ার ফলে আবার পেট ব্যথা এবং কোষ্টকাঠিণ্যও হতে পারে।
৫. কিউয়ি
কিউয়িগুলি শরীরের জন্য সাধারণত ভীষন স্বাস্থ্যকর।এগুলি বেশ কিছু অপরিহার্য ভিটামিনের দুর্দান্ত উৎস তবে এগুলি আবার পুনরায় ভীষণ অম্ল ধর্মীয়ও বটে।তদুপরি এগুলিতে উচ্চ মাত্রায় শর্করা থাকে যা এগুলিকে স্তন দুধ পান করানোর সময় “বাতিলের তালিকায়” অংশীভূত করে তোলে।
৬. স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরিতেও বেশ বেশি পরিমাণে শর্করা থাকে এবং আপনার বিকাশকারী শিশুর 3 বছর বয়স না হওয়া অবধি এই শর্করাটি ভেঙে ফেলার মত ইনসুলিন ক্ষমতা তার থাকবে না। সুতরাং, বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় আপনার অবশ্যই স্ট্রবেরি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।আমরা জানি যে স্ট্রবেরি প্রতিরোধ করা খুব কঠিন, তবে আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য তাদের সাময়িকভাবে বিদায় বলুন!
শিশুর ছয় মাস বয়স না হওয়া পর্যন্ত বুকের দুধই হল একটি শিশুর প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টির একমাত্র আদর্শ উৎস।এর মধ্যা রয়েছে অ্যান্টিবডিগুলি যেগুলি যেকোনও রোগব্যাধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এবং সেগুলিকে প্রতিরোধ করতে আপনার শিশুকে সহায়তা করতে পারে।স্তন দুধ পান করানোর দ্বারা আপনি আবার আপনার ওজন হ্রাস করতে পারেন এবং আপনার মানসিক চাপের মাত্রাও জয়জয়কার ভাবে কমাতে পারেন।আপনার বুকের দুধের সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে করে তুলতে এবং আপনার ছোট্ট সোনাটি যাতে পর্যাপ্ত দুধ পায় তা নিশ্চিত করে তুলতে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।স্তন পান করানোর পর্যায়ে আপনার কি খাওয়া উচিত এবং কি বা এড়িয়ে চলা উচিত তা জেনে নিতে আপনি আমাদের ব্রেস্টফিডিং ট্র্যাকারটিকে অনুসরণ করতে পারেন।এছাড়াও আপনি আবার এমনকি আপনার ছোট্টটিকে সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়ে স্তন পান করানোর জন্য জেনে নিতে পারেন বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর কৌশলগুলি,স্তন পান করানোর সঠিক অবস্থানগুলি সম্পর্কে।এই ট্র্যাকারটিকে ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আবার স্তন পান করানোর সময় ডান এবং বাম স্তন থেকে অদলবদল করে খাওয়ানোর সময়সীমার একটি নথিও রেকর্ড করে রাখতে পারেন।এছাড়াও সারাদিনে আপনি যতটা পরিমাণ দুধ পাম্প করেছেন তারও একটি রেকর্ড রাখতে পারেন।প্রকৃতই এটি একজন স্তন পান করানো মায়ের কাছে তাঁর একটি প্রিয় বন্ধু স্বরূপ!
স্তন পান করানোর সময়,স্বাস্থ্যকর খাবারগুলি ভক্ষণ করুন কারণ পুষ্টিকর খাবার এবং ফলের মত খাবারগুলি গ্রহণ করলে তা এটি নিশ্চিত করবে যে আপনি এবং আপনার সন্তান উভয়েই সুস্থ আছেন।আপনার পুষ্টিবিশারদের সহায়তায় আপনার স্বাচ্ছন্দ্য উপযোগী এমন একটি ডায়েট পরিকল্পনা প্রস্তুত করুন যেটি আপনি সহজেই নিয়মিত অনুসরণ করতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা থাকে।আরও সহযোগীতার জন্য আপনার ডাক্তারবাবুর সহিত আলোচনা করুন।